কর্মে সাফল্য ও সুনাম বৃদ্ধি। উকিল, মৃৎশিল্পীদের শুভ। সংক্রমণ থেকে শারীরিক অসুস্থতা হতে পারে। আর্থিক ... বিশদ
স্কুলশিক্ষায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একের পর এক অভিনব প্রকল্প চালু করেছেন। সেই সমস্ত প্রকল্প যেমন কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী, ঐক্যশ্রী, বিনামূল্যে বই, খাতা, স্কুল ব্যাগ, ইউনিফর্ম দেওয়ার সুফল পেয়েছে লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রী। বিবেকানন্দ মেরিট কাম মিনস স্কলারশিপও প্রতিবছর লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রী পেয়ে থাকে। এবার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে এই ক্রেডিট কার্ড প্রকল্প। ক্রেডিট কার্ড বা যে কোনও ঋণের কথায় অনেকেই নাক কোঁচকান। তবে, এক্ষেত্রে ব্যাপারটি তেমন নয়। সহজ শর্তে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রচুর সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে। আর খোদ সরকার এই ঋণের গ্যারান্টার থাকায় তা পেতেও সুবিধা হবে। শুধু তাই নয়, শর্ত সহজ থাকায় তা বোঝা হয়ে চেপেও বসবে না ছাত্রছাত্রী বা অভিভাবকদের ঘাড়ে।
কারা কারা এই ঋণ পাওয়ার যোগ্য, সেই আলোচনায় এবার আসা যাক। তিনটি প্রাথমিক শর্ত পূরণ করতেই হবে। প্রথমত, আবেদনকারীকে অন্তত ১০ বছর এ রাজ্যের নাগরিক হতে হবে। দ্বিতীয়ত, তাঁর বয়স ৪০ বছরের কম হতে হবে। তৃতীয়ত, দশম শ্রেণি বা তার উঁচু ক্লাসের পড়ুয়া হতে হবে। এবার প্রশ্ন উঠবে, কী নিয়ে পড়াশোনা করলে এই ঋণ মিলতে পারে? তার একটা বিস্তারিত তালিকা দিয়েছে সরকার। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা আইআইটি, আইআইএম, আইআইইএসটি, আইএসআই, এনএলইউ, এইমস, এক্সএলআরআই, বিআইটি, এসপিএ, এনআইডি, আইআইএসসি, আইআইএফটি, আইসিএফএ, কোনও বিজনেস স্কুল বা এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্য ঋণ মিলবে। এছাড়াও, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বা চাকরির প্রবেশিকার প্রস্তুতির জন্যও তারা ঋণ পাবে। এর মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং, চিকিৎসাবিদ্যা, আইনের মতো কোর্সে ভর্তির প্রবেশিকার প্রস্তুতি তো থাকবেই, পাশাপাশি আইএএস, আইপিএস, ডব্লুবিসিএস প্রভৃতি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্যও ঋণ দেওয়া হবে। আমলা বা পুলিস আধিকারিকের চাকরিতে আরও বেশি সংখ্যায় রাজ্যের ছেলেমেয়েরা এগিয়ে আসুক, এই স্বপ্ন মুখ্যমন্ত্রী বহুদিন ধরেই দেখেন। তাই এ ধরনের কোচিংয়ের জন্যও বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। আর্থিক সঙ্গতিহীন ছাত্রছাত্রীরাও যাতে এর সুযোগ পান, তার জন্যই সরকার এগিয়ে এসেছে। পাশাপাশি, ব্যাঙ্কিং, রেল, স্টাফ সিলেকশন এবং রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারি বিভিন্ন চাকরির প্রস্তুতি নেওয়ার জন্যও এই ঋণের আবেদন করা যাবে। তবে, তা নিতে হবে কোনও স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে। এই ঋণ নিয়ে বিদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও পড়াশোনা করা যাবে।
