আর্থিক উন্নতি ও গৃহসুখ বৃদ্ধি। বস্ত্রাদি ও বিবিধ অলঙ্কারাদি ব্যবসার গতি বৃদ্ধি ও মানসিক তৃপ্তি। ... বিশদ
আয়ারল্যান্ডের ১৩ ডিগ্রি তাপমাত্রার মানুষ তাঁরা। নিজের দেশের মনোরম আবহাওয়ার সুখ ছেড়েছেন তিন সপ্তাহ হল। এখন কলকাতার ৩০ ডিগ্রিতে গায়ের চামড়া ট্যান হচ্ছে তিন আইরিশ শিল্পীর। বাংলার দুর্গাপুজোর আঙিনায় ইউরোপীয় শিল্পকলা ফুটিয়ে তুলতে বেহালা নূতন দলের মণ্ডপে ঘাঁটি গেড়েছেন লিসা-ডেভিডরা। একদিন অনুরাধা কয়াল নামে ক্লাবের এক সদস্যা আইরিশ শিল্পীদের খাইয়েছিলেন গরম ভাত আর সর্ষে ইলিশ। ব্যস! তা খেয়ে বাংলার রান্নার ফ্যান হয়ে গিয়েছেন বিদেশিরা। শুধু কি ইলিশ, বিকেলে জলখাবারে সিঙারা আর ডিনারে রসগোল্লা না হলে তাঁদের মোটেও চলছে না।
এ সব খেতে খেতে বেহালা নূতন দলে আইরিশ শিল্প ফুটিয়ে তুলছেন রিচার্ডরা। এখন দিনরাত জেগে কাজ করছেন। আয়ারল্যান্ডের পুরাণ ‘সেলটিক’ অনুযায়ী, শক্তি ও নদীর দেবী বলেন ‘দানু’। এই দেবীর সঙ্গে হিন্দু দেবী দুর্গার সাদৃশ্য রয়েছে-জানালেন লিসা। তাঁরা তৈরি করছেন ১২ ফুট লম্বা প্রতিমা। বেহালা নূতন দলের মণ্ডপে প্রবেশ করলে ডান হাতে রয়েছে নদী ও শক্তির আইরিশ দেবী ‘দানু’র মূর্তিটি। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে তা তৈরির কাজ করছেন আয়ারল্যান্ডের এই তিনজন। প্লাস্টার অব প্যারিস জাতীয় কৃত্রিম কোনও উপকরণ দিয়ে নয়। আইরিশরা মূর্তি তৈরি করছেন বাংলার মাটিতে উৎপন্ন হওয়া মুলি বাঁশ দিয়ে।
রিচার্ড বলেন, ‘কলকাতার শিল্প সংস্কৃতির কথা ইন্টারনেটে অনেক পড়েছি। কিন্তু এদেশে আসা হয়নি এর আগে। দূতাবাসের তরফে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তারপর বাংলার পুজোর সঙ্গে মেলবন্ধনের জন্য গত তিন সপ্তাহ ধরে কাজ করছি এখানে।’ মে মাসে কলকাতায় এসে মণ্ডপস্থল দেখে গিয়েছিলেন তিন বিদেশি। তারপর এখানে এসে টানা কাজ করে ‘দানু’র মূর্তি প্রায় প্রস্তুত করে ফেলেছেন। এখন শেষ মুহূর্তের টাচ দিচ্ছেন। দানুর অলঙ্কার তৈরির কাজ চলছে। লিসা বলেন, ‘ছোট ছোট বাঁশের দরমা কেটে গলার হার তৈরি হচ্ছে। আশা করছি বাংলার দর্শকদের মন পাবে আইরিশ শিল্প।’ বেহালা নূতন দল ক্লাবের এক কর্মকর্তার কথায়, ভালো কাজ করছেন বিদেশি শিল্পীরা। কলকাতার পরিবেশের সঙ্গে একেবারে মিলেমিশে গিয়েছেন। বাঙালির খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে বাংলা শব্দ, সব কিছুই আকৃষ্ট করেছে বিদেশি শিল্পীদের। লিসা, রিচার্ডরা ইলিশ-রসগোল্লা খেয়ে বেজায় খুশি। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ আছে একটি। সেটি হল মশা। কামড়ে অতিষ্ট হয়ে উঠছেন। তা বলে তাঁদের কাজ ব্যাহত হচ্ছে এমন নয়। লিসা রসিকথার ছলে বললেন, ‘পরের বার মশা মারার স্প্রে সঙ্গে করে নিয়ে আসব।’ আর তাঁদের সম্মিলিত বক্তব্য, ‘বাংলায় আবার আসা চাই-ই চাই।’