সংবাদদাতা, পুরাতন মালদহ: পুরাতন মালদহ শহরের ধোপাপাড়ার ডাকাতদের হাতে প্রতিষ্ঠিত দুর্গাপুজো আজও ঐতিহ্য এবং গরিমায় অমলিন। এবারও চণ্ডীদেবীর পুজোর আয়োজনের তোড়জোড় শুরু করেছে। মন্দির থেকে ১৫০ মিটার দূরে এক মৃৎশিল্পীর বাড়িতে প্রতিমা গড়ার কাজ চলছে। পুজো কমিটি জানিয়েছে, দেবী মৃন্ময়ী। মূল বেদিতে মা দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ থাকেন। উপরের দিকে মাঝখানে শিব, দু’পাশে নন্দী ও ভৃঙ্গী থাকে। প্রাচীন এই পুজোর সঙ্গে মানুষের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। পুজোর সমস্ত ভোগ রান্না হয় গঙ্গাজল দিয়ে। গঙ্গাজল ছাড়া ভোগ রান্না করার নিয়ম নেই। অষ্টমীর দিন কাঁচা সন্দেশ, লুচি, হালুয়া ভোগ নিবেদন করা হয়। এছাড়াও নবমীর দিন অন্নভোগ, পঞ্চব্যঞ্জন, টক, পায়েস মাকে দেওয়া হয়। মায়ের নিরঞ্জনও বিশেষ ঐতিহ্য বহন করে। মাকে লরিতে উঠিয়ে বির্সজন দেওয়ার রীতি এখানে নেই। মন্দির থেকে মহানন্দা নদী পর্যন্ত দেড় কিমি পথ ভক্তরা কাঁধে করে মাকে নিয়ে যান। এরপর নৌকা করে লোলাবাগ ঘাটে নিয়ে গিয়ে মায়ের নিরঞ্জন দেওয়া হয়। জনশ্রুতি রয়েছে, ৪০০ বছর আগে ওই এলাকায় ধোপাপাড়া ছিল। সেখানে বহু ধোপা বাস করতেন। তবে জামা কাপড় কাচা নয়, তাদের প্রধান কাজ ছিল ডাকাতি করা। তাঁরা বেহুলা নদী পার হয়ে বাইরে ডাকাতি করতে যেতেন। নীতি অনুযায়ী তাঁরা স্থানীয় এলাকায় ডাকাতি করতেন না। মূলত শক্তির আরাধনা করার জন্যই তাঁরা ধোপাপাড়াতে দুর্গাপুজো এবং কালীপুজো শুরু করেন।
কালের স্রোতে ধোপারা আজ আর নেই। স্থানীয় বাসিন্দারা এই পুজোর দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। ধোপাপাড়ার চণ্ডীমণ্ডপ সর্বজনীন কমিটির পক্ষে টুবাই ঘোষ বলেন, এটি শহরের প্রাচীন পুজো। এখানে নিয়ম নিষ্ঠাকে প্রাধান্য দিয়ে পুজো হয়। পুরনো এই পুজোর দায়িত্ব এখন আমাদের হাতে।
এই পুজো মণ্ডপেই ডাকাতদের হাতে চালু হওয়া দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয়।-নিজস্ব চিত্র