এই ঋণে কোন কোন খরচ ধরা থাকবে, তা জানার ব্যাপারেও আগ্রহ রয়েছে। সরকার জানিয়েছে, কোর্স বা সেমেস্টার ফি, টিউশন ফি, হস্টেল ফি বা ক্যাম্পাসে বাইরে পেইং গেস্ট হিসেবে থাকার খরচ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেওয়া রসিদ সাপেক্ষে কশান মানি এবং অন্য ফেরতযোগ্য জমানত, বিল্ডিং ফান্ড, পরীক্ষার খরচ, লাইব্রেরির খরচ, ল্যাবরেটরির খরচ খাতে প্রদেয় টাকা। তাছাড়াও থাকবে বই, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব প্রভৃতি কেনার খরচ। এছাড়াও, শিক্ষামূলক ভ্রমণ, প্রজেক্ট বা থিসিস সম্পূর্ণ করতে যা খরচ লাগবে, তা এতে ধরা থাকবে। কোর্স শেষ হওয়া পর্যন্ত মোট অনুমোদিত ঋণের সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ প্রতিষ্ঠান বহির্ভূত খরচ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। আর ২০ শতাংশ খরচ করা যাবে বসবাসের জন্য। প্রত্যেক খরচের হিসেব বিল সহ দপ্তরে এবং ব্যাঙ্কে অনলাইনে জমা দিতে হবে।
ঋণ অনুমোদনের সময় কোল্যাটারাল সিকিওরিটি বা অন্যান্য বিষয়ে ব্যাঙ্ক কোনও অপ্রয়োজনীয় বিধিনিষেধ বা শর্ত আরোপ করতে পারবে না। অভিভাবক বা আইনি অভিভাবকের সহ-দায়িত্ব ছাড়া ব্যাঙ্ক স্থাবর বা অস্থাবর রূপে কোনও সিকিওরিটি বা কোল্যাটারাল সিকিওরিটির জন্য চাপ দিতে পারবে না। অনুমোদিত ঋণের পরিমাণ অনুযায়ী শিক্ষার্থীর নামে একটি জীবন বিমা থাকবে। এই বিমার প্রিমিয়াম অবশ্য শিক্ষার্থীকে বহন করতে হবে এবং তা লোন অ্যাকাউন্ট থেকে কেটে নেওয়া হবে।
স্বামী বিবেকানন্দ গ্রুপ অব কলেজেস-এর অধিকর্তা নন্দন গুপ্ত বলেন, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি বা ম্যানেজমেন্টের বিভিন্ন কোর্সের খরচ দু’লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা। দ্বাদশ শ্রেণি উত্তীর্ণ প্রায় ১০ লক্ষ ছাত্রছাত্রীর বড় অংশই এই কোর্সগুলিতে আসবে। তাদের জন্য ব্যাপক সুবিধা হল এই ক্রেডিট কার্ড চালুতে। প্রযুক্তি শিক্ষার নিয়ামক সংস্থা এআইসিটিই একটি সমীক্ষায় জানিয়েছে, করোনার মধ্যেও এ রাজ্যের ৫০ শতাংশ পড়ুয়া চাকরি পেয়েছে। তাও সেটা হয়েছিল, ছাত্রছাত্রীরা পাশ করে বেরনোর দু’তিন মাসের মধ্যে। এক বছরের মাথায় সেটা ৭০-৭৫ শতাংশে দাঁড়াবে। এছাড়াও অনেকে উচ্চশিক্ষায় যাবে। তাই সঠিক কোর্স করলে চাকরি রয়েছে। এআইসিটিই ইন্টার্নশালা নামে একটি প্রকল্প এনেছে। এর মাধ্যমে চাকরির আগে স্টাইপেন্ড সহ ইন্টার্নশিপের সুযোগ অনেক বেড়েছে। প্রকল্পটির মাধ্যমে একাধিক সংস্থায় অনলাইন বা অফলাইন ইন্টার্নশিপ করা যায়। সংস্থাগুলি এবং ছাত্রছাত্রী, দু’পক্ষই এতে উপকৃত হয়। এতদিন বাধা ছিল শিক্ষাঋণ। এবার সেটাও আর রইল না।
জর্জ গ্রুপ অব কলেজেস-এর ডেপুটি ডিরেক্টর গৌতম সাহা বলেন, এমনিতেই আমাদের কোর্স ফি কম। তবে, কিছু পড়ুয়ার সেটা জোগাড় করতেও বেশ সমস্যা হয়। সেটা এবার মিটতে চলেছে। চাকরিমুখী কোর্স করলে এখনও প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। আমরাও ছাত্রছাত্রীদের এই বিষয়টা জানানোর চেষ্টা করছি। টিএইচকে জৈন কলেজের অধ্যক্ষা মৌসুমী সেনগুপ্ত বলেন, সাধারণ ডিগ্রি কলেজ নিয়েও ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ বাড়ছে। তবে, বেসরকারি কলেজের আয়ের উৎস ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া ফি। তাই অন্যান্য জায়গা থেকে কম হলেও এখানে ফি রয়েছে। তা দিতে গিয়ে কেউ যাতে সমস্যায় না পড়ে, তার জন্যই এই ঋণের আবেদন করার জন্য উৎসাহিত করা হবে। এই ঋণের টাকার অপব্যবহারের রাস্তাও বন্ধ করে রেখেছে সরকার।
এই ঋণের জন্য আবেদন করতে গেলে www.wb.gov.in, https://banglaruchchashiksha.wb.gov.in এবং https://wbssc.wb.gov.in ওয়েবসাইটে নাম নথিভুক্ত করতে হবে সমস্ত তথ্যাদি দিয়ে। কোনও প্রয়োজনে ১৮০০১০২৮০১৪ টোল ফ্রি নম্বরে ফোন করা যাবে।