গুরুজনের চিকিৎসায় বহু ব্যয়। ক্রোধ দমন করা উচিত। নানাভাবে অর্থ আগমনের সুযোগ। সহকর্মীদের সঙ্গে ঝগড়ায় ... বিশদ
শ্রীকৃষ্ণের খুল্লতাত দেবভাগের আত্মজ শ্রীমান্ উদ্ধব। বাল্যাবধি উদ্ধব কৃষ্ণভক্ত। বয়স তার যখন মাত্র পাঁচ, তখন হইতে সে কৃষ্ণপূজায় নিবিষ্টচিত্ত। কৃষ্ণকে না খাওয়াইয়া সে অন্ন পান মুখে তুলে না। বাল্যে যখন কৃষ্ণের ধ্যানে বসিত সেই বালক, তখন লুপ্ত হইয়া যাইত তার বাহ্যস্মৃতি। আহারের জন্য তাহার মা ডাকিতেন, সাড়া মিলিত না। ভক্তগণ উদ্ধবকে আখ্যা দিয়াছেন ‘হরিদাসবর্ঘ্য’। শ্রীশুকদেব উদ্ধবকে “বুদ্ধিসত্তম” বলিয়াছেন। মনুষ্যসমাজে উদ্ধব রত্ন। সাক্ষাৎ বৃহস্পতির শিষ্য, সুতরাং পাণ্ডিত্যে তুলনাবিহীন। শ্রীকৃষ্ণের তিনি একাধারে মন্ত্রী, সখা, দয়িত। যাদবেরা সকলেই গভীর শ্রদ্ধা করেন উদ্ধবকে, তাঁহার কথার উপরে কেহ কথাটি কয় না। সকলেই জানেন উদ্ধব কখনও ভুল করেন না। ভ্রম প্রমাদ নাই উদ্ধব মহারাজের সমগ্রজীবনের মধ্যে কোনও জায়গায়। অতি সুতীক্ষ্ণ বিচারকৌশল উদ্ধবের, অতি সুনিপুণ তাঁহার কৃষ্ণভক্তি। উদ্ধবের জুড়ি নাই। উদ্ধবের দেহের বর্ণ, অঙ্গের সৌষ্ঠব, অঙ্গের চেষ্টা গতিবিধি, মুদ্রাভঙ্গী প্রত্যেকটি শ্রীকৃষ্ণচন্দ্রের অনুরূপ, সর্ব্বতোভাবেই সাদৃশ্যপূর্ণ। শ্রীকৃষ্ণের প্রসাদী দ্রব্য ছাড়া অন্য দ্রব্য উদ্ধব গ্রহণই করেন না। তাঁহার দেহের বসন ভূষণ, মালা চন্দন সকলই পূর্ব্বে শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃক গৃহীত, পরে পরিত্যক্ত অর্থাৎ তাঁহার প্রসাদীকৃত। প্রসাদী বস্ত্রালঙ্কারে বিভূষিত উদ্ধবকে হঠাৎ দেখিয়া শ্রীকৃষ্ণ বলিয়া ভ্রান্তি জন্মে। যেখানে শ্রীকৃষ্ণেরই যাওয়া একান্ত প্রয়োজন, সেখানে প্রতিনিধি স্বরূপ অপর কাহাকেও যাইতে হইলে একমাত্র উদ্ধবই সর্ব্বতোভাবে যোগ্য ব্যক্তি।
কংসবধের পর উপবীত ধারণ করিয়া গুরুগৃহে গমন করেন শ্রীকৃষ্ণ। চৌষট্টি প্রকার বিদ্যা অতি অল্পকালে আয়ত্ত করিয়া সবেমাত্র ফিরিয়াছেন মথুরায়। পূর্ব্বে প্রত্যহ শ্রীবৃন্দাবনের সংবাদ পাইতেন ও পাঠাতেন। নন্দরাজ ভৃত্যের হাতে দিয়া নিত্য ক্ষীর নবনী পাঠাতেন গোপালের জন্য। ঐ ভৃত্যের মাধ্যমে ব্রজের সংবাদ মথুরায় ও মথুরার সংবাদ ব্রজে একটু একটু পৌঁছিত। এই সংবাদটুকুরও আদান প্রদান বন্ধ হইয়া গিয়াছে শ্রীকৃষ্ণের গুরুগৃহে যাইবার পর। গুরুগৃহ হইতে ফিরিয়া আসা অবধি বৃন্দাবনের ভাবনা অস্থির করিয়া তুলিয়াছে শ্রীকৃষ্ণকে। ঐ বেদনা শতগুণ বর্দ্ধিত হইয়াছে প্রভাতে যমুনায় অবগাহন করিতে গিয়া। রাজকার্য্য করিতে পারিতেছেন না শ্রীকৃষ্ণ রাজসভায় বসিয়া। উঠিয়া গেলেন রাজকার্য্য অসমাপ্ত অবস্থায় রাখিয়া। ইসারায় ডাকিলেন প্রিয় উদ্ধবকে অন্দরের দিকে। নিজ গোপন প্রকোষ্ঠে গিয়া বসিলেন উদ্ধবের হাতে হাত দিয়া “গৃহীত্বা পাণিনা পাণিম্।”