প্রায় ১৫ হাজার বছর আগে স্পেনের গুহায় কিছু গুহাচিত্রের সন্ধান মেলে। জুতোর প্রথম হদিশ সেখানেই পাওয়া যায় বলে মত ঐতিহাসিকদের। তবে ঋতুভেদে, স্থান-কাল-পাত্র বদলে গেলে যে জুতোও বদলে যায় তা তখন গুহামানবরা বুঝতেন না। প্রকৃতির সঙ্গে হাত মিলিয়ে যে জুতোতেও বদল আনতে হয়, তা বুঝতে তাদের সময় লেগেছে বিস্তর। একটা সময় বরফের হাত থেকে বাঁচতে মোটা খড়ের জুতো পরতেন তাঁরা। প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এমন জুতো পরার অভ্যাস এখন স্বভাবজাত হয়ে গিয়েছে। তাই শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষায় জুতোর ধরন বদলে গিয়েছে। যে জুতো গরমে চলে, প্যাচপেচে বর্ষার জলকাদায় তা একেবারেই চলবে না। তাই বর্ষা এলেই জুতো বদলের প্রয়োজন পড়ে। খেয়াল রাখতে হয়, জলকাদা খেলেও যাতে জুতোর সোল না নষ্ট হয়। আবার কাদা ছিটকে জামাকাপড়েও না লাগে। বারবার ধোয়াকাচা যায় এমন মেটেরিয়াল দিয়ে তাই প্রতি বছরই বর্ষার জুতো তৈরি করে জুতো প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলো। করোনা পরিস্থিতিতে এমনিতেই বাইরে বেরলেই এসে জুতোও ধুতে বাধ্য হচ্ছি আমরা প্রত্যেকেই। তাই ধোয়াকাচা করা সহজ ও দ্রুত শুকোবে এমন জুতোর চাহিদা এ বছর তুঙ্গে।
তাই এই বর্ষাতেও আপনার পায়ের আরাম অনুযায়ী বেছে নিতে পারেন পছন্দের জুতোজোড়া। অনলাইন হোক, বা মাস্ক স্যানিটাইজার নিয়ে এক ফাঁকে দোকান— যে কোনও উপায়েই কিনে ফেলতে পারেন পছন্দের জুতো। পাম্প শু, কিটো, ফ্লিপফ্লপ, রবার কভার, কী নেই সেই তালিকায়! ছোট-বড় নানা সংস্থাই এমন জুতো বাজারে এনেছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটির খোঁজ রইল আজ।
ফ্যাশন যখন ফ্লিপফ্লপে
বর্ষায় রবার বা প্লাস্টিকের ফ্লিপফ্লপের চাহিদা বরাবরই বেশি। তাই সব জুতো প্রস্তুতকারী সংস্থাই তাদের বর্ষার জুতোর তালিকায় এটি রাখেন। শ্রীলেদার্সও এ বছর তাদের বর্ষার জুতো হিসেবে ফ্লিপফ্লপে কয়েকটা নতুন নকশা এনেছে। লাল-কালো দুই রঙের মিশেলে তৈরি এই ফ্লিপফ্লপ একটা স্ট্র্যাপযুক্ত। সাধারণ হাওয়াই চটির মতো দেখতে এই ফ্লিপফ্লপ সিন্থেটিক মেটেরিয়ালের হওয়ায় জল-কাদা সবকিছুতেই যেমন পরা সম্ভব, তেমনই বারবার জল লাগলেও তা নষ্ট হবে না। দাম ১৮০ টাকা। তবে শুধু এই ধরনের ফ্লিপফ্লপই নয়, প্লাস্টিক ও সিন্থেটিক মেটেরিয়াল মেশানো আর এক ধরনের ফ্লিপফ্লপও শ্রীলেদার্স এ বছর এনেছে। ক্রিম ও বেগুনি রঙের মিশেলে সাদা ফুলেল নকশার এই জুতো মিলবে ১৪০ টাকায়।
