বহু প্রচেষ্টার পর পারিবারিক সম্পত্তি বিভাজনে শরিকি সহমত। ব্যবসা, পেশা ও ধর্মকর্মে শুভ সময়। ... বিশদ
প্রিয় বুঁচকি
ওহ সরি, তোর এত সুন্দর নামটা...সেই বার বার বুঁচকি বলেই ডেকে ফেলি। আসলে ঐন্দ্রিলা বললে না, তোকে কেমন পর পর লাগে। যাই হোক, তুই যখন এই চিঠি পাবি, তখন তোর বাবা আর মা পরামর্শ করে আমাকে তোদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। চৈত্রমাসে ঘরদোর পরিষ্কার হলে যেমন বাতিল জিনিস ফেলে দেয়, তেমনই। আমি এখন ঠিক কী অবস্থায় থাকব, আমি নিজেও জানি না। হয়তো কোনও অন্য লোকের বাড়ি, কেউ যদি আশ্রয় দেয় তবেই অবশ্য। হ্যাঁ, সব সম্পর্ক কি বাতিল হয়?
আসলে কী জানিস বয়স হয়েছে তো...আগের মতো কাজে লাগি না। তাই তোর বাবা মায়ের এই সিদ্ধান্ত।
বুকের পাঁজর দুর্বল, পিঠ ব্যথা, মাঝে মাঝেই ডাক্তারখানা। ওরা এই ধকলটা নিতে চাইছে না। তাছাড়া গলার স্বর ও এখন দুর্বল। আত্মপক্ষ সমর্থনে যে কিছু বলব, কিছু একটা যে বুড়ো হাড়ে ভেলকি দেখাব, নাহ, তার সম্ভাবনা এখন আর নেই। হয়তো জায়গা হবে আঁস্তাকুড়ের পাশে বা কোনও নোংরা পাড়ার সস্তা বাল্বের ঘরে। আসলে আমার জীবন এখন বড়ই অনিশ্চিত। তোর যখন বারো তেরো চোদ্দো বছর বয়স, মনে পড়ে, স্কুল থেকে ফিরেই ঝাঁপিয়ে পড়তিস আমার বুকে। তখন আমাকে নিয়ে কত খেলা! আমারও পাঁজরের জোর ছিল, কতক্ষণ ধরে খেলেছিস আমার সঙ্গে, মনে আছে তোর? সে-ও বহুদিন আগের কথা, মনে না থাকাটাই স্বাভাবিক। তুই তো এখন রীতিমতো গিন্নি, স্বামী, ছেলে মেয়ের ভরা সংসার। তুই যেদিন বিয়ে হয়ে এই বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছিস, খুব ইচ্ছে করছিল, তোকে বলি, আমাকেও নিয়ে চল। পারিনি জানিস? আসলে এই বাড়িটাও আমার যেন কেমন একটা অভ্যেস। শেষবার এলি, আমার দিকে ফিরেও তাকালি না, এক ঘরে এসে আমার সঙ্গে কথা বললি না, সেদিনই বুঝেছি , এ বাড়িতে দিন আমার হাতে গোনা। তোর মা বাবা নিশ্চয়ই আমার ব্যাপারে তোর সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তুই ও নিশ্চয়ই ওদের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিস। তবেই তো আমার আজ বিদায়বেলা। তুই ‘না’ বললে, তোর বাবা মা হয়তো এমন সিদ্ধান্ত নিতেই পারতো না। বিশেষ করে তোর বাবা। তোর বাবা ছোট্টবেলা থেকে তোর অমতে কিচ্ছুটি করেনি। বেকার ছেলেটাকে বিয়ে করবি বলে জেদ ধরলি। বাবা কি কিছু বলতে পারল? সেই বিয়ে করে, তবে ছাড়লি। তোর রেস্তোরাঁর ব্যবসা, একা হাতে দাঁড় করিয়েছিস। নইলে তোর বরের কথা...শুনি তো সবই।
যাই হোক, কী আর বলব বল, কালকে লোকটা আসবে। আমি এখন দানসামগ্রী। তোর বাবা আমাকে দান করে দেবে। পৃথিবীর সব সম্পর্কই লেনদেনের বুঁচকি, এটা খেয়াল রাখবি। যতদিন দিতে পারছিস, লোকে তোকে নিয়ে কত আমোদ আহ্ললাদ করবে। যেদিন তোর দেওয়ার কোটা শেষ হবে সেই দিন তোকেও দান করে দেওয়া হবে। ঠিক আমার মতো। তোর বড়দার বিয়ের সময় আমাকে নিয়ে তোদের বাড়ির সবার কী আহ্লাদ, মনে নেই? সকাল থেকে সারা রাত। আমি যে তখন পারফর্ম করতে পারি এখন আমি অকেজো। তাই বলছি, বেঁচে থাকতে, কখনও অকেজো হোস না বুঁচকি। বড় কষ্টের। যাই হোক, এত কথা বললাম বলে আবার কষ্ট পাস না। আমার তো আর কয়েকটা দিন। শেষবার দেখলি না, বৈদ্যনাথ তোর বাবাকে বলল—‘দাদা এবার এটা ফেলে দিন, আর চলছে না। ’ আসি রে, ভালো থাকিস।
তোর হারমোনিয়াম পিসি