সঠিক বন্ধু নির্বাচন আবশ্যক। কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। কর্মক্ষেত্রে বদলির কোনও সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। শেয়ার ... বিশদ
কুলি দিয়ে শুরু করি?
সেই কবে কুলির দুর্ঘটনা ঘটে গেছে আজও বিষয়টার ঊর্ধ্বে উঠতে পারলাম না। যাই হোক, করবেন যখন ঠিকই করে ফেলেছেন তখন আমি আর বাধা দিই কী করে?
কুলির দুর্ঘটনাটা ঘটার পর আপনার মনে ঠিক কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?
ভয়ে, লজ্জায় কুঁকড়ে গিয়েছিলাম। বললে বিশ্বাস করবেন না, কুলির ওই দৃশ্যটাই আমার বলিউডে ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শট ছিল। প্রচুর হোমওয়ার্ক করে সেটে গিয়ে রেডি হয়ে শট দেব এমন সময় ওই দুর্ঘটনা। লোকের চোখে মুহূর্তের মধ্যে আমি ভিলেন তো বনেই গেলাম, একই সঙ্গে গুণ্ডা বদমাইশের তকমা লেগে গেল আমার গায়ে। আমার তো নিজেকেই নিজের ঘেন্না করত। অন্যান্যদের মতো আমিও তো অমিতাভ বচ্চনের বিশাল ফ্যান। উনি আমার হিরো। আমি মনে করি অত বড় অভিনেতা ভারতে তো বটেই গোটা বিশ্বেও কমই আছে। আর তাঁকেই কি না আমি অমন আহত করে বসলাম! এক মুহূর্তের জন্যে মনে হয়েছিল আমিই কেন আহত হলাম না। কিন্তু অ্যাক্সিডেন্ট তো হয়েই থাকে তাই না? কেউ কি আর ইচ্ছে করে কারও ক্ষতি করে? একই সঙ্গে একগাদা ভাবনা মনে ভর করেছিল। অমিতাভ বচ্চন আহত হলেন আর ট্র্যমা হল আমার! তবে ওই অ্যাক্সিডেন্টের পর আমার কেরিয়ার প্রায় শেষই হয়ে যেত যদি না অমিতাভ বচ্চন সুস্থ হয়ে আমায় ডেকে পাঠাতেন।
কী বললেন অমিতাভ বচ্চন আপনাকে ডেকে?
সেও আর এক অভিজ্ঞতা। ততদিনে মিডিয়া তো আমার যা ক্ষতি করার করেই দিয়েছে। আমি সিনেমা থেকে সরে দাঁড়াব কি না ভাবছি, নেহাত বাবা পরিচালক ছিলেন তাই মুখ রক্ষাটুকু হয়েছিল। এমন সময় অমিতাভ বচ্চন আমায় ফোন করে ডেকে পাঠালেন। আমি তো বকুনি খাব বলে তৈরি হয়েই গিয়েছিলাম। কিন্তু না, অমিতাভ বচ্চন আমাকে প্রথমেই বললেন, এমন হতেই পারে। অ্যাক্সিডেন্টের ওপর কারও কোনও হাত নেই ফলে এই নিয়ে যেন আমি আর না ভাবি। তারপর আমার কেরিয়ার প্ল্যান ইত্যাদি নিয়ে বহুক্ষণ আমার সঙ্গে আলোচনা করলেন। সব সেরে যখন বেরলাম ওঁর অফিস থেকে তখন নিজেকে অনেক হালকা লাগছিল।
বি আর চোপড়া প্রোডাকশনসের মহাভারত সিরিয়ালে দুর্যোধনের রোলটা কি এর পরেই পান?
একটার সঙ্গে অন্যটা হয়তো জড়িত ছিল না। তবে হ্যা, এর পরেই বি আর চোপড়ার অফিস থেকে আমায় ডেকে পাঠানো হয় দুর্যোধনের চরিত্রের অফার দিয়ে।
আপনি যে সম্প্রতি কলককাতায় রাবণ কি রামায়ণ নাটকে রাবণের ভুমিকায় অভিনয় করলেন এর আগে মহাভারতে দুর্যোধনের ভুমিকায় অভিনয় করেছিলেন তাছাড়াও ছবিতে আপনাকে ভিলেন হিসেবেই দেখা যায়। ভিলেনের চরিত্র কি আপনাকে বেশি টানে?
