উচ্চতর বৃত্তিমূলক শিক্ষা লাভের জন্য নামী স্বদেশি বা বিদেশি প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পেতে পারেন। অর্থকর্মে উন্নতি ... বিশদ
ভারতে চায়ের আমদানি ঘটেছিল ব্রিটিশদের হাত ধরে। এই তথ্যটি সর্বজনবিদিত। ১৭৭৪ সাল নাগাদ ওয়ারেন হেস্টিংস চীন থেকে চায়ের পাতা ও বীজ এনে চাষ করার আদেশ দিয়েছিলেন ভুটানের ব্রিটিশ দূত জর্জ বোলগেকে। সেই উৎপাদন ছিল নেহাতই পরীক্ষামূলক। এর বেশ কয়েক বছর পর ১৭৮০ সাল নাগাদ রবার্ট কিড আবারও চীন থেকে চায়ের দানা এনে তা ভারতের অসমে চাষ করেন। তবে তার প্রায় কয়েক দশক বাদে ব্রহ্মপুত্র নদের কিনারে বুনো চা গাছের ফলন লক্ষ করেন অন্য এক ব্রিটিশ আধিকারিক রবার্ট ব্রুস। অদ্ভুত কাণ্ড, এই বুনো গাছগুলো দিব্য বেড়ে উঠলেও চীনে চা গাছের চারা ভারতের কড়া রোদ উপেক্ষা করে মোটে বেড়ে উঠতে পারছিল না। আর তখনই চীনে চায়ের বীজগুলো অন্যত্র ফলানোর পরিকল্পনা করেন তৎকালীন ব্রিটিশ বড়লাট। ভারতের পূর্বাঞ্চলে হিমালয়ের পার্বত্য এলাকায় শুরু হয় চায়ের চাষ। অসম এবং দার্জিলিং দিয়ে যে চাষ শুরু হয়েছিল তা-ই পরে কুমায়ুন হিমালয়েও ছড়িয়ে পড়ে।
ভারতে কফির আগমন ঘটেছিল এক সুফি সন্ন্যাসীর হাত ধরে। ১৭০০ খ্রিস্টাব্দের গোড়ার দিকে পশ্চিম এশিয়ার ইয়েমেন থেকে কফির দানা নিয়ে ভারতে এসেছিলেন সুফি সন্ন্যাসী বাবা বুদান। সেই দানা গুঁড়ো করে তা ফুটন্ত জলে গুলে এক তিতকুটে তরল তৈরি করেন তিনি। পরবর্তীতে কফির নানা ধরন দক্ষিণ ভারতের মাদ্রাজ বা চেন্নাইতে চাষ শুরু হয়। এরও কয়েক দশক পর গোটা দাক্ষিণাত্যেই ছড়িয়ে পড়ে কফির চাষ।
চা এবং কফি দুটোকেই ভারতে জনপ্রিয় করেছে বিদেশিরা। তবু আমাদের দেশে এই পানীয় দু’টির জনপ্রিয়তায় কোনও ভাটা পড়েনি। কাফে এবং টি পার্লার এখনকার নব্য তরুণ তরুণীদের আড্ডার জনপ্রিয় ঠিকানা হয়ে উঠেছে। আর শুধু এখনই বা বলি কেমন করে? চায়ের কাপে তুফান তোলা তো বাঙালিদের বহুকালের অভ্যাস। চলুন কফি ও চা চর্চার জনপ্রিয় ঠিকানাগুলো জেনে নেওয়া যাক।
অরুণ টি স্টল
দক্ষিণ কলকাতার এই ছোট্ট দোকানে চায়ের সঙ্গে টা-এর কম্বো খুবই জনপ্রিয়। নানা ধরনের শিঙাড়া ও কচুরির সঙ্গে চায়ের কম্বো পাবেন এখানে। এছাড়াও কেশর চা, প্লেন দুধ চা সবই পাবেন।
টি চায়ে
বাইপাসের ধারে এই টি স্টলে বিখ্যাত আদা চা, মশলা চা, লেমন চা, এলাচ চা, কেশর চা ইত্যাদি। মুম্বই স্টাইলে কাটিং চা পাবেন এখানে। এই চা পশ্চিম ভারতের আদলে পরিবেশন করা হয় এখানে।
বলওয়ান্ত সিং ইটিং হাউস
ভবানীপুরের এই ধাবা স্টাইল রেস্তরাঁয় রোজ সকালে চা-পিপাসুদের ভিড় জমে যায়। বিশেষ কদর রয়েছে কেশর চা, এলাচ চা, ডাবল দুধ চা, মশলা চা, আদা চা ইত্যাদির। গতানুগতিক চা ছাড়াও নব্য তরুণ তুর্কিদের কাছে জনপ্রিয় লেমন মিন্ট টি, পিচ প্যাশন আইসড টি, ওয়াটারমেলন আইসড টি ইত্যাদিও। পাবেন নানা স্বাদের কফিও।