ফ্লিপফ্লপ নিয়ে বাজার ধরতে পিছিয়ে নেই খাদিমসও। জল শোষণ করতে পারে এমন মেটেরিয়ালের একটু উঁচু জুতো বাজারে এনেছে তারা। উঁচু ফ্ল্যাট হিলের জুতোর সুবিধা, এতে অনেকটা জল জমে থাকা রাস্তাতে হাঁটলেও পা ভেজে না। মেটে হলুদের সঙ্গে লাল-সাদা পুরু স্ট্র্যাপ তো আছেই, সঙ্গে আবার স্ট্র্যাপে ফর-শো ক্লিপ আটকানো। ক্যাজুয়াল লুকের একটা জুতোকে স্টাইলিশ করে তুলেছে এমন স্ট্র্যাপ। তবে ক্যাজুয়াল লুক স্ট্যাপের নকশাও মিলবে খাদিমসে। প্লাস্টিকের স্ট্র্যাপে ফুলের নকশা দেওয়া ক্যাজুয়াল ফ্লিপফ্লপের খুব ভালো চাহিদা। দাম পড়ছে ৩৯৯ টাকা। অনলাইনেও কিনতে পারেন এমন জুতো।
ফ্লিপফ্লপের দারুণ কালেকশন এনেছে বাটাও। পুরুষদের জন্য তৈরি পুরো রবার মেটেরিয়ালের ফ্লিপফ্লপ দেখতেও স্মার্ট আর কাজেও দুর্দান্ত। গ্রে ও নেভি ব্লু মোটা স্ট্র্যাপের যেমন রয়েছে, তেমনই রবার মেটেরিয়ালের কালো স্লিপার্সও আছে তাদের তালিকায়। দাম যথাক্রমে ২৯৯ ও ৪৯৯ টাকা। এটা ছাড়াও অজন্তা, এলিট ইত্যাদি সংস্থাও এমন ফ্লিপফ্লপ রেখেছে তাদের তালিকায়। তার মধ্যে ছাপা নকশার অজন্তার ফ্লিপফ্লপ বেশ জনপ্রিয়। রবার ও সিন্থেটিক মেটেরিয়ালের এই সব জুতোর দাম ২০০-৪০০-র মধ্যে।
বাটা আবার মেয়েদের পার্টি লুক মনসুন শু এনেছে। ওয়াশেবল মেটেরিয়ালে বানানো ম্যাট লুকের বিস্কুট ও হালকা সবুজ রঙের স্লিপারের সরু স্ট্র্যাপটি বেশ নজরকাড়া। মিলবে ৩৯৯ টাকায়। ডক্টরস শু-এর সোলের মতো দেখতে ওয়াশেবল সোলের তৈরি আর একটি মডেলের জুতোর স্ট্র্যাপে রয়েছে পাথর বসানো। এমন নকশাদার জুতো বর্ষায় কোনও অনুষ্ঠান বা পার্টির জন্য বেশ ভালো। এখন লকডাউন চললেও, এমন মডেল সংগ্রহে থাকলে পরের বর্ষায় অনুষ্ঠান বা পার্টিতে সকলের নজর কাড়বে আপনার জুতোজোড়া।
স্কেডস ও বুট পরুন বর্ষাতেও
সাধারণ ফ্লিপফ্লপ ছেড়ে যদি একটু অন্য রকম ফ্যাশনেবল কিছু পায়ে গলাতে চান, তাও পাবেন শ্রীলেদার্সে। একেবারে স্কেডসের মতো দেখতে পাম্প শু বাজারে এনেছে তারা। সাদা ও লাল এই দুই রঙেই পিভিসি ও সিন্থেটিক মেটেরিয়ালের তৈরি জুতো বর্ষার জন্য খুবই ভালো। ফিতে থাকলেও তা বাঁধার ঝঞ্ঝাট নেই এই মডেলে। দাম মাত্র ২৪৫ টাকা। সহজে ধোয়া ও কাচা যায় এই জুতো। কাদা, জল খুব একটা ধরে না, সরেও সহজে। তাই সাদা রঙের হলেও তা নোংরা হওয়ার ভয় কম।
ওদিকে গোলাপি রঙের স্নিকার্স দিয়েই এবার মেয়েদের মন জয় করতে চাইছে বাটা। প্লাস্টিক মেটেরিয়ালের পাম্প শু ধরনের এই স্নিকার্সে সারা গায়ে ফুটো থাকায় তা দেখতে যেমন আকর্ষণীয় হয়েছে, তেমন জল ঝরে যাওয়ার উপায়ও এতে মজবুত হয়েছে। দাম পড়বে ৪৯৯ টাকা।
