সৎসঙ্গ ও আধ্যাত্মিক ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠে মানসিক তৃপ্তি। কাজকর্মের ক্ষেত্রে নতুন কোনও যোগাযোগ থেকে উপকৃত ... বিশদ
প্রফেসর শঙ্কুর ডায়েরি খুললে দেখা যায়, কৌশলীর জঙ্গলে তিনি ‘স্বর্ণপর্ণী’ নামক এক গাছের সন্ধান পান। তাঁর বাবার ছোটবেলায় হওয়া কঠিন পাণ্ডুরোগ নাকি এই গাছের পাতার গুঁড়ো খেয়েই সেরে গিয়েছে। তাই শুনে প্রফেসর শঙ্কু কাশিতে গিয়ে কৌশলীর জঙ্গলে গিয়ে শেকড় শুদ্ধ গাছটি তুলে এনে গিরিডির বাড়িতে লাগানোর ব্যবস্থা করেন। ‘শঙ্কুর মিরাকিউরোল ওষুধ’ ছিল এই গাছ। সত্যজিতের কল্পবিজ্ঞানের এই গল্পে যেমন মিরাকল ওষুধের কথা বলা হয়েছে, ক্যান্সারের জন্য তেমনই কিছু মিরাকল-এর জন্য অপেক্ষা করছে গোটা বিশ্ব।
ক্যান্সার নিয়ে আধুনিক বিশ্বে বিভিন্ন গবেষণা। এই রোগ নিয়ে সমস্যা ও ভয়ভীতি এতই গভীরে প্রোথিত এবং ইদানীং এই অসুখ যে হারে ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে প্রায় সকলেরই চিন্তা, ‘ক্যান্সার হবে না তো?’ কার ক্যান্সার হবে আর কার হবে না তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে জীবনচর্যার কিছু ভুল ভবিষ্যতে ক্যান্সারের পথে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। যেমন:
তামাক, গুটকা, সুপারি: যেসব মানুষ নিয়মিত তামাক ও গুটকা সেবন করেন, তাদের মুখগহ্বরের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। আমাদের দেশের ৪০ শতাংশ ক্যান্সারের নেপথ্যে দায়ী এই তামাক ও গুটকা। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের মতে, নিকোটিন এবং অ্যালকোহল একসাথে পুরুষদের প্রায় ৮০ শতাংশ মুখের ক্যান্সার এবং মহিলাদের প্রায় ৬৫ শতাংশ মুখের ক্যান্সারের জন্য দায়ী। অনেকে নিয়মিত পানের সঙ্গে সুপারি খান। সুপারির মধ্যেও ক্যান্সার ডেকে আনার ক্ষমতা রয়েছে। মুখগহ্বর পরীক্ষা করে তা ঝুঁকি
ধূমপান ও অ্যালকোহল: একটা সময় অনেকে ভাবতেন, বিড়ি-সিগারেট থেকে ক্যান্সার হলেও অ্যালকোহল বোধহয় তুলনামূলক ‘নিরাপদ’। তবে এ ধারণা ঠিক নয়। বরং অ্যালকোহল থেকেও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। অল্প করে হলেও অ্যালকোহল নিয়মিত গ্রহণ করলে মুখ, গলবিল, স্বরযন্ত্র এবং খাদ্যনালীতে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ বা তিনগুণ বেড়ে যায়। মহিলাদের ক্ষেত্রে কোলোরেক্টাল ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ বেড়ে যায়।
লিউকোপ্লেকিয়া ও এরিথ্রোপ্লেকিয়া: অনেকের জিভের ভিতরে ছোট ছোট সাদা স্পট বা দাগ দেখা যায়। সাদা দাগকে বলে লিউকোপ্লেকিয়া। মুখের ভিতর তালু ও গালের দু’পাশে লালচে দাগ থাকলে তাকে বলে এরিথ্রোপ্লেকিয়া। এই দুই ধরনের অসুখ থাকলে তাঁদের নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে ও অসুখের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এগুলি শরীরে দেখা দেওয়া মানেই তা ক্যান্সার এমন নয়। কিন্তু নিয়মিত পর্যালোচনা ও চিকিৎসায় না থাকলে ভবিষ্যতে এগুলো থেকে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কিছু ক্ষেত্রে থেকে যায়। অনেক সময় দেখা যায়, যাঁরা মৌখিক যৌনতায় অভ্যস্ত, তাঁদের কারও কারও এই অসুখ বেশি হয়। এছাড়াও কয়েকটি পরীক্ষার মাধ্যমে আগাম ক্যান্সার স্ক্রিনিং করা হয়। এই পরীক্ষাগুলি ক্যান্সার হওয়ার আগেই ক্যান্সারপ্রবণ কোষগুলি খুঁজে পেতে সাহায্য করে। এমন বিশেষ কয়েকটি পরীক্ষা ব্রাকা জিন টেস্ট: যাঁদের পরিবারে একাধিক রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ব্রেস্ট