সামাজিক কল্যাণকর্মে সামাজিক স্বীকৃতি আর সন্মান। গৃহ পরিবেশে চাপ। আর্থক প্রগতি বজায় থাকবে। ... বিশদ
গণতন্ত্রের সঙ্গে নির্বিচারে বলি দেওয়া হচ্ছে ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিদ্যা ও বিজ্ঞানকেও। শুধু স্কুলের উঁচু ক্লাস নয়, একেবারে পঞ্চম, ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই পাঠ্যক্রম কাটছাঁট করে ‘বিষ’ ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। বছরের গোড়ায় ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্ব বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারও আগে ইতিহাস বই থেকে বাদ পড়েছে মুঘল যুগ। গান্ধী হত্যাকারী নাথুরাম গডসের হিন্দুত্ববাদী পরিচয়, আরএসএসকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা, গুজরাত দাঙ্গার ঘটনা, দেশভাগ, ঠান্ডাযুদ্ধ, দারিদ্র্য-শান্তি-উন্নয়নের মতো বিষয় দশম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির বই থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। নিচু ক্লাসের সিলেবাস থেকে বাদ পড়েছে খাদ্য, তার উৎস, গণতন্ত্রের মূল কথা, জলবায়ু ও বন্যপ্রাণী বিষয়ক অনুচ্ছেদ। আর এবার গণতন্ত্রের সঙ্গে কাটা পড়ল বিজ্ঞানের মৌলগুলির চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য সংক্রান্ত পর্যায় সারণি অধ্যায়। বাদ গিয়েছে শক্তির উৎসের মতো গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ও। সরকারের অধীনস্থ সংস্থার মতে, এসব বিষয় হল সিলেবাসের বোঝা, তাই বাদ দেওয়া হয়েছে। অথচ আধুনিক বিশ্বে প্রতিটি দেশের কাছে জলবায়ু ও পরিবেশ নানাভাবে চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতও এর নেতিবাচক প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। অথচ এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রায় সব অধ্যায়ই বাদ পড়েছে পাঠ্যক্রম থেকে! উদ্দেশ্য স্পষ্ট, আসলে যতই ছেলেমেয়েরা কম জানবে ততই শাসকের সুবিধা।
এদেশে গণতন্ত্র নিয়ে বিজেপি যে প্রচারই করুক, প্রধানমন্ত্রী যে কল্পিত কাহিনিই শোনান—আন্তর্জাতিক মহলে তার কোনও মূল্য নেই। বরং মোদি জমানায় ভারতের গণতন্ত্র যে কার্যত খাদের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে সেই তথ্য উঠে এসেছে বিভিন্ন সমীক্ষায়। যেমন, রির্পোটার্স উইদাউট বর্ডার্স’ সংস্থার প্রকাশিত গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ সংবাদ মাধ্যমের সূচকে ২০১৬ সালে ভারতের স্থান ছিল ১৩৩। সেটা ২০২১ সালে নেমে গিয়েছে ১৪২-এ। গতবছর ভারতের স্থান আরও নেমে দাঁড়িয়েছে ১৫০তম স্থানে। আবার ২০২১ সালে আমেরিকার সংস্থা ‘ফ্রিডম হাউস’ ভারতকে ‘মুক্ত গণতন্ত্র’-এর তকমা থেকে ছেঁটে ‘আংশিক মুক্ত গণতন্ত্র’-এর সারণিতে রেখেছে। মোদি সরকারের মুখে ঝামা ঘষে দিয়ে এই সংস্থা ২০২১ সালে বলেছে, গণতান্ত্রিক সূচকে দু’ধাপ নেমে ভারতের স্থান হয়েছে ৫৩ নম্বরে। ভারত এক ‘নির্বাচনভিত্তিক স্বৈরতন্ত্রে’ পরিণত হয়েছে। এসব তথ্য, পর্যালোচনা অবশ্য শুনতে পান না দেশের ‘হীরক রাজা’। গণতন্ত্রকে দু’পায়ে মাড়িয়ে তিনি নিজের ঢাক পিটিয়েই চলেছেন!