ছ’য়ের দশকে হিন্দি ছবিতে অভিনয় করতে মুম্বই পাড়ি দিলাম। ‘কাশ্মীর কি কলি’র সময় আমার কাছে সুপারস্টার মানে একটাই নাম—দিলীপকুমার। ঘটনাক্রমে ওঁর বোন সায়িদার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়। ওঁরই দৌলতে আমার সঙ্গে দিলীপ সাবের সঙ্গে প্রথম দেখা। আমাকে দেখে বলেছিলেন, সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে আমার অভিনয় ওঁর ভালো লেগেছে। গাড়িতে ওঁকে কী বলব তা নিয়ে কত রিহার্সাল করেছিলাম। কিন্তু আমি তো চুপ। মুখ দিয়ে কথাই বেরচ্ছে না। একজন গুণমুগ্ধ অনুরাগীর মতো ওঁর সামনে বসেছিলাম। অভিনেতা দিলীপকুমারকে নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। তবে শ্যুটিংয়ের বাইরে ইন্ডাস্ট্রির বিপদে ওঁকে বারবার ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখেছি। কতবার ওঁর বাড়িতে ছবি নিয়ে আলোচনায় উপস্থিত থেকেছি। সেইসব আসরে কে না থাকতেন! রাজেন্দ্রকুমার, ধর্মেন্দ্র, শশী কাপুর, সাধনা— নাম বলে শেষ করতে পারব না। তিনি নিজে যখন কথা বলতে শুরু করতেন আমরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনতাম। বড়পর্দায় যেমন অনায়াসে ম্যাজিক তৈরি করতেন, একইভাবে চ্যারিটি ক্রিকেট ম্যাচেও সকলকে অবাক করে দিতেন। আমার কাছে এখনও একটা ক্রিকেট ম্যাচের ছবি রয়েছে, যেখানে আমার স্বামী মনসুর আলি খান পতৌদি আম্পায়ারিং করেছিলেন। 
বি আর চোপড়া পরিচালিত থ্রিলার ‘দাস্তান’ (১৯৭২) ছবিতে আমরা একসঙ্গে অভিনয় করেছিলাম। ছবিতে আমার চরিত্রটা খুব একটা বড় ছিল না। কিন্তু দিলীপকুমারের সঙ্গে কাজের সুযোগ হারাতে চাইনি বলেই রাজি হয়েছিলাম। চিত্রনাট্যও পড়ে দেখিনি। মনে পড়ছে সেই সময় পরিচালকের বাড়ির পিছনে একটা ইন্ডোর ব্যাডমিন্টন কোর্টে সময় পেলেই আমরা ব্যাডমিন্টন খেলতাম। শুধু ব্যাডমিন্টন নয়, ক্রিকেট, দাবা সবই খেলতে পারতেন  দিলীপকুমার। এই ছবির শ্যুটিংয়ে আমাকে খুবই সাহায্য করেছিলেন তিনি। সেই সময় আমরা হয়তো একইসঙ্গে চার-পাঁচটা ছবিতে কাজ করছি। কিন্তু ওঁকে দেখতাম একটা করে ছবি করতেন। টাকার পিছনে না ছুটে সবসময় চরিত্রের কথা মাথায় রেখে ছবি নির্বাচন করতেন। 
দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। সায়রা ও আমি সমসাময়িক অভিনেত্রী। ওর থেকে দিলীপকুমারের শারীরিক অবস্থার খবরাখবর নিতাম। টাইগার মারা যাওয়ার পর ইউসুফ সাব আমাকে হাতে লেখা একটা অসাধারণ চিঠি পাঠিয়েছিলেন। সেটা আমার কাছে ওঁর স্মৃতি হিসেবে থেকে যাবে।