আর্থিক উন্নতি ও গৃহসুখ বৃদ্ধি। বস্ত্রাদি ও বিবিধ অলঙ্কারাদি ব্যবসার গতি বৃদ্ধি ও মানসিক তৃপ্তি। ... বিশদ
দেওয়ানবাড়ির পুজোর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তৎকালীন বর্ধমান রাজার দেওয়ান শরোত্তর রায়। সেই থেকে পরিচিত দেওয়ানবাড়ি। তিনি ৬৫টি মৌজার অধিকারী ছিলেন। এখন অবশ্য অবশিষ্ট তেমন কিছুই নেই। তবে, তালপাতার চালাঘরে শুরু হওয়া মণ্ডপ বর্তমানে পরিবারের সদস্যরা পাকা মন্দির করেছেন। দেওয়ানবাড়ির দেবী খুবই জাগ্রত। তিনি রাতে আলোর ঝলকানি মোটেই সহ্য করেন না। সেই কারণে মন্দিরের আশপাশে কোনও অনুষ্ঠান হলে রাত দশটার মধ্যে তা নিভিয়ে দেওয়া হয়। অথবা, আলোর মুখ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।
দেওয়ান বাড়ির বর্তমান প্রবীন সদস্য গোপাল চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষ শরোত্তর রায় বর্ধমানের বীজপুরে জন্মেছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি বর্ধমান রাজার দেওয়ান হিসাবে নিযুক্ত হন। তখন বিষ্ণুপুর করদ রাজ্য ছিল। কর না দেওয়ায় বর্ধমানের রাজা বিষ্ণুপুরের রাজাকে চিঠি লেখেন। সেই চিঠির প্রত্যুত্তরে বিষ্ণুপুরের রাজা কোনও কিছু না লিখে সাদা চিঠি পাঠান। এতে বর্ধমানের রাজা ক্ষুব্ধ হন। এবং বিষ্ণুপুর আক্রমণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ওই সময় শরোত্তর রায় সাদা চিঠি পাঠানোর রহস্য খোঁজার কথা বলে তাঁকে নিরস্ত্র করেন। শরোত্তরবাবু জানতে পারেন, বিষ্ণুপুর ওই সময় খুব দুর্ভিক্ষের মধ্যে পড়েছিল। সেজন্য সেখানকার রাজা কর দিতে পারেননি। বিষয়টি বর্ধমান রাজাকে বুঝিয়ে তখনকার মতো বিষ্ণুপুরকে আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করেন। তখন থেকে শরোত্তর রায়ের সঙ্গে বিষ্ণুপুরের রাজার সখ্যভাব তৈরি হয়। এমনকি বিষ্ণুপুরের রাজার এক দেওয়ান নিধিকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে মেয়ের বিয়েও দেন। এরপরেই মল্লরাজা শরোত্তর রায়কে ৬৫টি মৌজার অধিকারী করে দেন। তার মধ্যে ময়নাপুর ছিল। তখন থেকে ময়নাপুরে বসবাস শুরু করেন। ১৬৫৩ সালে তিনিই প্রথম তালপাতার ছাউনি তৈরি করে প্রথম পুজো শুরু করেন।
রায় পরিবারের অপর সদস্য গোবিন্দ প্রসাদ রায় বলেন, শরোত্তর রায় প্রথম বছরেই পুজো দেখতে আসার জন্য মল্লরাজাকে নিমন্ত্রণ করেন। তিনি আসার কথাও জানান। কিন্তু তিনি কোনও কারনে আসতে পারেননি। এদিকে রাজামশাইয়ের অপেক্ষায় দশমী পেরলেও মণ্ডপে মূর্তি রেখে দেওয়া হয়। একদিন দু’দিন করে কালীপুজো পার করে দেন। সেই খবর পেয়ে মল্লরাজা না আসতে পারার জন্য আক্ষেপ বার্তা পাঠানোর পর ভাইফোঁটার দিন বিসর্জন হয়। সেই থেকে আজও একই ধারা চলে আসছে।
পরিবারের সদস্য নীলাদ্রী শেখর রায়, সাত্তিক রায়রা বলেন, মল্লরাজাদের অনুকরণে জিতাষ্টমীর দিন থেকে দেওয়ান বাড়িতে পুজো শুরু হয়ে যায়। ওইদিন থেকেই ভোগ রান্না করা হয়। গ্রামবাসীদেরকে বিতরণ করা হয়। নবমীর দিন পর্যন্ত তা চলবে। ছাগ বলিও হয়। আমাদের পরিবারের সদস্যরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকেন। তবে পুজোর সময় প্রায় সকলেই আসেন।
রায় পরিবারের পুত্রবধূ কলকাতায় কর্মরত সীমা রায় বলেন, আমাদের মা অভয়া মূর্তিতে (দুই হাত বিশিষ্ট) পুজিতা হন। মায়ের ঘট পালকিতে করে আনা হয়। আবার মেয়েকে বিদায় জানানোর মতো দশমীর দিন নাড়ু, কড়ি, মিষ্টি, আলতা, সিঁদুর সহযোগে ঠাকুরানীপুকুরে বিসর্জন দেওয়া হয়। দেওয়ানবাড়ির অপর দুই পুত্রবধূ মৌমিতা রায়, অন্নপূর্ণা রায় বলেন, সপ্তমীর দিন শালকাঠ ও ঘি দিয়ে যজ্ঞকুণ্ড জ্বালানো হয়। সেটি নিরবচ্ছিন্নভাবে জ্বলে নবমীর দিন পর্যন্ত। ওইদিন ১ হাজার ৮টি বেলপাতা সহযোগে পূর্ণ আহুতি দেওয়া হয়। এছাড়াও সপ্তমীর দিন থেকে ১টি ঘি ও ১টি তেলের প্রদীপ জ্বলে।