মহারাজ
এখানে পাবেন কেশর চা, স্পেশাল দুধ চা, মিল্ক কফি ইত্যাদি। বাটার টোস্ট, হিঙের কচুরি, শিঙাড়া সহযোগে চায়ের কদরও এখানে নেহাত কম নয়।
নান দোসা পাও
এখানে নানা স্বাদের কফি জনপ্রিয়। দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত ফিল্টার কফি পাবেন এখানে। এছাড়া এখানকার মশলা চাও বিশেষ জনপ্রিয়। মশলা চায়ের মধ্যে এলাচ চা পাবেন এখানে। লেমন টি, জিঞ্জার টিও পাবেন।
এলাচ চা
উপকরণ: দুধ ১ কাপ, এলাচ গুঁড়ো চা চামচ, চায়ের পাতা চা চামচ (কড়া লিকার হয় এমন পাতা ব্যবহার করতে হবে), জল ২ কাপ, চিনি স্বাদ অনুযায়ী।
পদ্ধতি: একটা অ্যালুমিনিয়ামের চায়ের মগে জল নিয়ে ফুটতে দিন। একবার ফোটার পর তাতে চা পাতা দিন। গ্যাস সিম করে চা পাতা জলের সঙ্গে ফোটান। এবার একে একে দুধ, এলাচ গুঁড়ো, চিনি ফুটন্ত চায়ে মেশান। সবটা নেড়ে মিশিয়ে ঢিমে আঁচে সবটা ঢাকা দিয়ে ফুটতে দিন। মিনিট পাঁচেক ফোটার পর গ্যাস বন্ধ করে দিন। খানিকক্ষণ ওই অবস্থায় রেখে দিন। তারপর ঢাকা খুলে ছেঁকে নিন। পরিবেশন করুন গরমাগরম এলাচ চা।
ফিল্টার কফি
উপকরণ: কফি পাউডার ৩ চা চামচ, জল কাপ, দুধ ১ কাপ, চিনি পরিমাণ মতো।
পদ্ধতি: একটা পাত্রে জল নিন। তা ফুটে উঠলে আঁচ থেকে নামিয়ে তাতে কফির গুঁড়ো মেশান। ভালো করে গুলে নেবেন। কফির পাউডার যেন জলে সম্পূর্ণ গুলে যায় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। তারপর তা চাপা দিয়ে রেখে দিন খানিকক্ষণ। এবার অন্য একটা পাত্রে দুধ ফুটিয়ে নিন। তাতে পরিমাণ মতো চিনি মেশান। বেশ ফেনা হওয়া পর্যন্ত ফোটাবেন। এবার এই ফুটন্ত দুধ আস্তে আস্তে কফিতে ঢেলে দিন। ঢালতে ঢালতেই তা মেশাতে থাকুন। দুধ আর কফি একসঙ্গে মেশার পর তা ঢালা উপুড় করে বার দুয়েক আরও মেশান। এতে উপর থেকে একটা ফেনা ভাব তৈরি হবে। যদি দু’বারের বেশিও ঢালা উপুড় করেন ক্ষতি নেই। এবার স্টিলের গ্লাস স্টিলের বাটির উপর বসিয়ে তাতে কফি ঢেলে দিন। গরম গরম পরিবেশন করুন।
নিউ নাস্তা
এখানে দক্ষিণ ভারতীয় স্ন্যাক্স খুবই জনপ্রিয়। সঙ্গে পাবেন নানা রকম চা ও কফি। তার মধ্যে রয়েছে কেশরিয়া চা, হট কফি, কোল্ড কফি, মশলা চা।
হাংগারপ্যাংস
সল্টলেকের এই টি স্টলে পাবেন চায়ের নানা রকম। তার মধ্যে রয়েছে আদা চা, কেশর চা, তন্দুরি চা ইত্যাদি।
ব্লু টোকাই
কফির জন্য জনপ্রিয় এই কাফে। মেনুতে রয়েছে ভিয়েতনামি আইসড কফি, কফি মিল্কশেক, কফি টনিক, কাপুচিনো কফি, আইসড আমেরিকানো, আইসড লাতে, আইসড কাপুচিনো ইত্যাদি।
রোস্টারি কফি হাউস
এই কফিশপে ফ্লেভারড কফি পাবেন। ক্র্যানবেরি কফি, ব্রাউনি ব্লেন্ড কফি, আইসক্রিম ব্লেন্ড কফি, চকোলেট ব্লেন্ড কফি, নিউটেলা ব্লেন্ড কফি, লিচি কফি, ওরিও ব্লেন্ড কফি, আইস পোর ওভার কফি, কিউই কফি, সিনামন লাতে, কার্ডামম লাতে সহ নানা স্বাদ ও গন্ধের কফি পাবেন এখানে।