শরীর-স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন। কর্মক্ষেত্রে উন্নতির সম্ভাবনা। গুপ্ত শত্রুতার মোকাবিলায় সতর্কতা প্রয়োজন। উচ্চশিক্ষায় বিলম্বিত ... বিশদ
‘কলকাতা আত্মিক’ প্রযোজিত গুলশনারা নির্দেশিত প্রথম নাটক ‘বাতিল চিঠি’-তে বারবার উঠে এসেছে আমাদের চারপাশের রাজ্য-রাজনীতি, ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক অতীতের স্পর্শকাতর ঘটনাগুলি। এসেছে রিজওয়ানুর, এসেছে নন্দীগ্রাম, আমলাশোল। সেই ঘটনার ছায়া কখনও পড়েছে তাতান-গুলশনারার সম্পর্কের ওপর। হয়তো বা ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হতে হয়েছে তাদের, বরণ করতে হয়েছে এমনকী মৃত্যুকেও! তবুও থেমে থাকেনি তাদের কথা! গুলশনারার কাছে হয়তো তাতান আজও বেঁচে আছে শুধু কথা বলার সুখটুকুর হাত ধরেই যে কথাগুলি হয়তো কখনওই আর লেখা হবে না কোনও পোস্টকার্ডে, কখনওই আর পৌঁছবে না তাতানের ঠিকানায়। তবু, সেই কথাগুলি ছিল, আছে আর থাকবেও তার সমস্ত মনজুড়ে।
আজকের এই মোবাইল, এসএমএস, হোয়াটস অ্যাপ, মেসেঞ্জার, ট্যুইটার ইনস্টাগ্রামের যুগে দাঁড়িয়েও ‘চিঠি’ নিয়ে এমন একটা নাটকের ভাবনা ভাবার জন্য নাট্যকার ও নির্দেশিকা গুলশনারাকে অজস্র ধন্যবাদ। সম্প্রতি তৃপ্তি মিত্র সভাঘরে ‘যাদবপুর মন্থন’-এর নাট্যোৎসবে অন্তরঙ্গ হয়ে মাটিতে বসা দর্শকদের সামনে উপস্থাপিত এই নাটক, দর্শকদের শুধু তৃপ্তিই দেয়নি, সেই সঙ্গে দিয়েছে আয়নায় নিজেদের একবার দেখে নেওয়ার চেতনাও।
গুলশনারা সু-অভিনেত্রী। নির্দেশনার জগতে ‘বাতিল চিঠি’ নিয়ে তাঁর প্রথম আবির্ভাব। সহ-অভিনেতা শশী গুহ এবং গুলশনারার নিজের অতি স্বাভাবিক অভিনয় মন ছুঁয়ে যায়। তবে নাটকের সংলাপ দর্শকদের শোনানোর স্বার্থেই হয়তো কখনও কখনও তাঁদের কণ্ঠস্বর আর একটু উঁচুপর্দায় যাওয়ার দরকার ছিল। মঞ্জসজ্জাটি (শমীককৃত) ছিল সহজ অথচ ব্যঞ্জনাময়। সামনে ছড়ানো অগুণতি শূন্য পোস্টকার্ড, একপাশে চিঠি লেখার টেবিল, কাগজ, পেন, আঠা, কাঁচি আর মাটিতে পড়ে থাকা একটি ছোট্ট পুতুল।
সৌমেনকৃত আলো ও অভিনবকৃত শব্দ যথাযথ। বেশ ভালো লেগেছে খালি গলায় জয়ের গাওয়া কখনও রবীন্দ্রসঙ্গীত, কখনও সুমনের গান, কখনও আবার হিন্দিগানের প্রয়োগটি।
নাটকের শেষে ‘পত্র দিও’ বলে যখন দেবাশিস, শায়ন, রণবীররা বাড়িয়ে ধরল এক-একটি শূন্য পোস্টকার্ড দর্শকদের দিকে, তাঁদের না বলা কথাগুলি লিখে জানাবার আবেদন নিয়ে, তখন সত্যিই মনে হচ্ছিল ‘বাতিল চিঠি’ আমাদের পৌঁছে দিয়েছে সেই চিঠি লেখার কালে— যে কালটা আমাদের অনেকের মনের মধ্যেই হয়তো আজও বেঁচে আছে একটা সুন্দর নস্টালজিক অনুভূতি নিয়ে। অথচ যে কালটাকে আমরা হয়তো হাজার চেষ্টা করেও ছুঁতে পারব না আর কোনও দিনও।