পুরুষদের ক্ষেত্রেও এমন রবারের ক্লগ শু পাওয়া যাচ্ছে বাটা, শ্রীলেদার্স, খাদিমস সহ নানা সংস্থাতেই। সেই ধরনের জুতোর গায়েও জল ঝরার ছিদ্র আছে। দাম পড়বে ৩০০-৫০০ টাকার মধ্যেই।
আবার নারী-পুরুষ উভয়েই পরতে পারেন, গামবুট স্টাইলের এমন ফ্যাশনেবল জুতো পাবেন অনলাইনে একটু ঢুঁ মারলেই। উডল্যান্ডস, নাইকি, মেট্রোর মতো সংস্থার দোকানেও এমন বুটের সন্ধান মেলে। ফিতে দেওয়া ও ফিতে ছাড়া দু’রকম নকশাই হয়। একসময় এমন জুতোর বেলায় শুধু কালো রঙের চল থাকলেও এখন লাল-নীল-পার্পল নানা রঙেই এমন জুতো মেলে। চকচকে পিভিসি মেটেরিয়ালের এমন বুটজুতোয় বর্ষায় জলে পা ডোবে না, অনেকটা জল জমা রাস্তায় হাঁটলে জুতোর ভিতরেও জল ঢুকে যাওয়ার ভয় থাকে না। চকচকে লেদার লুক হওয়ায় পার্টি বা জমকালো ওয়েস্টার্ন সাজের সঙ্গে দিব্য মানিয়ে যায় এমন জুতো। অনলাইন ও অফলাইন দু’জায়গাতেই নানা মডেল ও সোলের উপর নির্ভর করে খরচ। ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যেই ঘোরাফেরা করে এর দাম।
কিটোয় করুন বর্ষা জয়
তবে বর্ষার অন্যতম সেরা বাছাই কিটো। পাহাড়ে ওঠা হোক বা সাগরে পা ডোবানো, জংলা পথ হোক বা সমতলের রাস্তা— কিটো সব রাস্তাতেই সমান ওস্তাদ। হাল্কা ও গাঢ়, এমন দু’রকম রঙের কিটো পাওয়া যাচ্ছে শ্রীলেদার্সের মনসুন কালেকশনে। ঘিয়ে ও নীল রঙের, জল শোষণ করতে পারে এমন সোল দিয়ে বানানো কিটোয় রয়েছে জিন্স-লুক স্ট্র্যাপ। এটি জুতোকে আরও স্মার্ট করেছে। এই একটি কিটো রবার ও সিন্থেটিক সোল মিশিয়ে তৈরি। কালো ও নীলের এই মিশেলও দেখতে বেশ ভালো। দাম পড়বে ৪৯০ টাকা। বাটা, খাদিমস, অজন্তা ছাড়াও নানা সংস্থারই ছেলে-মেয়ে ভেদে নানা নকশার কিটো রয়েছে। কোথাও আবার দু’জনেই পরতে পারেন আছে এমন ডিজাইনও। সেই অনুযায়ী দামেরও রকমফের আছে। দাম পড়বে ৩০০-৬০০ টাকার মধ্যে।
খুদে পায়ে স্টাইল
বাবা-মায়ের কোলে উঠেই বেশি রাস্তা পার হতে হয় তো কী! তা বলে কি জুতো হবে না? আলবাত হবে। ছোটদের জুতোতেও বর্ষার নানা স্টাইল এনেছে বিভিন্ন সংস্থা। ক্লগ, মিউল, কিটো নানা ধরনের জুতোকেই রবার, পিভিসি ও সিন্থেটিক মেটেরিয়ালের বানিয়ে তা শিশুদের মনের মতো করে রংচঙে নকশার করে তোলা হয়েছে। কোথাও স্ট্র্যাপে জিন্স-লুক, কোথাও রবারের ফিতেতেই মনমাতানো নকশা। ছোটদের এমন ফ্যাশনেবল বর্ষার জুতো পাবেন ১৯৯-৫৯৯ টাকার মধ্যে।
জলকাদা থাক বা মুষল ধারাপাত, জুতো ও পায়ের ত্বক ভালো রাখতে শু-র‌্যাক ভরুক বর্ষার বাহারি জুতোয়। জলে ভিজে জুতোর চামড়া নষ্ট ও পা ভিজে থাকার ভয় ভেঙে যাক এ সব হাল ফ্যাশনের জুতোর হাত ধরেই।