তাঁর ছবির মুক্তি মানে সমালোচকদের দাঁত-নখে শান দেওয়ার সময়। এই হল সেই সময় যখন সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে শুরু হয় ই-ডার্বি। একপক্ষের দাবি, বাংলার সেরা পরিচালক তিনিই। আর এক পক্ষ মনে করে, ছবি পরিচালনা তাঁর কম্ম নয়। ‘শাহজাহান রিজেন্সি’ ছবিটি দেখে মনে হল, সৃজিত মুখোপাধ্যায় একটু নিশ্চিন্ত হবেন।
নতুন পরিচালক বাছলেই ছবি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ছে। এমন পরিস্থিতি তো চিন্তার কারণ! একের পর এক ফ্লপে সকলেরই কপালের চিন্তার ভাঁজ চওড়া হবে। যাঁরা ধরে ফেলেছেন তাঁরা মিলিয়ে নিন। আর যাঁদের ধাঁধা কাটেনি তাঁদের বলি প্রসঙ্গ শাহরুখ খান।
সোনাক্ষী সিনহার সময়টা ভালো যাচ্ছে না। তাঁর শেষ হিট ‘ইত্তেফাক’-এর পর দু’বছর কেটে গিয়েছে। গত বছর সোনাক্ষীর ‘ওয়েলকাম টু নিউইয়র্ক’ ও ‘হ্যাপি ফির ভাগ জায়েগি’ বক্স অফিসে ফ্লপ করেছে। দুঃখ কাটিয়ে সোনাক্ষী আবার নতুন ইনিংস শুরু করতে চলেছেন। ইতিমধ্যেই শেষ করেছেন ‘কলঙ্ক’-এর শ্যুটিং। এবার নতুন পরিচালক শিল্পী দাশগুপ্তর ছবিতে দেখা যাবে সোনাক্ষীকে।
বিনোদনের খবর শুরু হোক ক্যুইজ দিয়ে ! গুপী-বাঘা, সন্তু-জোজো, জয়-বিরু বা টিনটিন-হ্যাডক। সময়কাল আলাদা হলেও সবার আগে এই জুটিগুলোর মধ্যে মিল কোথায়? মিল তাদের বন্ধুত্বে। যে বন্ধুত্ব লাভ ক্ষতির হিসেবের ঊর্ধ্বে।
বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুকে সদ্য মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে অত্যাচারী ব্রিটিশ সরকার। প্রতিবাদের আগুন রাজপথে। বন্দেমাতরম ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস উদ্বেলিত। যার আঁচ পড়েছে এক বনেদি পরিবারেও। সেই বাড়ির বছর ১৪-র এক কিশোর মায়ের কাছে জানতে চাইছে, ক্ষুদিরাম বসু দেশের জন্য প্রাণ দিলেন কিনা।
বাস্তব কাহিনী নাটকীয় মোড়কে পরিবেশন করতেন এডউইন পোর্টার। আমেরিকার এই ফিল্ম মেকারই প্রথম সিনেমার বিভিন্ন অংশের গুরুত্ব বিবেচনা করে ক্লোজ শট, মিড শট আবার কখনও লং শটের ব্যবহার শুরু করেন। পোর্টার এভাবে সেলুলয়েডে দৃশ্যগত বিবরণকে নিপুণভাবে উপস্থাপিত করতেন বটে।
কর্মক্ষেত্রে অশান্তির সম্ভাবনা। মাতৃস্থানীয় কার শরীর-স্বাস্থ্যের অবনতি। প্রেমে সফলতা। বাহন ক্রয়-বিক্রয়ের যোগ। সন্তানের বিদ্যাশিক্ষায় উন্নতি।প্রতিকার: ... বিশদ
‘বলিদান পরম ধর্ম...’
ডানদিকের বুকপকেটে নামের ঠিক নীচটায় লেখা থাক ‘বলিদান’ শব্দটা। প্যারা এসএফ বা প্যারা স্পেশাল ফোর্সের অফিসাররা সেই কাজটাই করে থাকেন। কঠিন অপারেশনেই ডাক পড়ে তাঁদের। তা সে পণবন্দি উদ্ধার হোক, কিংবা সন্ত্রাস দমন। ‘উরি: দ্য সার্জিকাল স্ট্রাইক’ ছবি জুড়ে এই স্পেশাল ফোর্স। ২০১৬ সালে উরি বেসক্যাম্পে পাকিস্তানি জঙ্গিদের হামলায় ১৯ জওয়ানের মৃত্যুর পর পাল্টা আঘাত করেছিল ভারত— সার্জিকাল স্ট্রাইক। ভারতীয় সেনা ঘরে ঢুকে মেরেছিল পাকিস্তানকে। সেটাই এই ছবির বিষয়বস্তু। এবং অবশ্যই মেজর বিহান শেরগিল... অর্থাৎ ভিকি কৌশল।
