প্রত্যেকেই চেনা মুখ। বাড়ির ড্রয়িং রুমে তো নিত্য যাতায়াত! বাঙালির ডেলি সোপ জমিয়ে দিতে এঁঁদের জুড়ি নেই। কেউ মুখিয়ে আছেন ১৪ ফেব্রুয়ারির জন্যই, কেউ আবার এখনও সিঙ্গল! ব্যক্তিগত জীবনে ভ্যালেন্টাইন’স ডে নিয়ে কার ভাবনা কেমন? খোঁজ নিলেন মনীষা মুখোপাধ্যায়।

প্রমিতা চক্রবর্তী: ভ্যালেন্টাইন’স ডে বরাবরই আমাদের কাছে স্পেশাল। আর আমার কাছে এই বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি তো আরও বেশি করে উত্তেজনার। কারণ এই দিনই, অর্থাৎ কাল আমার আর রুদ্রজিতের রেজিস্ট্রি হচ্ছে। এটা একপ্রকার ডেস্টিনেশন রেজিস্ট্রি বলতে পারেন। আমরা সপরিবার কাল ভোরে বেড়িয়ে পড়঩ছি পুরুলিয়ার উদ্দেশ্যে। আসলে রুদ্রজিতদের বাড়ি ওখানেই। আমাদের এনগেজমেন্টের আয়োজন করা হয়েছে পুরুলিয়ায় একটি রিসর্টে। দুই পরিবারের লোকজনই সেখানে উপস্থিত থাকবেন। রুদ্রজিতই আমার জীবনের প্রথম প্রেম। তাই আমার প্রথম ১৪ ফেব্রুয়ারির স্মৃতিও রুদ্রজিতের সঙ্গেই। আমাদের সম্পর্ক আড়াই বছরের। গত বছর ছিল আমাদের যৌথজীবনের প্রথম ১৪ ফেব্রুয়ারি। রুদ্রজিৎ সেদিন আমাকে খুব চমকে দিয়েছিল। একে তো সারপ্রাইজ ডিনার ছিল। আর রেস্তরাঁটাও ভ্যালেন্টাইন’স ডে উপলক্ষে খুব সুন্দর করে সাজানো ছিল। একটা দারুণ ডাইন আউট হয়েছিল সেবার। এছাড়া লাভ কুশন, ফুল এসব দিয়ে রুদ্রজিৎ আমাদের সেই সন্ধেটা খুব সুন্দর করে তুলেছিল। লকডাউন শুরু হওয়ার পর দুই পরিবার ঠিক করে, সবকিছু একটু স্বাভাবিক হলে আমাদের এনগেজমেন্ট সেরে ফেলতে হবে। তখনই রুদ্রজিৎ এনগেজমেন্টের জন্য ভ্যালেন্টাইন’স ডে-টাই বেছে নেওয়ার কথা বলে। আমারও তাতে সায় ছিল। এই দিনটা দেখছি প্রতিবারই আমাদের জীবনে বেশ বড় ভূমিকা নিচ্ছে। এবছর এনগেজমেন্টই আমাদের একে অন্যকে উপহার।
 
দিব্যজ্যোতি দত্ত: আমি মন থেকে যে ভ্যালেন্টাইন’স ডে খুব মানি এমন নয়। আমার কাছে সব ক’টা দিনই ফাদার্স ডে, মাদার্স ডে, ভ্যালেন্টাইন’স ডে। যদি একান্তই ভ্যালেন্টাইন’স ডে পালন করতে হয়, তাহলে সেটা অবশ্যই সরস্বতী পুজোর দিন। এমনিতে ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটা আমার কাছে শুধুই নিজের ভালোবাসার জনের জন্য এমন মনে হয় না। যেসব মানুষকে আমরা নিজেদের মানুষ বলে মনে করি, পরিবার, বন্ধুবান্ধব সহ সকল ভালোবাসার মানুষের জন্যই আমার কাছে এই বিশেষ দিন। আমার বয়স এখন ২১, রিলেশনশিপেও সিঙ্গল। তবে সম্পর্কে জড়ানো নিয়ে আমার কোনও তাড়া নেই। হুড়োহুড়ি নেই। প্রেম একটা সুন্দর অ্যাক্সিডেন্ট। আমি সেই অ্যাক্সিডেন্টের অপেক্ষায় আছি বলতে পারেন। তবে হ্যাঁ, আমার প্রেমিকা বা স্ত্রী যদি এই দিনটা আলাদা করে উদযাপন করতে চান, আমি নিশ্চয় তাতে অংশ নেব। কিন্তু তাঁকেও বলব সরস্বতী পুজোয় আমার জন্য একটু সময় রাখতে! 

