ব্যবসায়িক কাজকর্ম ভালো হবে। ব্যবসার প্রসারযোগও বিদ্যমান। উচ্চশিক্ষায় সন্তানের বিদেশ গমনের সুযোগ আসতে পারে। গৃহশান্তি ... বিশদ
এই সূত্রে দ্য ন্যাশনাল ফুড সিকিউরিটি অ্যাক্ট ২০১৩ তৈরি হয়েছে গ্রামাঞ্চলের ৭৫ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলের ৫০ শতাংশ মানুষকে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য সরবরাহ করার লক্ষ্য নিয়ে। তাঁর সরকার ৮০ কোটি ভারতবাসীকে রেশনের মাধ্যেম বিনামূল্যে খাবার দিচ্ছে দাবি করে ভোটের বাজারে হাততালি কুড়োন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তারপরেও বিশ্ব ক্ষুধার সূচকে কিছুতেই উপরে উঠতে পারছে না ভারত: স্বাধীনতালাভের ৭৭ বছর পর, ১২৭টি দেশের মধ্যে ভারতের র্যাঙ্ক ১০৫। বলা বাহুল্য, এখানে র্যাঙ্ক যত উঁচুতে দুর্দশা তত বেশি বোঝায়। শিশু এবং মহিলাদের অপুষ্টির বিচারে আন্তর্জাতিক মানচিত্রে ভারতের ছবিটি অত্যন্ত করুণ। ভারতের এই ক্রনিক সমস্যার সত্য একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা/সংগঠন নানাভাবে সামনে তুলে ধরে ভারতের অভিভাবকদের সতর্ক করেছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার পরিবর্তে, প্রেক্ষিত বিশেষে দুটি উপায় নিয়েছে সরকার: উপেক্ষা অথবা গলাবাজি। মন্ত্রী, অফিসাররা তুলে ধরেছেন কিছু পরিসংখ্যান। দাবি করেছেন সেটাই ক্ষুধানিবৃত্তির খতিয়ান ও সাফল্য। তাঁদের দাবিমতো, সরকারি কোষাগার ফাঁকা করে খাদ্যশস্য কেনা হলেও সেসব ক্ষুধার্ত মানুষের হাত অব্দি শেষপর্যন্ত পৌঁছেছে কি না তার গ্যারান্টি কোথায়? সেই নজরদারি যে বেশিরভাগ জায়গাতেই নেই, সেটাই তুলে ধরা হয়েছে একটি বেসরকারি রিপোর্টে। তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রবল মরুঝড়কে উপেক্ষা করার জন্য বালিতে মুখ গুঁজে থাকার রাজকীয় মূর্খামির মাশুলই গুনছে ভারতবাসী।
রেশনের চাল-গম নিয়ে দেশজুড়ে দুর্নীতির ছায়াই প্রকট এখন। সরকারি নিগমের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে খাদ্যশস্য পৌঁছে যাওয়ার কথা। অথচ, সারা দেশে বহু গ্রাহকের কাছে পৌঁছনোর আগেই উধাও হয়ে যাচ্ছে রেশনের চাল-গম। অন্তত ২৮ শতাংশ গ্রাহকের বঞ্চনাই মোদিযুগের দস্তুর! পরিমাণটা মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতোই, প্রায় ২ কোটি টন! অথচ এজন্য প্রতিবছর রাজকোষের ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা! উপর্যুপরি তিনটি বিস্ময় চিহ্নিত হয়েছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর রিসার্চ অন ইন্টারন্যাশনাল ইকনমিক রিলেশনসের রিপোর্টে। তাদের দাবি, ওই চাল-গম ঘুরপথে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে খোলা বাজারে। এমনকী পাচার হচ্ছে বিদেশেও। আর এই পাপ কারবারে শীর্ষস্থানগুলি দখল করেছে মোদি-শাহদের সাধের ‘ডাবল ইঞ্জিন’ রাজ্যগুলি। অথচ মোদির মুখের বুলি, ‘না খায়ুঙ্গা, না খানে দুঙ্গা’—অর্থাৎ দুর্নীতি রুখব যেকোনও মূল্যে। হায়, মোদি-শাহ যে রাজ্যের ভূমিপুত্র সেই গুজরাতের নামও যে এই কালো তালিকা আলো করে আছে! আছে যোগীপীঠ ইউপি’ও! ভয়াবহ রেশন দুর্নীতি তালিকার বাইরে নেই মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, বিহার প্রভৃতিও। এর বিপরীতে, রেশনের মাল পাচার রুখে বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা। ২০১১-১২ সালে বাংলায় রেশনের খাদ্য পাচার হয়েছিল ৬৯.৪ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে তা মাত্র ৯ শতাংশে নেমে এসেছে। তারপরেও রেশন দুর্নীতির দায় বাংলার ঘাড়ে চাপাতেই সবচেয়ে বেশি তৎপর কেন্দ্রীয় এজেন্সি ইডি। গরিবের অন্ন নিয়ে দুর্নীতি রুখতে জরুরি কেন্দ্রের নিরপেক্ষ এবং কঠোরতর ভূমিকা। অন্যথায় কিছু বিরোধী দলের হেনস্তা চলবে বটে দুর্নীতি কমবেন না, বরং আরও আশকারাই পাবে দুর্বৃত্তরা। গরিব মানুষের খিদের যন্ত্রণা বাড়বে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আরও নিচু হবে ভারতের মুখ-মান।