‘মসান’, ‘রাজি’ বা ‘সঞ্জু’, প্রত্যেকটি ছবিতে নিজেকে ভেঙেছেন ভিকি। সবকটা চরিত্রে আলাদা ভিকিকে পেয়েছেন দর্শক। এই ছবির শুরু ইন্দো -মায়ানমার সীমান্তে। ৪ জুন, ২০১৬। ভারতীয় সেনার কনভয়ে হামলা চালিয়েছিল উত্তর-পূর্বের জঙ্গিরা। ১৮ জওয়ানের প্রাণ যায়। তারই বদলা হিসেবে কোভার্ট অপারেশন চালায় প্যারা এসএফ এবং বায়ুসেনা। আচমকা। যার নেতৃত্বে ভিকি কৌশল। দুরন্ত অ্যাকশনে জঙ্গি নিকেশ। আর তারপর ভিকির বাড়ি, অ্যালজাইমার্সে আক্রান্ত মা এবং ফিল্ড অপারেশন থেকে সরে আসা। গল্প এগিয়েছে দুরন্ত গতিতে। দিল্লিতে বসেই মেজর শেরগিল জানতে পারলেন উরি হামলার কথা। সেখানে শহিদ হয়েছেন তাঁরই ভগ্নীপতি। ছোট রোল মোহিত রায়নার। হিন্দি সিরিয়ালের দর্শকরা যাঁকে বেশি চেনেন শিবঠাকুর হিসেবে। এখানে তিনি ক্যাপ্টেন করণ কশ্যপ। বস্তুতই মোহিত করেছেন তিনি। ক্যাপ্টেন করণের শববাহী কফিন দিল্লি এসে পৌঁছনোর পর একটি দৃশ্য রয়েছে। যেখানে তাঁর স্ত্রী অর্থাৎ ছবিতে মেজর বিহানের বোন এবং আট বছরের ভাগ্নী শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসে। গান স্যালুট দেওয়ার মুহূর্তে ভিকির অভিনয় তাক লাগানোর মতো। চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে, কিন্তু কাঁদতে পারছেন না। ভেতরে দলা পাকিয়ে থাকা কান্নায় শরীরটা কেঁপে কেঁপে উঠছে। কোনও সংলাপ ছাড়াও শুধু অভিব্যক্তি দিয়ে অভিনয়কে কোন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়, ভিকি দেখিয়েছেন। এই ছবির জন্য ১৫ কেজি ওজন বাড়িয়েছেন তিনি। ছ’মাস ট্রেনিং করেছেন। তারপর তিনমাস টানা শ্যুটিং। পরিচালক আদিত্য ধরও যাঁকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত। তাঁর বানানো প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি। আর ভিকি বলতে গেলে একাই আদিত্যকে ডিস্টিংশন দিয়ে উতরে দিয়েছেন। ‘উরি’তে ভিকির চরিত্রটা বলিউডের নিয়মমতোই লাউড হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু তিনি তা হতে দেননি। গলার মডিউলেশন, সংলাপ বলার ধরন, অ্যাটিটিউড এবং অত্যন্ত মার্জিত অভিব্যক্তিতে ছবির ছোটখাটো দুর্বলতাকে ঢেকে দিয়েছেন তিনি। এক্সপ্রেশন যেখানে যতটা প্রয়োজন, ঠিক ততটাই। তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছে প্রচণ্ড গতির চিত্রনাট্য, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার (পড়ুন অজিত দোভাল) ভূমিকায় অনবদ্য পরেশ রাওয়াল এবং অবশ্যই রজিত কাপুর। নরেন্দ্র মোদির চরিত্রে তিনি। মেরেকেটে সাত-আটটি দৃশ্য। তাতেই ছাপ ফেলেছেন রজিত। শেষদিকে তো কোনও সংলাপই নেই তাঁর। শুধু এক্সপ্রেশনেই একশোয় একশো।
গত দু’বছরে সার্জিকাল স্ট্রাইক নিয়ে যত নিউজপ্রিন্ট খরচ হয়েছে, জিএসটি বা রাহুল গান্ধীও তার অর্ধেকটা আদায় করতে পারেননি। কাজেই উরি বেসক্যাম্পে হামলা বা তার পরের সার্জিকাল স্ট্রাইক নিয়ে সিনেমা হলে তা নিয়ে পলিটিক্যাল খোঁচাখুঁচি হবে, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু স্ক্রিনের সামনে বসা মাত্র যাবতীয় রাজনীতি পিছনের দরজা দিয়ে উধাও। ‘উরি’ দর্শককে এমনভাবে বেঁধেছে যে, স্ক্রিন থেকে চোখ সরানোর উপায় নেই। প্রথমার্ধে তো বটেই। মডার্ন ওয়ারফেয়ারের খুঁটিনাটি ব্যবহার বলিউডে এত ভালো আগে দেখাই যায়নি। সঙ্গে রয়েছে দারুণ সিনেমাটোগ্রাফি। পাকিস্তানের বেসক্যাম্পে ঢুকে হামলার সময় ক্যামেরা দৌড়চ্ছে কমান্ডোদের পাশে। ক্যামেরার সেই স্বাভাবিক কাঁপুনি দর্শককে আরও একাত্ম করেছে সিনের সঙ্গে। জাতীয় পতাকা ব্যবহারের বাড়াবাড়ি না দেখিয়েও দেশাত্মবোধকে যে সঞ্চারিত করা যায়, ‘উরি’ তারই প্রমাণ রাখল। ‘অভিজাত’ মাল্টিপ্লেক্সে মর্নিং শোতে পর্যন্ত স্লোগান উঠল,‘ভারত মাতা কী জয়... জয় হিন্দ।’ লোকসভা ভোটের মুখে এই ছবি নরেন্দ্র মোদিকে কতটা ডিভিডেন্ড দেবে বলা মুশকিল, সার্জিকাল স্ট্রাইক কিন্তু দর্শকের মন জিতে নিয়েছে। সৌজন্যে? ভিকি কৌশল। সত্যিই... ‘উরি’য়ে দিলেন ভিকি। আবার।
শান্তনু দত্তগুপ্ত
