সৎসঙ্গ ও আধ্যাত্মিক ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠে মানসিক তৃপ্তি। কাজকর্মের ক্ষেত্রে নতুন কোনও যোগাযোগ থেকে উপকৃত ... বিশদ
রাত গড়িয়ে সকাল
হস্টেলটাই এখন আমাদের ঘরবাড়ি। আর সহপাঠীরাই আপজনজন। হস্টেল ইন-চার্জ শমিতা ভৌমিক ও সুপার দিদি অত্যন্ত যত্নশীল। আমাদের লেখাপড়া, গানবাজনা, আঁকা— প্রতিটি ব্যাপারে কড়া নজর। স্কুলটাই স্বপ্নের ঘরবাড়ি। একসঙ্গে অনেকে থাকি। তাই গল্প, খেলাধুলো একটু বেশিই হয়। এখন অ্যানুয়াল পরীক্ষার আগে চলছে শেষ মুহূর্তের ফাঁকফোকর মেরামত। মাস কয়েক আগে ক্লাস টেস্ট পরীক্ষার আগে একটা ঘটনা ঘটেছিল। ভূগোল পরীক্ষার আগে আমরা ইতিহাস পড়ছিলাম। ভুলটা যখন ধরা পড়ল, তখন রাত। সবাই একসঙ্গে আবার ভূগোল পড়া শুরু করলাম। ভূগোল পড়তে পড়তে কখন যে রাত গড়িয়ে সকাল হল বুঝতে পারিনি। যাইহোক, ভূগোলে নম্বর কিন্তু নেহাত কম পাইনি।
—ঐশী নন্দী, নবম শ্রেণি
নেতিবাচক চিন্তা নয়
পরীক্ষায় ভালো ফল করার একটাই মন্ত্র— মন দিয়ে পড় আর নেতিবাচক চিন্তা দূর কর। এবার আমি মাধ্যমিক দেব। তাই জোর কদমে চলছে পরীক্ষার প্রস্তুতি। পড়ার পাশাপাশি লেখাও অনুশীলন করতে হচ্ছে। কিছু কিছু বিষয় আগে থেকে নোটস আকারে তৈরি করে নিলে প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হয়। যে জায়গাগুলো আটকে যাচ্ছি, আমাদের স্কুলের অভিজ্ঞ শিক্ষিকারা তা বুঝিয়ে দিচ্ছেন। মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অযথা ভয় বা দুশ্চিন্তাকে মনে ঠাঁই দিচ্ছি না। কারণ জানি, নেতিবাচক চিন্তা যত মনের মধ্যে ভিড় বাড়াবে তত, পড়াশোনার উপর খারাপ প্রভাব পড়বে। আমাদের কয়েকজন সহপাঠীর টিম রয়েছে। পড়ার বিষয়ে কোনও সমস্যা হলে একে অপরকে সাহায্য করি।
—জয়া বিশ্বাস, দশম শ্রেণি
নতুন স্বপ্ন
আমি ভিক্টোরিয়া স্কুলের হস্টেলে থাকি। মহানন্দে দিনগুলি কাটে। তবে, আমাদের সকলকেই একটা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে এখানে থাকতে হয়। সেই ফাঁকেই সহপাঠীদের সঙ্গে চলে নানান বিষয় নিয়ে খুনসুটি। কে, কোথায় পড়তে বসব, কতক্ষণ রুমের মধ্যে আলো জ্বলবে— এইসব নিয়েই চলে আমাদের খুনসুটি। পড়াশোনার মাঝে ফাঁকা পেলেই চলে আমাদের গল্প। পরীক্ষার আগে একটু রাত জেগে পড়ছি। খিদে পেলে মাঝ রাতেই ঝালমুড়ি বানিয়ে খাচ্ছি। দুষ্টুমির জন্য আমরা সুপার দিদির কাছে বকাও খাই মাঝেমধ্যে। আমরা সবাই ভালো ফল করতে চাই। এই স্কুল আমাদের স্বপ্ন দেখায়।
—হিমোল হালদার, সপ্তম শ্রেণি
সঠিক মূল্যায়ন
ছাত্রছাত্রীদের জীবনে পরীক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। সারা বছরের পড়াশোনার মূল্যায়ন করা হয় এই বার্ষিক পরীক্ষার মাধ্যমে। পরীক্ষা এলে ছোটবেলায় একটু ভয় ভয় করত। কিন্তু এখন কোনওরকম টেনশন হয় না। নতুন ক্লাসে উঠেই একটা রুটিন ছকে নিই। সেই রুটিন মেনেই সারা বছর পড়ি। তাই পরীক্ষার সময় অযথা দুশ্চিন্তা করতে হয় না। আর পড়া অবসরে নাচ, গান ও আঁকা নিয়ে মেতে থাকি।
—কিরণ বিশ্বাস, অষ্টম শ্রেণি
লেখার অভ্যাস
সামনেই জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা— মাধ্যমিক। তাই পরীক্ষা প্রস্তুতি নিয়ে একটু চিন্তাতেই আছি। ক্লাস টেনে ওঠার পর থেকেই গোটা সিলেবাস খুঁটিয়ে পড়ছি। পড়ার জন্য নিজের মতো একটা রুটিন তৈরি করে নিয়েছি। নিজেকে নিয়মানুবর্তিতার শৃঙ্খলে বেঁধেছি। উত্তর মুখস্থ না করে বুঝে পড়ার চেষ্টা করছি। যাতে নিজে নিজেই সহজে উত্তর লিখতে পারি। শুরু থেকেই প্র্যাকটিস সেট, টেস্ট পেপার সমাধান এবং মক টেস্ট দিয়ে তৈরি হচ্ছি। হাতের লেখা সুন্দর রেখে দীর্ঘ সময় লেখার অভ্যাস করছি। ভৌতবিজ্ঞান ও ইংরেজিতে বিশেষ নজর দিচ্ছি। অঙ্ক করছি ঘড়ি ধরে। আর সেইসঙ্গে শরীর ঠিক রাখতে পুষ্টিকর খাবার খাচ্ছি।
