উচ্চতর বিদ্যায় সফলতা আসবে। সরকারি ক্ষেত্রে কর্মলাভের সম্ভাবনা। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-প্রণয়ে মানসিক অস্থিরতা ... বিশদ
বস্তুত টানা দেড় বছর যাবৎ সারা পৃথিবী একটা ছায়ার সঙ্গে যুদ্ধ করে চলেছে। তাই এই যুদ্ধে সামান্যতম ত্রুটিও অমার্জনীয়। প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর। রোগের শিকার হলে চিকিৎসাই একমাত্র উপায়। তাতে সাফল্যের হার ০ শূন্য ১০০-র মধ্যে ঘোরাফেরা করে। সুতরাং, সেরা উপায় হল রোগ থেকে শরীর, ব্যক্তি এবং সমাজকে দূরে রাখা। সবরকমে প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিকল্প নেই। এজন্য জরুরি হল মাস্ক, স্যানিটাইজার, হ্যান্ডওয়াশ, পিপিই প্রভৃতি। রোগ লক্ষণ অনুভূত হলে কিংবা প্রকাশ পেলে করোনা টেস্ট করানোটাও একান্ত দরকার। তার জন্য প্রয়োজন টেস্ট কিট। করোনা চিকিৎসায় বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয় রেমডিসিভির ইঞ্জেকশন, অক্সিমিটার, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর সহ অনেক জিনিস। সর্বোপরি দরকার ভ্যাকসিন। মান্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ভ্যাকসিনই হল করোনা মোকাবিলার আপাতত সেরা সমাধান। এজন্য সমস্ত পূর্ণবয়স্ক নাগরিকের দ্রুত টিকাকরণ আবশ্যক। ১৮ বছরের নীচের নাগরিকদের ভ্যাকসিন দেওয়ার অনুমতি পাওয়া গেলে সরকারকে তখন সেটাও ভাবতে হবে। তাই করোনা মোকাবিলায় ব্যবহার্য সমস্ত ওষুধ এবং সরঞ্জামকে করমুক্ত করার দাবি উঠেছে বিপদের শুরু থেকেই। টানা পনেরো মাসেও মোদি সরকার সেই দাবি মানেনি। দু’-একটা জিনিসকে করমুক্ত করেছে। বাকিগুলোর ক্ষেত্রে করহার (জিএসটি) কিছুদিনের জন্য সাময়িকভাবে কমিয়েছে মাত্র, প্রত্যাহার করেনি।
সবাই জানে, সরকারের আয়ের প্রধান উৎস কর সংগ্রহ। কিন্তু, জীবনমরণের লড়াইটা যখন চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছে, তখনও কি বাণিজ্যিক পণ্যের পংক্তিতে রাখতে হবে জীবনরক্ষার জরুরি সামগ্রীগুলোকেও? সরকারের এই চিন্তার মধ্যে বিবেকের অনুপস্থিতিটাই প্রকট হয়ে উঠেছে। সরকারকে ভেবে দেখতে হবে, করোনার সেকেন্ড ওয়েভ প্রতিরোধে ব্যর্থতার পিছনে সরকারের এই ভুল নীতি কতটা দায়ী? নিরপেক্ষভাবে খোঁজ নিলে উত্তর বেরিয়ে আসবে যে, সরকারের সবেতেই সবসময় সর্বত্র বাণিজ্য করার এই মানসিকতা বহুলাংশে দায়ী। তাই এই ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গসহ বিজেপি-বিরোধী রাজ্যগুলোর তীব্র প্রতিবাদকে পূর্ণ সমর্থন জানাতেই হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রশংসা করতে হয়, টিকাকরণ নিয়ে বম্বে হাইকোর্টের মানবিক ভূমিকার। ওই উচ্চ আদালত জানতে চেয়েছে, ‘দুয়ারে টিকা’ পৌঁছে দিতে কেন্দ্রের এত দ্বিধা কেন? কেরল এবং কাশ্মীরের দুর্গম অঞ্চলের সাফল্যের দৃষ্টান্ত সামনে রেখে কেন্দ্রকে এই ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করতে বলেছে আদালত। ভ্যাকসিনই যখন শেষ অবলম্বন তখন টিকা সকলকে দেওয়ার সবরকম উদ্যোগ নিতে হবে। বহু প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তির পক্ষে হাসপাতাল কিংবা টিকা কেন্দ্রে গিয়ে দীর্ঘসময় লাইনে অপেক্ষা করা অসম্ভব। আবার এমন কিছু পেশা আছে যেগুলোর সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের পক্ষে অন্যদের মতো স্বাভাবিকভাবে টিকা নেওয়া সম্ভব নয়। একমাত্র দুয়ারে টিকাকরণ কর্মসূচির মাধ্যমেই এই মানুষগুলোকে টিকার আওতায় আনা যায়। একজনও উপযুক্ত নাগরিককে টিকাকরণের বাইরে রেখে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে একশো ভাগ সাফল্য আশা করা যায় না।