কাজকর্মের ক্ষেত্রে দিনটি বিশেষ শুভ। নতুন যোগাযোগ ও উপার্জন বৃদ্ধির ক্ষেত্র প্রস্তুত হতে পারে। বিদ্যায় ... বিশদ
সাধারণ নিয়মে সংসদ চলার কথা বছরে ১৩৫ দিন। প্রতিদিন ছ’ঘণ্টা। মনমোহন সরকারের শেষের দিকে এই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় বছরে গড়ে ৮০ দিন। মোদি জমানায় তা আরও কমে বছরে গড়ে ৫৫ দিন অধিবেশন বসেছে। সংসদ চালানোর ‘হাতি পোষা’র খরচের হিসাব দিতে গিয়ে ২০১২ সালে তৎকালীন সংসদীয় মন্ত্রী পবন বনশল জানিয়েছিলেন, প্রতি মিনিট অধিবেশন চালাতে খরচ হয় আড়াই লক্ষ টাকা। অর্থাৎ, ঘণ্টায় দেড় কোটি টাকা। পরবর্তীকালে এই হিসাবে দেখা যায়, ২০১৬ সালে শীতকালীন অধিবেশনে ৯০ ঘণ্টা কাজকর্ম হয়নি। এতে অপচয়ের অঙ্ক ১৪৪ কোটি টাকা। একইভাবে অচল অবস্থার কারণে ২০২১ সালে স্রেফ ‘জলে’ গিয়েছে ১৩৩ কোটি টাকা! ২০১২-র পর ২০২৪, মানে ১২ বছর অতিক্রান্ত। এই এক যুগ সময়ে অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন হয়েছে। ডলারের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ টাকার আশপাশে। ফলে এখন অধিবেশন অচল থাকলেও খরচ যে ঘণ্টায় দেড় কোটি টাকার দ্বিগুণ বা তারও বেশি হয়েছে তা সহজেই অনুমেয়। প্রশ্ন হল, এই অপচয়ের দায় কে নেবে? খবরে প্রকাশ, অচলাবস্থার দায় মেনে নিয়ে একবার এক সাংসদ নিজের বেতন না নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন। এই নজির কি বর্তমান অচলাবস্থা সৃষ্টিকারীরা অনুসরণ করবেন?
ঘটনা হল, সংসদ অচল করার এই সংস্কৃতি বেশ পুরনো। মনমোহনের শেষবারের জমানায় বিরোধী আসনে বসে বিজেপি যা করেছে এখন সেই কাজই করছে কংগ্রেস এবং আরও কয়েকটি দল। ২০১২ সালের টু-জি কেলেঙ্কারি সহ নানা কেলেঙ্কারির জন্য মন্ত্রীদের ইস্তফার দাবি, পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফার দাবিতে দিনের পর দিন সংসদ অচল করে দিয়েছিল বিজেপি। এখন আদানি ইস্যুতে মোদি সরকারের সঙ্গে ওই শিল্পপতির সম্পর্কের প্রশ্ন সামনে এনে সেই পথেই হাঁটছে কংগ্রেস। দুর্নীতি নিশ্চয়ই বড় ইস্যু। তা নিয়ে আলোচনা কিংবা অন্য দাবিতে বিরোধীরা সরব হবে এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু যে দেশে বেকার সমস্যা, আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি আম জনতার মুখের গ্রাস, রাতের ঘুম কেড়েছে এই ডামাডোলে সেই আলোচনা পিছনের সারিতে চলে যাচ্ছে! সন্দেহ নেই এতে লাভ হচ্ছে শাসকগোষ্ঠীর। তাদের জবাবদিহি করতে হচ্ছে না। যদিও বিরোধীদের মধ্যে তৃণমূলসহ কয়েকটি দল এভাবে সংসদ অচল থাকার বিরুদ্ধে সঙ্গতকারণেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। কারণ সংসদে অচলাবস্থা চললে আঞ্চলিক দলগুলি বলার সুযোগ, সময় কম পাচ্ছে। কিন্তু এই ক্ষোভে অচল অবস্থা কাটবে এমন লক্ষণ আপাতত দেখা যাচ্ছে না। ফলে শুধু হট্টগোল করার জন্য কোটি কোটি টাকা অপচয় করে এই আলোচনার প্রয়োজন কতটা সেই সঙ্গত প্রশ্নটি নিয়ে এখন ভেবে দেখার সময় এসেছে। প্রশ্ন উঠেছে, এই অসময়ে ‘ছুটির’ ঘণ্টা কি বন্ধ হবে না?