—সোহিনী জানা, দশম শ্রেণি
আত্মবিশ্বাসী
সামনেই পরীক্ষা। তাই রিভিশন চলছে। সিলেবাস পুজোর ছুটি পড়ার আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। অঙ্ক ও ইংরেজি বিষয়ে যেহেতু আমার সামান্য দুর্বলতা রয়েছে, তাই ওই সাবজেক্ট দুটো বিশেষ জোর দিয়ে পড়ছি। এমনি পরীক্ষার পড়া নিয়ে আমি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। সহপাঠীরা মিলে একটি গ্রুপ করে পড়ছি। ফলে আমাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে গিয়েছে। আশা করি, আমরা সকলেই খুব ভালো পরীক্ষা দেব।
—জিকরা ইমতিয়াজ, ষষ্ঠ শ্রেণি
প্রধান শিক্ষিকার কলমে
ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশন, কলকাতা
তখন অবিভক্ত বাংলা। অশিক্ষা, কুসংস্কারের নাগপাশে বন্দি গোটা সমাজ। মেয়েরা পর্দানশীন। তখন মেয়েদের লেখাপড়া শেখা ছিল বড় অপরাধ। সমাজ সংস্কারক তথা ব্রাহ্ম আন্দোলনের নেতা কেশবচন্দ্র সেনের চোখে পড়েছিল মেয়েদের এই দুর্দশার ছবি। মেয়েদের সামাজিক মুক্তির জন্য শুরু হল সলতে পাকানোর কাজ। মেয়েদের আগে মায়েদের জন্য চালু হল শিক্ষণ শিক্ষা প্রকল্প। তারপরই সংযুক্ত করলেন বালিকা বিদ্যালয়। ১৮৭১ সালের ১ জানুয়ারি ১৩ নম্বর মির্জাপুর স্ট্রিটে সূচনা হল ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনের।
অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে ছাত্রী জোগাড় করতে হতো। গৃহবন্দি মেয়েদের মুখবন্ধ খামে বাড়িতে প্রশ্নপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হতো। তারই নিরিখে ছাত্রীদের মূল্যায়ন করত স্কুল। এই স্কুলের প্রথম ব্যাচের ছাত্রীদের মধ্যে ছিলেন রাধারানি দেবী (রামতনু লাহিড়ীর ভ্রাতুষ্পুত্রী), বরদাসুন্দরী দেবী (সরোজিনী নাইডুর মা), রাজলক্ষ্মী সেন (ডাঃ প্রশান্ত সেনের মা), যোগমায়া গোস্বামী (বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী মা) সহ ১১ জন।
১৯১০ সালে স্কুলটির বর্তমান নামে রেজিস্ট্রেশন হয়। ১৯১১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯২৬ সালে কেশব সেনের জ্যেষ্ঠা কন্যা কোচবিহারের মহারানি সুনীতি দেবী পিতৃভবনটি কিনে নেন। ট্রাস্ট গঠন করে তা ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনকে দান করেন। তখনই স্কুলটি উঠে আসে শিয়ালদহ অঞ্চলে। আমৃত্যু ট্রাস্টিদের প্রধান ছিলেন ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়। কেশব সেনের এই ‘কমল কুটির’ অনেক মনীষীর চরণস্পর্শে ধন্য। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দেব ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। দূরের মেয়েদের জন্য আজও রয়েছে হস্টেলের ব্যবস্থা। সেখানে ৮০ জন ছাত্রী রয়েছে। হস্টেলের ইন-চার্জ আমাদের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা সমিতা ভৌমিক।
বর্তমানে স্কুলে প্রায় ৮৫০ ছাত্রী। স্কুলে পড়াশোনার মান ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বজায় থাকলেও বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। যেমন বাণিজ্য বিভাগে নেই স্থায়ী শিক্ষিকা। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগেও একই সমস্যা। সমস্যা রয়েছে স্মার্ট ক্লাস রুমের। শতাব্দী প্রাচীন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সুনামের সঙ্গে এগিয়ে যেতে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ সাহায্য করবেন এই আশাই রাখি।
ভাস্বতী ভট্টাচার্য,
প্রধান শিক্ষিকা