কর্মে সাফল্য ও সুনাম বৃদ্ধি। উকিল, মৃৎশিল্পীদের শুভ। সংক্রমণ থেকে শারীরিক অসুস্থতা হতে পারে। আর্থিক ... বিশদ
বয়স বাড়লে এমনিতেই শারীরিক কিছু সমস্যা এসে হানা দেয়, আর তা খুবই সাধারণ ব্যাপার। তবে সেই অসুখ নিয়ে সর্বক্ষণ চিন্তা করা স্বাভাবিক নয়। একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। ধরা যাক একজন বয়স্ক মানুষের উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা রয়েছে। নিয়মিত ওষুধও খান। এখন ওই ব্যক্তি যদি সর্বক্ষণ ভাবতে থাকেন, ‘হাই ব্লাডপ্রেশার রয়েছে, এবার হার্ট অ্যাটাক হওয়া কেউ আটকাতে পারবে না’— তাহলে কিন্তু বিপদ। কিংবা সামান্য চোট লেগে হাত ফুলে গিয়েছে, আর সেই ফোলা দেখে কারও মনে হল এবার হাতে গ্যাংগ্রিন শুরু হবে! এই দুশ্চিন্তা থেকে তাঁর রাতের ঘুম নষ্ট হল। এমন ঘটনাও কিন্তু সাইকোসোমাটিক ডিজঅর্ডারের দিকেই ইঙ্গিত করে।
এখানেই শেষ নয়। নানা ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কিছু লোক নিয়ম মেনে ওষুধ খান। রক্ত পরীক্ষা সহ ইমেজিং টেস্টও করান। অথচ সেই সকল টেস্টের রিপোর্ট নর্মাল আসার পরেও তাঁদের শরীর নিয়ে দুশ্চিন্তা দূর হয় না। বারবার ডাক্তারবাবুর চেম্বারে গিয়ে চেক আপ করিয়ে আসেন। একই পরীক্ষা ভিন্ন ভিন্ন টেস্ট সেন্টার থেকেও করাচ্ছেন— এমন উদাহরণও বিরল নয়। আবার এমনও দেখা গিয়েছে, হয়তো রোগ একটা সত্যিই আছে। তবে সেই অসুখের ব্যাপ্তি এতটাও নয় যে তা নিয়ে প্রতিক্ষণে দুশ্চিন্তা করতে হবে। তবু তিনি ওই একটি অসুখ নিয়ে চারজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। তাতেও সন্তুষ্ট হন না। বিকল্প নানা পদ্ধতিতে চিকিৎসাও শুরু করান।
প্রশ্ন হল, কেন কিছু ব্যক্তি শরীর নিয়ে এত দুশ্চিন্তা করেন? একথা বুঝতে হলে আমাদের ওই বয়স্ক ব্যক্তির আর্থ সামাজিক অবস্থান বুঝতে হবে। অর্থাৎ জানতে হবে ওই ব্যক্তি একাকিত্বের সমস্যায় ভুগছেন কি না? ওই ব্যক্তির মানসিক কোনও সমস্যা আছে কি? আর্থিক সমস্যায় কি তিনি আক্রান্ত? তিনি কি বিশেষভাবে সক্ষম? শারীরিক ভারসাম্যের কি অভাব আছে? এই ধরনের বিষয়গুলি যাচাই করা দরকার।
অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় ছেলে-মেয়েরা বাড়ি থেকে দূরে থাকে। ফলে বয়স্করা সামাজিক সহায়তা পাবেন কি পাবেন না, তা নিয়ে অত্যন্ত শঙ্কিত থাকে। তাঁদের মনে হয় রাতবিরেতে বিপদে পড়লে কাকে ডাকবেন? কোথায় পাবেন অ্যাম্বুলেন্স? নিরাপত্তাবোধের অভাব একটা থেকেই যায়। এই ধরনের বিষয়গুলিও জন্ম দিতে পারে সাইকোসোমাটিক ডিজঅর্ডারের। এক্ষেত্রে অতি প্রয়োজনীয় হয়ে উঠতে পারে সরকারি তরফে বয়স্কদের জন্য আলাদা ধরনের হেলথ কার্ড। ওই হেলথ কার্ডের সাহায্যেই বয়স্করা প্রয়োজনীয় হেলথ চেকআপ করাতে পারেন ও নিশ্চিন্ত হতে পারেন। এই নিরাপত্তাবোধই সাইকোসোমাটিক ডিজঅর্ডার থেকে অনেকখানি মুক্ত করতে পারে।
পাশাপাশি আমাদের ভুললে চলবে না যে বহু অসুখের প্রাথমিক অবস্থা আলাদা করে কোনও নির্দিষ্ট উপসর্গ থাকে না। অস্টিওপোরোসিস, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন এমনই অসুখ। তাই কোনও বয়স্ক মানুষ উপসর্গের কথা বললে প্রথমেই তার বক্তব্যকে উড়িয়ে দিলে চলবে না। বরং সঠিকভাবে রোগের ইতিহাস সম্পর্কে শুনে তারপর মতামত দিতে হবে।
লিখেছেন সুপ্রিয় নায়েক