ব্যবসায়িক কাজকর্ম ভালো হবে। ব্যবসার প্রসারযোগও বিদ্যমান। উচ্চশিক্ষায় সন্তানের বিদেশ গমনের সুযোগ আসতে পারে। গৃহশান্তি ... বিশদ
মহিলা কমিশনের প্রস্তাব যোগী সরকার কার্যকর করবে কি না তা সময়ে বোঝা যাবে। কিন্তু এই প্রস্তাবকে ঘিরে কার্যত গোটা দেশে ঝড় উঠেছে। অনেকেই এর মধ্যে বিজেপির ‘মনুবাদী’ আদর্শ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা দেখছেন। মহিলারা অন্য কারও সম্পদ, কারও অধীনে রয়েছেন, ধর্ষণ-শ্লীলতাহানির জন্য মেয়েদের ছোট পোশাকই দায়ী—হিন্দুত্ববাদীদের মনুবাদের মূল কথা এটাই। সে রাজ্যে সমাজবাদী পার্টির এক মহিলা নেত্রী বলেছেন, কে কোন দর্জির দোকানে যাবেন, জিম-এ কোন ট্রেনারের কাছে প্রশিক্ষণ নেবেন— সেটা মেয়েদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা। এই ব্যক্তি স্বাধীনতাকেই লিঙ্গের গণ্ডিতে বেঁধে রাখার চেষ্টা হচ্ছে! খুব সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে আলোড়ন ফেলে দেওয়া আর জি কর কাণ্ডের পর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকদের রাতের ডিউটিতে নিষেধাজ্ঞা জারির যে কথা উঠেছিল, সুপ্রিম কোর্ট তা পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছে। এসব থেকে ঘুরেফিরে যে কথাটা বারবার উঠে আসছে তা হল, মেয়েরা কী করবে সেটা তারাই ঠিক করবে। যেমন, একজন পুরুষ এই অধিকার ভোগ করে। মহিলাদের কী করা উচিত, সেটা কোনও সরকার ঠিক করে দিতে পারে না। রাস্তাঘাট থেকে কর্মক্ষেত্র— সর্বত্র মেয়েদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব প্রশাসনের। সেখানে মেয়েদের অধিকার, ইচ্ছাকে নিয়ন্ত্রণ বা খারিজ করে রাষ্ট্র তার দায় এড়াতে পারে না। সঙ্গত কারণেই মেয়েদের ‘রক্ষা’র নামে এমন এক অবাস্তব প্রস্তাব নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে। অনেকে কটাক্ষ করে বলেছেন, এরপর কি তবে গণপরিবহণ, রাস্তাঘাট এবং কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের অবাধ বিচরণের জন্য পৃথক ব্যবস্থা করবে উত্তরপ্রদেশ সরকার? যেমন, পৃথক রাস্তা, পৃথক বাস, পৃথক অফিসঘর ইত্যাদি।
আসলে সমাজের গভীরে ছড়িয়ে পড়া এই রোগের কোনও চটজলদি সমাধান নেই। কোনও পুরুষের অভব্য আচরণের হাত থেকে বাঁচতে কি ঘরে খিল এঁটে বসে থাকবেন মহিলারা? এখানেই সচেতনতা ও আত্মরক্ষার পাঠ ও প্রশিক্ষণ নেওয়ার বিষয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে। পুরুষের ‘খারাপ স্পর্শ’ ও অসৎ উদ্দেশ্য থেকে মহিলাদের ‘রক্ষার’ নামে যোগীরাজ্যে মহিলা কমিশন যে ‘তালিবানি’ পরামর্শ দিয়েছে তা নারী ও পুরুষের স্বাভাবিক সামাজিক মেলামেশার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। এমন পরামর্শ পুরুষদের পক্ষেও অসম্মানজনক। কারণ, সব পুরুষ খারাপ নন। সেক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে দেওয়া এমন পরামর্শ নারী পুরুষের মধ্যে যে বিভাজন বিদ্বেষের মানসিকতার জন্ম দেবে না, তা কি হলফ করে বলা যায়? তাছাড়া এমনও দেখা গিয়েছে, নিজের ঘরে, পরিবারের মধ্যেই পদে পদে খারাপ পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে বহু মেয়েকে। তাদের ‘সুরক্ষা’ দিতে এবার কি তাহলে যোগী সরকার পরিবারের অভ্যন্তরেই নারী-পুরুষের মধ্যে বিভাজন ঘটাবে? তাই বলতেই হয়, নারী হোক বা পুরুষ—তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতাকে লিঙ্গের গণ্ডিতে বাঁধা কোনও কাজের কথা নয়। নারীদের আত্মরক্ষার পাঠ, প্রশিক্ষণ যেমন জরুরি, তেমনই জরুরি সরকারি তরফে নারীর সুরক্ষা সুনিশ্চিত করাটাও। দুষ্কৃতী দমনে প্রশাসন ঠুঁটো থাকলে এমন ঘটনা বাড়বে। দরকার প্রশাসনিক কড়া পদক্ষেপ।