উচ্চতর বিদ্যায় সফলতা আসবে। সরকারি ক্ষেত্রে কর্মলাভের সম্ভাবনা। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-প্রণয়ে মানসিক অস্থিরতা ... বিশদ
কিন্তু আর যে-জিনিসটা চাপা পড়ে যাচ্ছে, এখনও যে ঘুরে দাঁড়াবার স্বপ্ন আমরা দেখছি তার বড় কৃতিত্ব কিন্তু কৃষির। নীতি আয়োগের হিসেবে, ২০২০-২১ সালে দেশে কৃষিতে বৃদ্ধির হার রেকর্ড হয়েছে ৩ শতাংশ। শিল্প, পরিষেবা এবং সার্বিক বৃদ্ধির মলিন ছবিটার পাশে কৃষিকে অত্যুজ্জ্বলই দেখাচ্ছে। আরও ফিরে দেখা যায় যে, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে ভারতে জিডিপির প্রায় ২০ শতাংশ শেয়ার ছিল কৃষির। গত ১৭ বছরের ভিতরে কৃষিক্ষেত্রের এটাই সেরা অবদান। এখনও দেশের ৫৮ শতাংশ মানুষের রুটিরুজির জোগানদারের নাম কৃষি। ২০২০ সালে কৃষি, বন ও মৎস্য উৎপাদন ক্ষেত্র মিলিতভাবে ভারতীয় অর্থনীতিতে ১৯.৪৮ লক্ষ কোটি টাকার মোট মূল্য যোগ করেছিল। ভারতের খাদ্য ও মুদি পণ্যের যে বাজার তার সাইজটা পৃথিবীর মধ্যে ষষ্ঠ বৃহৎ। ভারতে মোট যত খুচরো পণ্য বেচাকেনা হয় তার ৭০ শতাংশই এই ধরনের জিনিসপত্র। ভারতের খাদ্যপণ্য ব্যবসার ৩২ শতাংশ দখল করে আছে ফুড প্রসেসিং শিল্প। এটা ভারতের অন্যতম বৃহৎ একটা শিল্পক্ষেত্র। উৎপাদন, ভোগ, রপ্তানি এবং প্রত্যাশিত বৃদ্ধির প্রশ্নে এই শিল্পের সাইজ ভারতের মধ্যে পঞ্চম বৃহৎ। প্রধান খাদ্যশস্যগুলো রপ্তানি করে ভারতের রাজকোষে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রাও জমা হয়। যেমন এই বাবদ এপ্রিল ২০২০-জানুয়ারি ২০২১-এর মধ্যে ৩২.১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে ভারত। তাহলে ভেবে দেখতে হবে, কৃষি মোটেই কোনও হেলছেদ্দা করার জিনিস নয়। কৃষিই হল ভারতের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শিল্পেরও একটা বিরাট অংশের প্রাণভোমরা। জীবিকার সংস্থানে এর ভূমিকা কত বড় কোভিড পরিস্থিতিতে পতিত ভারত সেটা আর একবার পরখ করে দেখার সুযোগ পেল। লাখো লাখো পরিযায়ী শ্রমিককে একাধিকবার হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। সাময়িক হলেও, তাঁদের একটা বড় অংশের কর্মসংস্থানের সুযোগ দিয়েছে এই কৃষিক্ষেত্র।
অতীতেও বার বার ভারতের মুখ ও প্রাণ রক্ষা করেছে কৃষি। ইতিহাসে তার বিস্তর সাক্ষ্য-প্রমাণ রয়েছে। উপযুক্ত মর্যাদা ও যত্ন পেলে কৃষি, কোনও সন্দেহ নেই, আরও বড় অবদান রাখতে পারত। এদেশের সরকারের উচিত ছিল—কৃষক, খেতমজুরসহ কৃষির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত সকলের উন্নতির জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করা। কৃষির সঙ্গে শিল্পের মেলবন্ধন ঘটানো। কৃষিতে সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি। কৃষকের নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং ফসল বিমার ব্যবস্থা করা। কৃষিকে সময়োপযোগী করে তোলা। কৃষিবিজ্ঞান অধ্যয়ন ও গবেষণার সুযোগের প্রসার। বলা বাহুল্য, কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহারে চীন, রাশিয়া, আমেরিকা প্রভৃতি প্রধান দেশগুলোর তুলনায় অনেক অনেক পিছিয়ে রয়েছে ভারত। ‘রাশিয়ার চিঠি’-তে রবীন্দ্রনাথ এই কারণে অনেক আক্ষেপ করেছেন। তারপর বহু বছর কেটে গেলেও ভারত সরকার রবীন্দ্রনাথের পরামর্শ নেয়নি। এর মধ্যেও সৌভাগ্যবান বাংলার কৃষককুল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার জমির মালিক থেকে খেতমজুর পর্যন্ত কৃষির সঙ্গে যুক্ত ৬২ লক্ষ মানুষকে কৃষকবন্ধু প্রকল্প মারফত আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। রক্ষা করেছে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। এই সরকার আর্থিক সাহায্য দিচ্ছে মৃত কৃষকের পরিবারকে, ভাতা দিচ্ছে প্রবীণ কৃষককে। এছাড়া প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষিজমির পুনরুদ্ধারেও যত্নবান হয়েছে এই সরকার। দৃষ্টান্ত ও কারণ সামনে অনেক। মোদি সরকারের উচিত, কৃষকদের শায়েস্তা করার নীতি ছেড়ে এবার কৃষি-ভারতের কল্যাণে আন্তরিক ভূমিকা নেওয়া।