ক্যান্সার বা জরায়ুর ক্যান্সারের শিকার হয়েছেন, তাঁদের বেলায় জেনেটিক টেস্ট ‘ব্রাকা (বিআরসিএ) জিন টেস্ট’ করতে হয়। দেখা যায়, এঁদের অনেকের শরীরে ব্রাকা জিনের উপস্থিতি থাকে। এই জিন থাকলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তাই পরীক্ষায় ব্রাকা জিনের উপস্থিতি প্রমাণ হলে ক্যান্সার এড়ানোর ক্ষেত্রে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। সাধারণও শরীরে ব্রাকা জিনের উপস্থিতি থাকলে ৩০ বছর বয়সের পর থেকেই স্তন ক্যান্সার ও জরায়ু ক্যান্সার স্ক্রিনিং শুরু করে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। খুব তরুণ বয়সে ব্রেস্ট ক্যান্সার ধরা পড়লে বা ট্রিপল নেগেটিভ ব্রেস্ট ক্যান্সার ধরা পড়ার পরেও এই টেস্ট করানো হয়। পুরুষদের ক্ষেত্রেও প্রস্টেট ক্যান্সারের ইতিহাস পরিবারে থাকলে তাঁদের ব্রাকা টেস্ট করা হয়।
ম্যামোগ্রাফি: পরিসংখ্যানগতভাবে আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি স্তন ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব লক্ষ করা যায়। শরীরে ব্রাকা জিন না থাকলে বয়স ৪০ পেরলে সব মেয়েকে ম্যামোগ্রাফি টেস্ট করার পরামর্শ দেওয়া হয়। ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত এই টেস্ট বছরে একবার করে করা উচিত। তবে মহিলারা নিজেরাই বাড়িতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ব্রেস্ট ক্যান্সার পরীক্ষা করতে পারেন। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে জেনে নিন কীভাবে ব্রেস্টে লাম্পের উপস্থিতি খতিয়ে দেখবেন। রোজ স্নানের সময় আন্ডার আর্ম ও ব্রেস্ট নিজেরাও পরীক্ষা করে দেখে নিন কোনও উঁচু, নরম মাংসপিণ্ডের আভাস পাচ্ছেন কি না।
প্যাপস্মিয়ার: হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি) থেকে জরায়ুমুখের ক্যান্সার হয়। এই ক্যান্সারের ঝুঁকি আছে কি না তাও পরীক্ষার মাধ্যমে আগাম আভাস পাওয়া সম্ভব। সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্রীয় বাজেটে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বক্তৃতায় জরায়ুমুখের ক্যান্সার খাতে খরচ ও তার টিকা নিয়ে আলোচনা শোনা গিয়েছে। সাধারণত ২১ থেকে ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত বিবাহিত মহিলাদের বছরে একবার প্যাপস্মিয়ার টেস্ট করানো দরকার। এছাড়া জরায়ুমুখের ক্যান্সারের আগাম আভাস পেতে সিএ১২৫, ইউএসজি এসব পরীক্ষাও করা হয়।
প্রস্টেট ক্যান্সারের স্ক্রিনিং: বয়সকালে এই ক্যান্সারের প্রবণতা বাড়ে। সাধারণ ৬০ বছর বয়স হয়ে গেলেই প্রতি বছর পিএসএ ব্লাড টেস্ট করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এর মাত্রা ৪ এনজি/ এমএল। কোনও পুরুষের পিএসএ কাউন্ট ৪ ছাড়িয়ে গেলে তাঁকে আরও কিছু পরীক্ষা করাতে হয়। সাধারণত ১০ এনজি/এমএল পর্যন্ত স্কোর এলে তাকে ‘বর্ডারলাইন স্কোর’ ধরা হয়। এমন ক্ষেত্রে প্রতি ৪ জন পুরুষের ১ জনের এই ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। স্কোর ১০ ছাড়িয়ে গেলে প্রতি দু’জনের একজনের ক্যান্সার প্রাবণতা থাকে।
কোলোরেক্টাল ক্যান্সার স্ক্রিনিং: কোলোনোস্কোপি, সিগমায়েডোস্কোপি-সহ বেশ কিছু স্ক্রিনিং কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকিকে চিহ্নিত করে। এই পরীক্ষা কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা ছাড়াও অস্বাভাবিক কোলন বৃদ্ধি ও তাতে পলিপের উপস্থতি খুঁজতে সাহায্য করে। সেই পলিপ বিপজ্জনক হলে ক্যান্সার হওয়ার আগেই তা অপসারণ করে ফেলা যায়।