সন্তানের দাম্পত্য অশান্তিতে মানসিক চিন্তা। প্রেম-প্রণয়ে বিশ্বাস ভঙ্গ ও মনঃকষ্ট। ব্যবসার অগ্রগতি। ... বিশদ
দার্স ডে— মাকে ভালোবাসা জানানো, শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নিবেদিত গোটা দিন। এই দিনটি বঙ্গজীবনে আদৌ গুরুত্বপূর্ণ? প্রশ্ন রেখেছিলাম নৃত্যশিল্পী তনুশ্রী শংকরের কাছে। তাঁর মতে, ‘মাদার্স ডে তো একদিনের ব্যাপার নয়। মা ও সন্তানের জীবনের রোজকার গল্প। প্রথম যেদিন একটি মেয়ে মা হয়ে ওঠে, সেদিন থেকেই তার জীবনে শুরু হয় মাদার্স ডে। সন্তানকে প্রথম দেখা, তাকে কোলে নেওয়া, তার সুখে সুখী হওয়া, দুঃখে কাতর হওয়া, তার প্রতিটি সাফল্য নিজের মধ্যে অনুভব করা — এই সবের মধ্যেই ছড়িয়ে রয়েছে মাতৃত্বের তাৎপর্য। টুকরো টুকরো সুখ, দুঃখ, আদর, শাসন ঘিরেই তো মা ও সন্তানের সম্পর্ক। তাই মা ও সন্তানের জীবনে প্রতিদিনই মাদার্স ডে,’ বললেন তনুশ্রী। তবু একটা বিশেষ দিনে, বিশেষভাবে যদি মাতৃত্বের উদ্যাপন হয়, ক্ষতি কী? মাদার্স ডে মা ও সন্তানের জীবনে একান্ত জরুরি না হলেও একেবারে ফেলনাও তো নয়, মনে করছেন বর্ষীয়ান শিল্পী।
তনুশ্রীর কন্যা, শ্রীনন্দা শংকর মনে করেন প্রতিটি সন্তানের জীবনেই ‘মাদার্স ডে’ গুরুত্বপূর্ণ। সারাবছর মায়ের সঙ্গে সুখে দুঃখে কাটে। মান অভিমান, আড়ি ভাব কত কী-ই না হয়। তবু একটা নির্দিষ্ট দিনে মায়ের প্রতি ভালোবাসা ব্যক্ত করা সত্যিই প্রয়োজনীয়। ব্যক্তিজীবনে মায়ের প্রভাব প্রতি মুহূর্তে অনুভব করেন শ্রীনন্দা। বললেন, ‘খুব অল্প বয়সে বাবা (আনন্দ শংকর) চলে যান। তারপর থেকেই আমি আর মা একে অপরের জন্য রয়েছি। আমার ভালোমন্দ, সুখ-দুঃখের সঙ্গী মা। আমিও মায়ের পাশে থাকার চেষ্টা করি সারাক্ষণ। বাবার মৃত্যুর পর আমার অস্তিত্ব সংকট হয়েছিল। মনে হয়েছিল আমি হয়তো আনন্দ শংকরের যোগ্য উত্তরসূরি হয়ে উঠতে পারব না। কলকাতায় থাকাটাই চাপ সৃষ্টি করেছিল মনে। মুম্বই পাড়ি দিয়েছিলাম। অনেকে সমালোচনা করেন। আমি দায়িত্ব নিতে অক্ষম— ইত্যাদি অপবাদ দিয়েছেন। কিন্তু মা পাশে ছিলেন। আমার উপর বিশ্বাস রেখেছিলেন। এতটুকু চাহিদা ছাড়াই নিঃস্বার্থভাবে একমাত্র মা-ই সমর্থন করেছেন। আজ যা অর্জন করেছি সব মায়ের জন্য। প্রতিটা দিনই মায়ের জন্য। তাও বলব, মাদার্স ডে-র আলাদা গুরুত্ব আছে।’
তনুশ্রীর মতে, মা এমনই এক ব্যক্তিত্ব যাঁর উপর সন্তান সম্পূর্ণ নির্ভর করে, তিনিই সন্তানের আবদার মেটানোর নিরাপদ আশ্রয়। মা ও সন্তানের পারস্পরিক সম্পর্কে একটা শ্রদ্ধাও কাজ করে। সেই জন্যই মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক পৃথিবীর যে কোনও সম্পর্কের তুলনায় আলাদা। ব্যক্তিগতভাবে তাঁদের দু’জনের সম্পর্ক প্রতি মুহূর্তে বদলায়। বললেন, ‘এখনও বাড়িতে ঢুকে শ্রীনন্দা প্রথম প্রশ্ন করে মা কোথায়? এটাই মা হিসেবে আমার পরম প্রাপ্তি। তবে বয়সভেদে আমাদের সম্পর্কের সমীকরণ বদলেছে। ছোটবেলার মায়ের কথা শোনা সেই লক্ষ্মী মেয়ে এখন আমার অভিভাবক। আমার খামতি নিজের দক্ষতা দিয়ে পূর্ণ করে তুলছে শ্রীনন্দা। আবার নিজের দুঃখে আমারই কাছে আশ্রয় খুঁজে নিচ্ছে।’
তাঁরা দু’জন কীভাবে মাদার্স ডে উদ্যাপন করেন? এক্ষেত্রে মা ও মেয়ে দু’জনেই বললেন, ‘আমরা তো দু’জনে দুটো শহরে থাকি। তবু যদি কখনও মাদার্স ডে-তে একসঙ্গে থাকি তাহলে সারাদিন হইহই করে, কাটিয়ে দিই। একবার কাজের মাঝে ব্রেক নিয়ে ব্রেকফাস্ট ডেটে গিয়েছিলাম। কোনও এক বছর মাদার্স ডে-তে অলস ছুটি কাটিয়েছি। তবে যেখানেই থাকি, যাই করি, একে অপরকে ‘সেলিব্রেট’ করি আমরা। নতুনকে গ্রহণ করার ক্ষমতা আমার মায়ের চেয়ে বেশি কারও নেই’, বললেন শ্রীনন্দা। আর মায়ের চোখে মেয়ের চরিত্রের বৈশিষ্ট্য কী? তনুশ্রী বললেন, ‘ওর ভালোবাসার ক্ষমতা অসম্ভব। ব্যক্তি হোক বা পোষ্য শ্রীনন্দা সবার জন্য সারাক্ষণ ভাবছে। এটাই ওর সবচেয়ে বড় গুণ।’ এবছর মাদার্স ডে-তে বিশেষ উপহার তৈরি করেছেন শ্রীনন্দা। তনুশ্রী শংকর ডান্স অ্যাকাডেমির শাখা খুলছেন মুম্বইতে। ‘আনন্দ শংকর ঘরানার আরও বৃহৎ স্বীকৃতি দরকার। সেই উদ্দেশ্যেই মুম্বইতে স্কুল খুলছি। মা আসবেন মাসে একবার, মাস্টার ক্লাস নেবেন। বাকি সময় অন্য শিক্ষক থাকবেন। এটাই এবছর মাদার্স ডে-র উপহার’, বললেন শ্রীনন্দা। আর মা, কেমন উপহারের প্রত্যাশী? তনুশ্রী বলেন, ‘শ্রীনন্দা খুশি থাকুক, ও যা চায় তা সফলভাবে করুক, আমার কাছে তার চেয়ে বড় উপহার আর কী হতে পারে?’