কর্মলাভের যোগ আছে। ব্যবসায় যুক্ত হওয়া যেতে পারে। কর্মক্ষেত্রে সাফল্য আসবে। বুদ্ধিমত্তার জন্য প্রশংসা জুটবে। ... বিশদ
মা হওয়ার পর খেলায় ফিরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নজির বিশ্ব ক্রীড়া দুনিয়ায় অনেক রয়েছে। কিন্তু ভারতীয়দের মধ্যে তিনিই প্রথম যিনি এই বিরল নজির গড়লেন। তিনি হলেন ভারতের অন্যতম সেরা মহিলা দাবাড়ু কোনেরু হাম্পি। টেনিস জগতেও মা হওয়ার পর চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ইংল্যান্ডের মার্গারেট কোর্ট, অস্ট্রেলিয়ার ইভান গুলসন, বেলজিয়ামের কিম ক্লিস্টার্স। আর এখনও লড়ে যাচ্ছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেরেনা উইলিয়ামস। ট্রাক অ্যান্ড ফিল্ড অ্যাথলেটিক্সে ২০১৯ সালের শেষের দিকে মা হওয়ার পর ফিরে এসে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন জামাইকার কিংবদন্তি অ্যাথলিট শেলি অ্যান ফ্রেজার প্রাইস। সোনা জিতেছিলেন তিনি ১০০ মিটার দৌড়ে এবং ৪×১০০ মিটার রিলে রেসে। এই তালিকায় নবতম সংযোজন ভারতের গ্র্যান্ডমাস্টার, কোনেরু হাম্পি।
মাত্র পনেরো বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব পেয়ে বিশ্ব দাবায় বড় চমক দেন কোনেরু। ২০১৬ সালে তিনি দাবার জগৎ থেকে সরে যান। ২০১৮ সালে তিনি আবার দাবার বোর্ডে ফেরেন এবং এই মুহূর্তে স্বমহিমায় বিরাজমান। অনেকে বলেছিলেন, কোনেরুর পক্ষে আবার সাফল্য পাওয়া মুশকিল। কিন্তু সমালোচকদের মুখে ছাই দিয়ে বিশ্ব দাবায় নিজের নাম উজ্জ্বল করেছেন হাম্পি। চেষ্টাই এনেছে তাঁর রাজকীয় প্রত্যাবর্তন। ‘বিশ্ব র্যাপিড দাবায় চ্যাম্পিয়ন হলেন অন্ধ্রপ্রদেশের এই গ্র্যান্ডমাস্টার। মহিলা বিশ্ব দাবায় ছয় নম্বর চ্যাম্পিয়ন তিনি, ভারতীয়দের মধ্যে প্রথম। ২০১২ সালে প্রথম-চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন বুলগেরিয়ার স্টেফানোভা। এবার ভারতের হাম্পি বসলেন সেই চেয়ারে।
খেতাব জয়ের দিন প্রথম দিকে আট পয়েন্ট নিয়ে অনেকটাই পেছনে ছিলেন হাম্পি। কিন্তু একটি জয় এবং একটি ড্রয়ের সুবাদে হাম্পি উপরে উঠে আসেন। তারপর একটা সময় প্রথম তিন দাবাড়ু একই পয়েন্টে দাঁড়িয়ে গেলেন। ফলে ম্যাচের নিষ্পত্তি হয় প্লে-অফে। আর প্লে-অফে এসেই শেষ হাসি হাসলেন হাম্পি। অথচ প্রথম গেমেই হেরে বসেছিলেন তিনি। তবে দ্রুত সেই ধাক্কা কাটিয়ে দ্বিতীয় গেম জিতে নিয়ে ম্যাচ টাই করে দেন। তারপর নির্ণায়ক রাউন্ডে রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জয় হয় কোনেরু হাম্পির।
হাম্পির সাফল্যে উচ্ছ্বসিত গ্র্যান্ডমাস্টার দিব্যেন্দু বড়ুয়া। তাঁর কথায়, ‘এটা অবিশ্বাস্য সাফল্য, দুর্দান্ত ব্যাপার। নারীশক্তির জয়। প্রচার থেকে দূরে থেকে বছরের শেষে হাম্পি যা করল, সেটা আগামীদিনে সব মেয়েকেই উৎসাহ জোগাবে।’ আর বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বিশ্বনাথন আনন্দের কথায়, ‘দাবাটা খুব ভালো বোঝে হাম্পি, পজিশনাল গেমে ও খুবই শক্তিশালী, উদ্ভাবনী ক্ষমতা রয়েছে। ঠান্ডা মাথার জন্যই এই সাফল্য অর্জনে সক্ষম হল হাম্পি। র্যাপিড ফরমাটে ভালো না খেলতে পারলে কেউ চ্যাম্পিয়ন হতে পারে না। এই সাফল্য ওকে আগামীদিনে আরও অনেক এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর কোনেরু হাম্পি বলেছেন, ‘এটা আমার কাছে অপ্রত্যাশিত ফল। একটা স্বপ্নের মুহূর্ত। অনেক দিন ধরে এই মুহূর্তটার জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। টেনশন হচ্ছিল, টাইব্রেকারে দ্বিতীয় গেমের আগে চাপ বেড়ে গিয়েছিল, কিন্তু চাপ সামলে, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি।’ এর আগে ২০১২ সালে কোনেরু হাম্পি ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন। বর্ষশেষে কন্যা ভাগ্যে সোনা জুটল মায়ের। আর নতুন বছরের আরম্ভেই, সাড়া জাগালেন তিনি। বিশ্ব র্যাপিড দাবায় প্রথম ভারতীয় মহিলা চ্যাম্পিয়ন হয়ে হাম্পি বলেছেন, ‘এই সাফল্য আমাকে আগামী দিনে আরও এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগাবে।’ রাশিয়ার মাটিতে সবার সেরা হয়ে বছরটা শেষ করলেন ভারতের অন্যতম সেরা, প্রতিভাময়ী দাবাড়ু কোনেরু হাম্পি।