তারাপদ অ্যান্ড কোং, নাম শুনলেই বোঝা যায় তারাপদর একটা সাম্রাজ্য আছে। হ্যাঁ, সত্যিই আছে। কিন্তু মজার কথা হচ্ছে তারাপদর সাম্রাজ্যের সদস্য সংখ্যা মাত্র এক। তারাপদর অভিন্ন হৃদয়ের বন্ধু বামাপদ। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, কোং মানে কোম্পানিটি কীসের? এটা আদতেও কোনও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নয়। বেকারত্বর জ্বালায় অস্থির তারাপদ আর বামাপদর পেটের খিদে মেটাবার ব্যবস্থা। পরিষ্কার হল না বিষয়টা তাই তো? আরও সহজে বলতে গেলে তারাপদ বেকার ও সুদর্শন। বামাপদও তাই। চাকরি নেই, কিন্তু খিদে তো আছে। তাই খিদে মেটাতে দু’জন মিলে একজন পাত্র, আরেকজন পাত্রের অভিভাবক সেজে পাত্রীপক্ষের বাড়িতে ভূরিভোজের ব্যবস্থা করত। সেই ব্যবসারই নাম তারাপদ অ্যান্ড কোং। ১৯৬০ সালে বিধায়ক ভট্টাচার্য ক্ষুধা নামে একটি নাটক লেখেন। ওঁরই নির্দেশনায় স্টার থিয়েটারে নিয়মিত অভিনীত হত। কালী বন্দ্যোপাধ্যায়, বসন্ত চৌধুরি এবং বিধায়ক ভট্টাচার্য অভিনয় করতেন। পরবর্তীকালে ক্ষুধা নামে একটি সিনেমা বের হয় এবং তাতেও এঁরাই ছিলেন। পরে অন্য থিয়েটার ক্ষুধা নামে একটি নাটক মঞ্চস্থ করে রণজিত চক্রবর্তীর নির্দেশনায়। এই তথ্য দেবার কারণ চণ্ডীতলা প্রম্পটারের ‘তারাপদ অ্যান্ড কোং’ এবং বিধায়ক ভট্টাচার্য মহাশয়ের ক্ষুধা গল্পের সাদৃশ্য। তারাপদ এবং বামাপদ বিভিন্ন পাত্রীপক্ষের বাড়িতে পাত্রী দেখার নামে ভূরিভোজ করতে যেত ঠিকই কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই ব্যবসার অবসান ঘটল গীতারানিকে দেখতে গিয়ে। কারণ তারাপদকে সত্যিই বিয়ে করতে হল গীতারানিকে। নাটকে বেশ কয়েকটি পুরনো দিনের জনপ্রিয় গানের ব্যবহার রয়েছে। গানগুলির পুরোটাই ব্যবহার করা হয়েছে যেটা বেমানান। গানের সঙ্গে তারাপদ এবং বামাপদর নাচ কোনওরকম যুগলবন্দি ঘটাতে পারল না। যে যার মতো ছন্দে নেচে গেল। তারাপদর ভূমিকায় গৌতম চট্টোপাধ্যায় প্রায় পৌরাণিক যুগের অভিনয় করেছেন। তবে গীতারানির ভূমিকায় দেবস্মিতা ঘোষ ব্যতিক্রমী। সুঅভিনেত্রী, আধুনিক অভিনয় সম্পর্কে অবগত। বামাপদর ভূমিকায় প্রদীপ রায়ের অভিনয় যথাযথ। আলো ভালো, রূপসজ্জাও যথাযথ। কিন্তু আবহ প্রক্ষেপণে ব্যালেন্সিংয়ে বিস্তর গণ্ডগোল রয়েছে। নির্দেশক গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের আরও একটু যত্নবান কাজ নিশ্চয়ই আমরা দেখতে পাব।

নাটক: তারাপদ অ্যান্ড কোং
প্রযোজনা: চণ্ডীতলা প্রম্পটার
পরিচালনা: গৌতম চট্টোপাধ্যায়