গুরুজনের চিকিৎসায় বহু ব্যয়। ক্রোধ দমন করা উচিত। নানাভাবে অর্থ আগমনের সুযোগ। সহকর্মীদের সঙ্গে ঝগড়ায় ... বিশদ
স্বামী অভেদানন্দর আশৈশব বেদান্ত দর্শনের প্রতি আগ্রহ। বেদান্ত মতকে তিনি গভীর নিষ্ঠা ও অধ্যবসায় সাধনার দ্বারা আয়ত্ত করেছিলেন। জাগতিক স্থূল চিন্তা-ভাবনাকে পরিহার ক’রে তিনি সূক্ষ্ম বৈদান্তিক বিবেক-বিচারে থাকতেন সারাক্ষণ মগ্ন। বেদান্তের সূক্ষ্ম আত্মতত্ত্বে যাঁর মন নিমগ্ন তাঁর তো দেহতত্ত্বে অনাগ্রহ আসাই স্বাভাবিক। এই প্রসঙ্গেই শশী, মাস্টার, রাখাল প্রভৃতির যে কথোপকথন শ্রীরামকৃষ্ণকথামৃতে বর্ণিত হয়েছে। “শশী—কালী-তপস্বী শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে বলেছিলেন—কি হবে আনন্দে? ভীলদের তো আনন্দ আছে। অসভ্য হো-হো ক’রে নাচছে-গাইছে।
রাখাল—উনি বলতেন, সে কি? ব্রহ্মানন্দ আর বিষয়ানন্দ এক? জীবেরা বিষয়ানন্দ নিয়ে আছে। বিষয়াসক্তি সব না গেলে ব্রহ্মানন্দ হয় না। একদিকে টাকার আনন্দ, ইন্দ্রিয় সুখের আনন্দ, আর একদিকে ঈশ্বরকে পেয়ে আনন্দ। এই দুই কখনও সমান হতে পারে? ঋষিরা এই ব্রহ্মানন্দ ভোগ করেছিলেন।
মাস্টার—কালী এখন বুদ্ধদেবের চিন্তা করেন কিনা তাই সব আনন্দের পারের কথা বলছেন।
রাখাল—তাঁর কাছেও বুদ্ধদেবের কথা তুলেছিল। পরমহংসদেব বললেন, বুদ্ধদেব অবতার, তাঁর সঙ্গে কি ধরা? বড় ঘরের বড় কথা। কালী বলেছিল, তাঁর শক্তি তো সব। সেই শক্তিতেই ঈশ্বরের আনন্দ আর সেই শক্তিতেই তো বিষয়ানন্দ হয়—
মাস্টার—ইনি কি বললেন?
রাখাল—ইনি বললেন, সে কি? সন্তান উৎপাদনের শক্তি আর ঈশ্বরলাভের শক্তি কি এক?
স্বামী অভেদানন্দ তাঁর অলৌকিক আচার্য শ্রীরামকৃষ্ণর কৃপায় ব্রহ্মজ্ঞানের অপার্থিব আনন্দ ও অনুভূতি লাভ ক’রে ধন্য হয়েছিলেন এবং পরে প্রচার ও লোকশিক্ষার জীবনেও তিনি ভারতের ও পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশের শত-সহস্র মানুষের হৃদয়কে চরমপ্রাপ্তি ও চরমশান্তি-স্বরূপ আত্মজ্ঞানের বা ব্রহ্মজ্ঞানের আলোকে প্রদীপ্ত করেছিলেন। বেদান্তশাস্ত্র অভেদানন্দর জীবনে মূর্ত ও প্রাণময় হয়েছিল তাঁর প্রেমময় আচার্যদেবের পুণ্য ও দিব্য আশীর্বাদে।কিশোর বয়সে কালীপ্রসাদ গৌরমোহন আঢ্যের কলকাতা ওরিয়েন্টাল সেমিনারীতে এন্ট্রান্স ক্লাসে পড়বার সময় ভট্টি, রঘুবংশ ও কুমারসম্ভব প্রভৃতি কাব্য এবং ভগবদ্গীতা, পাতঞ্জলদর্শন ও শিবসংহিতাদি ধর্মশাস্ত্র অত্যন্ত প্রীতি ও আগ্রহের সঙ্গে অধ্যয়ন করেছিলেন। ১৮৮৩ সালে, অ্যালবার্ট হলে এক সভায়, পণ্ডিত শশধর তর্ক-চূড়ামণির হিন্দুধর্ম সম্পর্কে বক্তৃতা শুনে যোগসাধন করার জন্য অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। যোগসাধনায় ব্রতী হবার জন্য কালীপ্রসাদের অনুসন্ধিৎসু মন অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে উঠলো। সহপাঠী যজ্ঞেশ্বরের পরামর্শে, তিনি একদিন উপস্থিত হলেন দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরে, মনে একান্ত ইচ্ছা শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে সাক্ষাৎ। মন্দিরে পৌঁছে শুনলেন, শ্রীশ্রীঠাকুর গেছেন কলকাতায়, ফিরতে রাত হবে। ঐ দিনই দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরে কালীপ্রসাদ পরিচিত হন ভবিষ্যতের গুরুভাই শশীর সঙ্গে। দুইজনে নানা কথাবার্তায় সারাটা দিন অতিক্রান্ত করলেন। মন্দিরে সন্ধ্যারতি শেষ হল। রাত্রি ন’টার সময়ে শ্রীশ্রীঠাকুর কলকাতা থেকে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে ফিরলেন। কালীপ্রসাদের সঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণের এই প্রথম মিলন।