দেখুন অভিনেতার কাছে সবই চরিত্র মাত্র। আমরা যখন অভিনয় করি তখন হিরো বা ভিলেন হিসেবে বাছ বিচার করি না। বিভিন্ন ক্যারেক্টার হিসেবে নিজেকে স্থাপন করি। কে কোন চরিত্রে কতটা বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারবে তার ওপরেই সেই অভিনেতার সাফল্য নির্ভর করে। ফলে যে কোনও চরিত্র দর্শকের মনে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলাই আমর উদ্দেশ্য। সেটা ভালো না খারাপ অত ভাবার সময় কোথায়?
তবু প্রতিবারই ভিলেন কেন?
আমার চেহারা আর গলার আওয়ার শুনে মনে হয় পরিচালকরা আমায় ভিলেন ছাড়া কিছু ভাবতেই পারেন না। বেশ একটা গুণ্ডা গুণ্ডা ভাব আছে না আমার মধ্যে?
অভিনেতা না হলে কী হতেন?
বলা কঠিন, তবে মনে হয় ফিজিকাল ট্রেনার বা জিম ইনস্ট্রাক্টর গোছের কিছু হতাম।
আপনার ডায়েট সম্বন্ধে একটু বলুন না।
আমি সর্বভুখ। তবে নিরামিষ ভালোবাসি। আর সর্বভুখ বলেই সবই খাই, কিন্তু পরিমাণমতো। তবে আমার ফিটনেসের রহস্য এক্সারসাইজ। আমি ফিটনেস ফ্যানাটিক। শরীরচর্চা না করলে দিনটাই কাটতে চায় না।
আপনি যে রাবণ কি রামায়ণে রাবণের চরিত্রে অভিনয় করছেন এটা কতটা চ্যালেঞ্জিং বা একসাইটিং?
আপনাকে একটা প্রশ্ন করি, চ্যালেঞ্জ ভাবলেন কেন?
রামায়ণকে দর্শকের কাছে উলটোভাবে উপস্থাপন করবেন চ্যালেঞ্জ মনে হবে না?
না, কারণ উলটোভাবে রামায়ণকে দেখানো হয়নি। রামায়ণের এই পর্যালোচনাতেও রামই হিরো, রাবণই ভিলেন এবং রামায়ণের গল্পও বদল হয়নি। সীতা হরণ, রাবণবধ সবই হয়। কিন্তু এইসবের মাঝে রাবণের বক্তব্যটাকে আমাদের পরিচালক অতুল সত্য কৌশিক তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
আর একসাইটমেন্ট? সেটা তো হচ্ছে? নাকি তাও অস্বীকার করবেন?
একসাইটিং তো বটেই। আমরা এতদিন দেখে এসেছি যুদ্ধে যারা জেতে তারাই ইতিহাস রচনা করে। এই প্রথম যুদ্ধে যে হেরে গিয়েছে তার বয়ানটা শোনা যাবে। তাকেও তো আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া উচিত তাই না?
রাবণের চরিত্রের জন্য কেমন হোমওয়ার্ক করতে হয়েছে?
প্রচণ্ড হোমওয়ার্ক করতে হয়েছে। রাবণ চরিত্রটার বিভিন্ন স্তর খুঁজে বার করেছি। রাবণের শিবভক্তি, সংস্কৃতে তাঁর জ্ঞান, রুদ্রবীণা আবিষ্কার ইত্যাদি বিষয়গুলো খুঁটিয়ে পড়েছি। এছাড়াও চরিত্রটার ভেতর প্রবেশ করার চেষ্টা করেছি যতটা সম্ভব। নাটকটাতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংলাপ রয়েছে রাবণের মুখে যার মাধ্যমে রাবণের চরিত্রটা আরও ভালোভাবে ফুটে ওঠে সেই সংলাপগুলোকে সঠিকভাবে বলার চেষ্টা করেছি।
কেমন সংলাপ?
