সন্তানের দাম্পত্য অশান্তিতে মানসিক চিন্তা। প্রেম-প্রণয়ে বিশ্বাস ভঙ্গ ও মনঃকষ্ট। ব্যবসার অগ্রগতি। ... বিশদ
যে কোনও কাজই মন দিয়ে করা উচিত। নাহলে তা সম্পূর্ণ হয় না। পড়াশোনা, খেলাধুলো তো বটেই, এমনকী দুষ্টুমিতেও মন দেওয়া প্রয়োজন, জানালেন যোগাচার্য ডঃ বিপ্লব বর্মণ। তাঁর মতে সন্তানের দৈনন্দিন অভ্যাসের মাধ্যমেই তার মনোনিবেশ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা সম্ভব। এখন প্রশ্ন হল, কীভাবে বাচ্চাকে মনোযোগী করে তুলবেন? বিপ্লববাবু জানান, ‘শিশুর চার-পাঁচ বছর বয়স থেকেই যে কোনও ক্ষেত্রে তাকে মনোযোগী করে তুলতে হবে।’
তবে মনোযোগ বাড়ানোর কথা চিন্তা করার আগে বাবা মাকে বুঝতে হবে বাচ্চার মনোযোগের অভাব হচ্ছে কেন? সাধারণভাবে মনোযোগের অভাব দেখা দিলে বাচ্চাকে বকুনি দেওয়া হয়, ভয় দেখানো হয়— এইভাবে তার মনোযোগ ফেরানোর চেষ্টা করেন বাবা মা। এরপরেও যখন সে মন দিতে ব্যর্থ হয় তখন তার স্বভাবের অতিরিক্ত চাঞ্চল্যকে এর জন্য দায়ী করা হয়। বিষয়টা কিন্তু অত সহজ নয়। শিশুর শরীরে যদি ভিটামিন সি বা ডি-র অভাব থাকে তাহলে তার মস্তিষ্ক সঠিক কাজ করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে মনোযোগের অভাব দেখা দিতে পারে। এছাড়াও বাচ্চা দিনে নির্দিষ্ট মাত্রায় জল না খেলে (মোটামুটি ২ থেকে ৩ লিটার) তার মস্তিষ্ক অযথা ক্লান্ত হবে এবং তার মনোযোগের ঘাটতি দেখা দেবে। অনেক বাচ্চার শরীরে প্রয়োজনীয় প্রোটিনের অভাব থাকে। সেক্ষেত্রেও তার মনোযোগ ব্যহত হয়। আর একটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হল দৃষ্টি। অনেক ক্ষেত্রে বাচ্চা স্কুলে বোর্ড দেখতে পায় না, তখন সে অবচেতনেই বিষয়টা এড়িয়ে যেতে চায়। বাবা মা সেটাকেই তার অমনোযোগী আচরণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। বাচ্চার মনোযোগের অভাব দেখা দিলে তার স্বাস্থ্যের দিকে বাবা মাকে নজর দিতে হবে। তবে মনোযোগ বাড়ানো একটা দক্ষতা। এটা প্রতিদিন অভ্যাসের মাধ্যমে বাড়ে।
এবার মনোযোগের বিস্তারের কথায় এলেন ডঃ বর্মণ। কনসেনট্রেশনের তিনটে দিক রয়েছে। প্রথম: কতক্ষণ মনোনিবেশ করা যাচ্ছে, দ্বিতীয়: কোন জিনিসের উপর মনোনিবেশ করা যাচ্ছে এবং তৃতীয়: মনোনিবেশ করার সময় কোনও একটা বিষয়ের উপর কতক্ষণ স্থিরভাবে নিজের চিন্তাকে আটকে রাখা যাচ্ছে। এই তিনটে দিক একত্রিত করে যে মনঃসংযোগ বৃদ্ধি, তাতে যোগাসন খুবই কার্যকর। এর মাধ্যমে কোনও ভাবনা বা বস্তুর উপর মনকে আটকে ফেলা যায়। তার জন্য কিছু আসন রয়েছে। প্রথমেই বলি ব্রিদিং এক্সারসাইজের কথা। তার মধ্যে প্রাণায়ামও থাকবে। এরপর আসবে ধ্যান। মনঃসংযোগ বাড়ানোর এর চেয়ে ভালো উপায় আর নেই। কিন্তু চোখ বন্ধ করে মনকে চিন্তা মুক্ত করতে বললে বাচ্চারা তা করতে পারে না। সেক্ষেত্রে তাদের মনকে এক জায়গায় ধরে রাখার জন্য মন্ত্রোচ্চারণ করানোর পদ্ধতি নেওয়া যেতে পারে। যেমন ‘ওঁ’ মন্ত্রোচ্চারণ করতে করতে মনকে চিন্তামুক্ত করা যেতে পারে। এতে ব্রিদিং নিয়ন্ত্রণে আসে। ফলে মন শান্ত হয়।
খেলার ছলেও মনোযোগ বাড়ানো যেতে পারে, বললেন বিপ্লববাবু। যেমন একটা বালতিতে বল ফেলা, চামচে লেবু নিয়ে হাঁটা, মাথায় বই নিয়ে হাঁটা, একটা বিন্দুতে চোখ আটকে রাখা ইত্যাদি অভ্যাস করাতে হবে।
বাচ্চা যদি গানবাজনার সঙ্গে যুক্ত থাকে অথবা তা শোনার অভ্যাস থাকে তাহলেও কিন্তু মনঃসংযোগ বাড়ে। আর একটা বিষয় হল, এক সময়ে একটা কাজে মন দেওয়া। অর্থাৎ যখন স্নান করছি তখন শুধু স্নানেই মন দেওয়া, যখন জল খাচ্ছি তখন তাতেই সম্পূর্ণ মন দেওয়া। এইভাবে মনঃসংযোগ বাড়িয়ে তুলে তারপর যদি তাকে আরও উন্নততর কাজে ব্যবহার করা যায়। পড়াশোনার ক্ষেত্রেও এতে বেশি ফল পাওয়া যাবে। মনঃসযোগ বাড়ানোর জন্য একটা শিডিউল তৈরি করতে হবে। কুড়ি মিনিটের একটা সময় মেপে নেওয়া ভালো। প্রথমে একটু ওয়ার্ম আপ প্রয়োজন। যেমন একটু স্পট জগিং, স্ট্রেচিং ইত্যাদি। তারপর আসনে আসতে হবে তার মধ্যে পদ্মাসন, অর্ধকূর্মাসন, শশঙ্গাসন ইত্যাদি অভ্যাস করতে হবে। এরপর আসবে প্রাণায়াম এবং একদম শেষে আসবে ধ্যান। এইভাবে ক্রমশ ধীর লয়ে বাচ্চার মনঃসংযোগ বাড়ানো সম্ভব।