কাজকর্মের ক্ষেত্রে যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে। ক্রীড়াবিদদের সাফল্য লাভের সম্ভাবনা। পারিবারিক ক্ষেত্রটি মোটামুটি থাকবে। ... বিশদ
‘ডিমেনশিয়া’ নিয়ে আধুনিক বিশ্বে অনেকেই সচেতন। অসুখটির নিয়ে নিরন্তর গবেষণা চলছে বিশ্বজুড়ে। সাধারণ মানুষের কাছে এই রোগ মানে ‘ভুলে যাওয়ার অসুখ’। তবে গবেষণা চালাতে গিয়ে যা বুঝেছি, তা কিন্তু এই প্রচলিত ধারণাকে নস্যাৎ করে দিয়েছে। আসলে ‘ভুলে যাওয়া’-ই ডিমেনশিয়া রোগের একমাত্র লক্ষণ নয়। মানুষ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত না হয়েও অনেক কিছুই বিনয়বাবুর মতো ভুলে যেতে পারেন। তাতে ডিমেনশিয়ার হাত নেই। তবে ভয় তখনই, যখন ভুলে যাওয়ার সঙ্গে কোনও মানুষের ব্যক্তিত্বের আমূল পরিবর্তন হচ্ছে। চঞ্চল মানুষ হয়ে উঠছেন শান্ত। আর সাত চড়ে রা না করা লোক, পাড়ার ফালতু ঝামেলায় হাতাহাতি করে আসছেন। এই ব্যবহারগত পরিবর্তনই ডিমেনশিয়ার প্রাথমিক লক্ষণ। পরে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ভুলে যাওয়ার সমস্যা। তবে ব্যক্তিত্বের বদল না ঘটলে শুধুই ভুলে যাওয়া নিয়ে অত ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
আধুনিক যুগে গবেষণায় এমন কিছু বিষয় নানা কেস স্টাডিতে উঠে এসেছে যা দেখলে চমকে যেতে হয়। ২০১৫ থেকে এই অসুখ নিয়ে গবেষণা চালাতে গিয়ে দেখেছি, ডিমেনশিয়া কার হবে ও কার হবে না সেটা অনেকটা নির্ভর করে তার জীবনশৈলী, বেড়ে ওঠা, জিন থেকে প্রাপ্য স্বভাব এসবের উপর!
একজন শিশু তার জিন পায় বাবা ও মায়ের থেকে। বাবা ও মায়ের স্বভাবচরিত্র (নেচার) সে তার জিনে বহন করে। সঙ্গে যোগ হয় সে কোন পরিবেশে বড় হচ্ছে, কাদের কাছে ও কোন সঙ্গ পেয়ে (নার্চার) বড় হচ্ছে। এই নেচার ও নার্চারের যুগলবন্দিতে শিশুটির চরিত্র, স্বভাব ও রুচি তৈরি হয়। তবে পরিবেশের প্রভাব একজনের উপর থাকলেও নেচারের গুরুত্ব প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ। একজনের ব্যক্তিত্ব তৈরি ও তিনি সারাজীবন কোন আদর্শ ও ভাবনা নিয়ে চলেছেন, তা অনেকটা ভূমিকা পালন করে এই রোগের বেলায়।
২০১৫ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বহু ডিমেনশিয়া রোগীকে দেখতে দেখতে তাঁদের পূর্ব জীবন সম্পর্কে জানতে গিয়ে দেখেছি, একটি বড় অংশ রোগীই সুস্থ থাকাকালীন আত্মকেন্দ্রিক, চুপচাপ, উদ্বিগ্ন, শুধু নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকা মানুষ ছিলেন। অন্যের জন্য অনুভূতি খুব কম ছিল। চিকিৎসা পরিভাষায় একে বলে ‘নিউরোটিসিজম’। এই নিউরোটিসিজমে কি মানুষের জিন, স্বভাব কোনওভাবেই দায়ী নয়? ২০১৯ সালে ফ্লোরিডার এক বিজ্ঞানী তেরেসিয়ানো এ বিষয়ে একটি স্টাডি প্রকাশ করেন। তা হুবহু মিলে যায় আমার ভাবনার সঙ্গে। তারপরেই এই দিকটি নিয়ে আরও সচেতন হয়ে কাজ শুরু করি। দেখা যায়, মানুষের ব্যক্তিত্বের সঙ্গেও এই অসুখ জড়িয়ে। এতদিন মনে করা হতো দীর্ঘদিনের অনিয়ন্ত্রিত সুগার, হাইপারটেনশন, উচ্চমাত্রায় লিপিড প্রোফাইল, স্ট্রোক ইত্যাদি থেকে মস্তিষ্কে অ্যামোলয়েড প্রোটিন জমে এই অসুখের ঝুঁকি বাড়ে। কিন্তু ব্যক্তিত্ব ও স্বভাব যে এত বড় ভূমিকা পালন করে, সেইদিকটাও জানা গেল। প্রশ্ন হল, কেন কোনও কোনও মানুষ আত্মকেন্দ্রিক ও আত্মমগ্ন হয়? একটি সুস্থ ব্যক্তিত্ব তৈরি করতে গেলে প্রথমেই প্রয়োজন ছ’টি ভিত্তি বা হেক্সাকো। এইচ— হল অনেস্টি বা সততা। ই— ইমোশন বা আবেগ। এক্স অর্থে এক্সট্রাভার্শন অর্থাৎ সততা ও আবেগের বহিঃপ্রকাশ কতটা। এ বলতে এগ্রিয়েবল বা মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা। সি বলতে কনসেনটিয়াসনেস বা উচ্চ নীতিবোধ এবং ও বোঝায় ওপেননেস বা নভেলটি। এর মধ্যে যাঁদের চরিত্রে ‘সি’ বা কনসেনটিয়াসনেস বেশি এবং অন্য ফ্যাক্টরগুলি সুষমভাবে বিন্যস্ত, তাঁরা সুব্যক্তিত্বের অধিকারী। আবার যাঁদের মধ্যে এই ফ্যাক্টরগুলি যত কম, সুদূর ভবিষ্যতে তাঁদের জীবনে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি ততই বেশি। জিন, ব্যক্তিত্ব ও স্বভাব—এই ত্রয়ীর দোষ-গুণের উপরেই দাঁড়িয়ে এই রহস্যময় অসুখের মানদণ্ড।