উচ্চতর বিদ্যায় সফলতা আসবে। সরকারি ক্ষেত্রে কর্মলাভের সম্ভাবনা। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-প্রণয়ে মানসিক অস্থিরতা ... বিশদ
রাজ্যবাসীর মনে থাকতে পারে, সরকারের কাজকর্ম সম্পর্কে ক্ষোভ উগরে দিতে ধনকার অতীতেও বার বার সাংবাদিক বৈঠক করেছেন। সেখানে রাজ্য মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য এবং সরকারি প্রশাসনের কিছু অফিসারকে সরাসরি আক্রমণ করে বক্তব্য রেখেছেন তিনি। ক্ষুব্ধ রাজ্যপাল কিছু ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন, এসএমএস পাঠিয়েছেন , এমনকী মিডিয়ায় প্রকাশ করেছেন তাঁর ভিডিও বার্তা। কিন্তু ওইসবে রাজ্যপালের ‘ভঙ্গিমা ও ভাষা চয়ন’ মেনে নেওয়া কঠিন হয় মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে। তীব্র অসন্তোষ প্রকাশসহ রাজ্যপালকে পাল্টা চিঠি দিতেও বাধ্য হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যেমন গতবছর ২৪ এপ্রিল একটি চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী জানান যে, রাজ্যপাল তাঁর সম্পর্কে ‘ওয়ার্ন করছি’র মতো অসৌজন্যমূলক শব্দ ব্যবহার করতেও কুণ্ঠিত হননি। একজন মুখ্যমন্ত্রী কতটা ব্যথা পেলে তাঁর রাজ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন রাজ্যপালকে চিঠি লিখে এমন ক্ষোভ জানাতে পারেন! ধনকার সেটা উপলব্ধি করার পরিবর্তে দ্রুত একটি ট্যুইট করে মুখ্যমন্ত্রীকে তীব্র আক্রমণ করেন আর একদফা। মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘ভুল তথ্য’ পরিবেশনের অভিযোগ আনেন তিনি। তাতেও ক্ষান্ত দেননি ধনকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দীর্ঘ এক চিঠিতে তিনি তাজ্জব মন্তব্য করেন, ‘রাজ্য সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ। রাজ্য সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করছে।’ তার পরবর্তী বৎসরাধিককালে, বিশেষ করে ভোটের মুখে তাঁর ভূমিকা নিশ্চিতরূপেই যে-কোনও বিরোধী রাজনীতিককে ছাপিয়ে গিয়েছে। এই তাজ্জব ব্যাপার সারা দেশ দেখেছে। ভোটে বিজেপি গোহারা হওয়ার পর থেকে তৃণমূলের এক গদ্দারকে সামনে রেখে রাজভবন যেভাবে আর্তনাদ করছে, তার মধ্যে আর নতুনত্ব থাকছে না। মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেই ট্যুইটারে প্রকাশ করে দেওয়ার সর্বশেষ ঘটনাটি ধনকারের কলকাতাযাপনের খতিয়ানের সঙ্গে বেশ সাযুজ্যপূর্ণ বলেই মনে হচ্ছে।
কিন্তু এইভাবে তাঁর সম্পর্কে চরম প্রশ্নটি তিনি নিজেই তুলে দিচ্ছেন না কি—রাজ্যপাল পদটি আঁকড়ে থাকার কতটা যোগ্য এই মহামান্য ব্যক্তি? বহু পুরনো ও বিতর্কিত অন্য এক প্রশ্নও উঠে এল আবার—স্বাধীন গণতান্ত্রিক ভারতে রাজ্যপাল নামক নিতান্তই এক রাজকীয় পদ টিকিয়ে রাখার আর কী প্রয়োজন? যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মধ্যে সমন্বয়রক্ষা এবং সম্পর্কের উন্নয়নের ক্ষেত্রে রাজ্যপালদের কিছু ইতিবাচক ভূমিকা থাকার কথা। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ কেন্দ্রীয় শাসক দলগুলি সংবিধানের এই প্রত্যাশা পূরণের প্রধান অন্তরায় হয়ে উঠেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাজ্যপালরা ব্যক্তিত্বহীন কেন্দ্রের এজেন্টের মতোই ব্যবহৃত হচ্ছেন। তাতে কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয়ের পরিবর্তে তাদের মধ্যে সম্পর্কের তিক্ততা বাড়ছে, ক্রমে তাদের সম্পর্কটি অহি-নকুলের ন্যায়ই হয়ে উঠছে অনেক সময়। একে অপরকে শ্রদ্ধা করার পরিবর্তে সন্দেহের চোখে দেখছে। দেখে মনে হয়, একে অন্যের বিরুদ্ধে গোপন অস্ত্র নিয়ে ঘুরছে সর্বক্ষণ। পদটির যন্ত্রণা থেকে যতদিন না মুক্তি মেলে ততদিন অন্তত সারকারিয়া কমিশনের এই সংক্রান্ত সুপারিশগুলি মেনে নিক কেন্দ্র। রাজ্য সরকারগুলি যাঁদের ‘অবাঞ্ছিত’ মনে করে, সেই রাজ্যপালদের পত্রপাঠ সরিয়ে নেওয়া উচিত। নতুন রাজ্যপাল নিয়োগের আগে অবশ্যই নেওয়া হোক সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের মতামত। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সুস্বাস্থ্য এবং ভারতের মতো সুবৃহৎ গণতন্ত্রের উন্নয়নের স্বার্থে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা প্রয়োজন।