মানালি দে: ভ্যালেন্টাইন’স ডে বলে আমাদের কাছে, মানে আমার আর অভিমন্যুর কাছে আলাদা করে কিছু নেই। কোনও দিনই আমার কাছে এই দিনটাকে ‘আলাদা’ দিন বলে মনে হয়নি। ভ্যালেন্টাইন’স ডে পালন করতেই হবে এমন করে ভাবিনি কখনও। সারা বছরই যত্ন নেওয়ার আর ভালোবাসার দিন। অভিমন্যু নিজেও এই ব্যাপারে আমার সঙ্গে একমত। তবে আমাদের জীবনেও ১৪ ফেব্রুয়ারির একটা ভূমিকা আছে। ‘নিমকি ফুলকি’ বলে যে ছবিটা করতে গিয়ে আমাদের পরস্পরের সঙ্গে আলাপ, সেই ছবিটার শ্যুটিং শুরু হয়েছিল এই ১৪ ফেব্রুয়ারি। ছবির গল্প অভিমন্যুরই ছিল। পরিচালকও ছিল ও-ই। আর সেদিনই আমাদের দেখা ও আলাপের শুরু। তাই আমরা আলাদা করে ভ্যালেন্টাইন’স ডে পালন না করলেও এই তারিখটার ভূমিকা আমাদের জীবনে বেশ গভীর। 

নীল ভট্টাচার্য: সদ্য বিয়ে করেছি, এখন কৈশোর বা যৌবনের ভ্যালেন্টাইন’স ডে নিয়ে বলা যে কী ভয়ের! তা যাই হোক, সেসব সময় ভ্যালেন্টাইন’স ডে আমার ছিল না (থাকলেও ভুলে গিয়েছি!)। আমার আর তৃণার আলাপ দশ-এগারো বছরের। প্রেম বছর তিনেকের। এই তিন বছর ভালেন্টাইন’স ডে আমরা একসঙ্গে কাটিয়েছি। এবছর তো এই দিনেই আমাদের রিসেপশন। আমি আর তৃণা দু’জনেই এই দিনটা বেছে নিয়েছি, ভালোবাসার দিন বলেই। এছাড়া এবছর এই দিনটা মাসের দ্বিতীয় রবিবার। তাই ইন্ডাস্ট্রিতেও সকলের ছুটি থাকবে, অতিথিরা আসতে পারবেন। এত কিছু ভেবেই এই দিনটা বেছে নেওয়া। তাই এবছর ১৪ ফেব্রুয়ারি আমাদের কাছে খুবই স্পেশাল। যদিও আমরা কেউই আলাদা করে এই দিনটাই শুধু ভালোবাসার দিন এমন মানি না। আমার কাছে তো রোজই ভ্যালেন্টাইন’স ডে। তবে এই দিনটায় দেখা না হলে মনখারাপ হতো। তাই দেখাটা অবশ্যই করতাম। আর আমরা দু’জনেই খুব খেতে ভালোবাসি, নাচতে ভালোবাসি। তাই অন্যান্যবার এই দিনে ভালো নাইট লাইফ আছে এমন কোনও রেস্তরাঁয় খেতে যেতাম, নিজেদের মতো সময় কাটাতাম। একসঙ্গে সময় কাটানোই ছিল এই দিনে একে অন্যকে দেওয়া সেরা উপহার।