কাজকর্মের ক্ষেত্রে যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে। ক্রীড়াবিদদের সাফল্য লাভের সম্ভাবনা। পারিবারিক ক্ষেত্রটি মোটামুটি থাকবে। ... বিশদ
পেটের রোগ মানেই কোলাইটিস ভাবা—বর্তমানে এমন বাঙালি পরিবার বোধ হয় খুঁজে পাওয়া মুশকিল, যেখানে অন্তত একজনেরও পেটের সমস্যা নেই। নিত্যদিন হজমের সমস্যা লেগে রয়েছে, তবু বাইরের ভাজাভুজি ননস্টপ চলছে। তবে আরও বড় সমস্যা হল তিলকে তাল ভেবে ফেলা। তেমন সামান্য পেটের রোগ হলেই অনেকেই ভেবে নেন কোলাইটিসের মতো হয়তো জটিল কোনও রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। তা থেকে টেনশন, ফল আরও অসুস্থ হয়ে পড়া। তবে দেখা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলি সাধারণ ডায়রিয়া। আবার অনেকে আইবিএসের সঙ্গেও কোলাইটিস গুলিয়ে ফেলেন। এই ক্রনিক কোলাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাটা কিন্তু বাঙালিদের মধ্যে খুবই কম।
কী এই কোলাইটিস—প্রশ্ন হল, এই কোলাইটিস আসলে কী? জীবন বিজ্ঞান বইতে পড়েছি, কোলন আমাদের বৃহদন্ত্রের অংশ। এই কোলনের চারভাগ, অ্যাসেন্ডিং কোলন, ট্রান্সভার্স কোলন, ডিসেন্ডিং কোলন ও সিগময়েড কোলন। এই কোলনের কোনও অংশের প্রদাহকেই বলে কোলাইটিস। সাধারণত ই-কোলাই, ক্যাম্পাইলোব্যাকটার জাতীয় ব্যাকটেরিয়া থেকে অ্যাকিউট কোলাইটিস হতে পারে। এই ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ খাবার বা জল থেকে হতে পারে।
আবার কোলনে আলসার হলেও কোলাইটিস হয়। একে বলে আলসারেটিভ কোলাইটিস। আবার বহুদিন ধরে পেট খারাপ ও মলের সঙ্গে রক্ত পড়ার মতো সমস্যাও অনেকের হয়। একে বলে ক্রোনজ ডিজিজ। আলসারেটিভ কোলাইটিস ও ক্রোনজ ডিজিজ উভয়ই ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজ (আইবিডি)।
কতদিনে সারে—সাধারণত অ্যাকিউট কোলাইটিস এক দু’সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়। এক্ষেত্রে মাঝেমধ্যেই প্রেসার আসা, তরল পায়খানা, পেটে ব্যথা, হালকা জ্বর, পেট ফাঁপার মতো উপসর্গ থাকে। সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক কিছু ওষুধেই অ্যাকিউট কোলাইটিস সেরে যায়।
তবে দুই সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে এই সমস্যা চলতে থাকলে কিন্তু তা ক্রনিক কোলাইটিস হতে পারে। সেক্ষেত্রে অ্যাকিউট কোলাইটিসের উপসর্গ থাকেই। সেই সঙ্গে রোগীর ওজনও কমতে শুরু করে। এই ক্রনিক কোলাইটিসের মধ্যে অন্যতম ক্রনজ ডিজিজ ও আলসারেটিভ কোলাইটিস। এই আলসারেটিভ কোলাইটিস কিন্তু অটোইমিউন ডিজিজও। অর্থাৎ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই শরীরকে আক্রমণ করে বসে।
কী ধরনের পরীক্ষা—কোলনোস্কপি করে আলসারেটিভ কোলাইটিস হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখা হয়। আলসারেটিভ কোলাইটিস যেখানে শুধু কোলনেই সীমাবদ্ধ, সেখানে ক্রোনজ ডিজিজের ক্ষেত্রে অনেক সময় ক্ষুদ্রান্ত্রেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বায়োপ্সি করেও এই রোগ নির্ণয় করা হয়।
চিকিৎসা কী—ক্রনিক কোলাইটিস হলে কিন্তু বেশ দীর্ঘ সময় ধরে ওষুধ খেতে হবে। সাধারণত ইমিউনোসাপ্রেসেন্ট স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ রোগীকে দেওয়া হয়। এছাড়া মেসালাজিন বলে একধরনের ওষুধও প্রেস্ক্রাইব করা হয়। এতে কোলনের ইনফ্লামেশন কমে। পাশাপাশি কিছু বায়োএজেন্টও দেওয়া হয়। নিয়মমতো এই ওষুধ খেলেই কিন্তু ক্রনিক কোলাইটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। খুব কম রোগীরই অপারেশনের দরকার পড়ে।
ডায়েট কেমন—কোলাইটিস বা সাধারণ ডায়রিয়া, যাই হোক না কেন, দুধ ও গম জাতীয় খাবার না খাওয়াই উচিত। এছাড়া আলাদা করে নির্দিষ্ট কোনও ডায়েট নেই। তবে নিজে থেকে ডাক্তারি করা একেবারেই চলবে না। সামান্য একটু পেটে গড়বর হলেই অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে নেওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করতেই হবে। কোনটা ডায়রিয়া, কোনটা অ্যাকিউট কোলাইটিস আবার কোনটা ক্রনিক কোলাইটিস, তা কিন্তু সাধারণের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়।