উচ্চতর বিদ্যায় সফলতা আসবে। সরকারি ক্ষেত্রে কর্মলাভের সম্ভাবনা। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-প্রণয়ে মানসিক অস্থিরতা ... বিশদ
কিন্তু দেশে কালো টাকার পরিমাণ কত? ২০১১ সালে অর্থমন্ত্রক তিনটি সরকারি সংস্থার কাছে জানতে চেয়েছিল। সেইমতো ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসি (এনআইপিএফপি), ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ অ্যাপলায়েড ইকনমিক রিসার্চ (এনসিএইআর) এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট (এনআইএফএম) দেশে ও বিদেশে ভারতের কালো টাকার উপর একটা বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করে। রিপোর্টগুলি ২০১৭ সালে তারা পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে জমা দেয়। এনআইপিএফপির বক্তব্য, ২০০৯-১০ সালে সারা দেশে হিসাববহির্ভূত আয়ের পরিমাণ ছিল মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপির ৭২ শতাশ! অন্যদিকে, এনসিএইআর জানিয়েছিল, ২০১০-১১ অর্থবর্ষের হিসেবে দেশে-বিদেশে ভারতীয়দের কালো টাকার পরিমাণটা জিডিপির ৭১-৭৯ শতাংশ! এই সংস্থা আরও হিসেব দিয়েছিল যে, কর-সংক্রান্ত কালো টাকা ঘুরছে ৬৫.৩৪ শতাংশ। অন্যদিকে, কর-বহির্ভূত কালো টাকার বহরটা ১৯.৫৭ শতাংশ। ১৯৮০-২০১০ সালের ভিতরে ভারতীয় অর্থনীতির উপর কালো টাকার যে থাবা বসেছিল তার ওজনটা ছিল ২২ লক্ষ কোটি টাকার। ২০১৯ সালের একটি হিসেব পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে দেখানো হয়েছে কালো টাকার সাইজটা ১৪৪ লক্ষ কোটি টাকার! ১৯৯০-২০০৮ সালের ভিতরে ৯.৪ লক্ষ কোটি কালো পাচার করা হয়েছিল বিদেশে। এই প্রসঙ্গে জানানো যায়, উপর্যুক্ত সংস্থা তিনটির পর্যবেক্ষণ ও রিপোর্ট সরকারের হাতে জমা পড়েছিল ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৪ সালের আগস্টের মধ্যে। কিন্তু সরকার কখনওই তা দেশবাসীর নজরে আনার সাহস ও সদিচ্ছা দেখায়নি। ২০২০ সালে ভারতের শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে নন পারফর্মিং অ্যাসেট বা অনুৎপাদক সম্পদের (এনপিএ) মোট পরিমাণ ছিল ৬ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির হিসেব যোগ হলে অঙ্কটা যে আরও অনেক বড় তাতে সন্দেহ কী। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে সমস্ত ব্যাঙ্ক মিলিয়ে এনপিএ-র হার ছিল ৭.৫ শতাংশ। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আশঙ্কা, একবছরে সেটা বেড়ে ১৩.৫ শতাংশ হয়ে যেতে পারে! রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে ছবিটা আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা, সেখানে ৯.৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৬.২ শতাংশ হতে পারে আগামী সেপ্টেম্বরে। ব্যাঙ্কগুলির অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণটি ব্যাঙ্ক-দুর্নীতির বহর নির্দেশ করে। এই প্রসঙ্গে নীরব মোদি, মেহুল চোকসি, বিজয় মালিয়া প্রভৃতির নাম চলে আসে। এরা এবং আরও বহু ধনাঢ্য জালিয়াত বিভিন্ন ব্যাঙ্কের হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে দিয়ে বিদেশে গাঢাকা দিয়েছে।
ভারতীয়দের কালো টাকা পাচারের একটা বড় ও সুপরিচিত আখড়ার নাম সুইস ব্যাঙ্ক। সুইস ব্যাঙ্কের নাম আবার ভারতীয় মিডিয়ার শিরোনামে। কোভিডকালেও সুইস ব্যাঙ্কে ভারতীয়দের জমাকৃত অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার কোটি টাকা। একবছরে বৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় তিনগুণ, আর এই কীর্তিটি তেরো বছরে সর্বোচ্চ! চতুর্দিকে ছিছিক্কার হতেই মোদি সরকার ‘বিনিয়োগ’ তত্ত্ব হাজির করেছে। কিন্তু দেশবাসী সেটাকে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টা বলেই মনে করছে। সব মিলিয়ে ভারতের অর্থনীতি পঙ্গু করে দেওয়ার ঐতিহ্য অব্যাহত। থুড়ি, নরেন্দ্র মোদির আমলে সেটা অনেক বেশি গতিলাভ করেছে। সত্যিই, মোদি যেন ঘাম ঝরিয়ে বার বার প্রমাণ দিচ্ছেন—তাঁর সরকার সততার প্রতীক, আত্মনির্ভর এবং দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ কতটা!