এই যেমন রাবণ সীতাকে হরণ করার পর যখন বলছেন, ‘রাম তোমায় সবসময়ই কোনও না কোনও স্বার্থে ভালোবেসেছে। প্রথমত নিজের বীর্য প্রমাণ করার জন্য তোমায় বিয়ে করেছে। এখন আমার কাছ থেকে তোমায় নিয়ে গিয়ে নিজের সুনাম রক্ষা করতে চায়। কিন্তু আমি সব সময়ই তোমায় নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসেছি। তবু তুমি রামের প্রেমে পাগল, রামের বিরহে কাতর। অথচ আমার ভালোবাসার মূল্য তোমার কাছে নেই।’ এমন সংলাপ রাবণের চরিত্রটাকে অন্য দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করতে বাধ্য করে। দর্শককে সেই দৃষ্টিভঙ্গি কতটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছি জানি না, তবে চেষ্টা অবশ্যই করেছি।
চরিত্রগুলোকে দর্শকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলেন কী করে?
আমার মনে হয় একটা চরিত্র গঠিত হয় সংলাপের মাধ্যমে। তাই যে কোনও চরিত্র করার সময় আমি সংলাপের ওপর ভীষণ গুরুত্ব দিই। কোন সংলাপ কীভাবে বলব এই নিয়ে পড়াশোনা করি। এই যেমন এই নাটকটার ক্ষেত্রেই ধরুন না, আমি রাবণের চরিত্রে অভিনয় করছি বলেই যে সব সংলাপ জোর গলায় রাগত স্বরে বলতে হবে তা নয়। রাবণের চরিত্রটা ফুটিয়ে তুলতে গেলে গলার মডিউলেশন করতে হবে। কোনও সংলাপে রাগ বা বিরক্তি থাকবে, কোথাও বা স্নেহ ঝরে পড়বে, কোথায় একটু দ্বিধা একটু শঙ্কা কাজ করবে আবার কোথাও প্রেম থাকবে। তবেই না ক্যারেক্টারের প্রতি জাস্টিস করা যাবে। তাছাড়া শুধু আমার চরিত্রটার ওপরই নজর দিলে চলবে না, অন্যান্য চরিত্রগুলোর প্রতিও নজর দিতে হয়।
কীরকম?
নাটকে অনেক কিছুই ততক্ষণাৎ করতে হয়। হয়তো আমার আগের অভিনেতা সংলাপ ভুলে গিয়েছেন বা সেই মুহূর্তে কোনও ইন্সট্যান্ট কাজ ঢুকিয়েছেন চরিত্রে তখন আমাকেও সেই মতো নিজেকে ফ্রেম করে নিতে হয়। এটা কিন্তু সিনেমায় বা সিরিয়ালে দরকার নেই। সেখানে টেক রিটেক অনেক ব্যাপার আছে। স্টেজে সে সুযোগ কোথায়?
কোন মাধ্যমে অভিনয় করতে সবথেকে ভালোবাসেন?
এই তিনটে ক্ষেত্র একে অপরের চেয়ে এতই আলাদা যে একটার সঙ্গে অন্যটার তুলনা অসম্ভব। তবু বলব নাটকে অভিনয় করার একটা অন্যরকম উত্তেজনা আছে। দর্শক কী ভাবছে সবটাই আমি সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পাই। সিনেমা বা সিরিয়ালের ক্ষত্রে তেমনটা হয় না। তাই নাটকের মজাটা অন্য ক্ষেত্রে পাই না।
কলকাতার দর্শকের সামনে অভিনয় কি এই প্রথম?
হ্যাঁ। কলকাতার দর্শক সম্বন্ধে অনেক কিছু শুনেছিলাম। তাদের নেওয়ার ক্ষমতা নাকি অতুলনীয়। গুণের বিচার ও কদরও তারাই সবচেয়ে ভালো করতে পারে। যা দেখলাম তাতে আমি অভিভূত।