বিদ্যার্থীদের ক্ষেত্রে আজকের দিনটা শুভ। কর্মক্ষেত্রে আজ শুভ। শরীর-স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। লটারি, শেয়ার ... বিশদ
কিন্তু বাস্তবে কী হল? ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসেব কষে আয়কর দপ্তর যে তথ্য হাতে পেয়েছে, তা রীতিমতো হতাশাজনকই। দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে যে পরিমাণ টাকা ব্যাঙ্কে জমা পড়েছে, তার উপর কর হিসেব করে অঙ্কটা দাঁড়াচ্ছে ৪১ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ব্যক্তিগত এবং কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলির আয়কর বাবদ ওই টাকা মেটানোর কথা।
সারা দেশের চিত্রটাও আশাব্যঞ্জক নয়। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে দেশ। চলতি আর্থিক বছরে যেখানে আয়কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ১৩ লক্ষ ৩৮ হাজার কোটি টাকা, সেখানে সর্বশেষ পাওয়া হিসেব অনুযায়ী ন’মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর আদায় হয়েছে মাত্র ৭ লক্ষ ২৩ হাজার কোটি টাকা। স্বাভাবিকভাবেই এই বিরাট ফারাক নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছে কেন্দ্র। আর তারই ফলশ্রুতিতে দপ্তর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আয়কর হানা বাড়ানো হবে। শুধু মুখের কথাই নয়। প্রতিটি অফিসারকে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী, একজন অফিসারকে সপ্তাহে অন্তত তিনটি হানাদারি চালাতে হবে। দপ্তরের কর্তারা যা জানিয়েছেন, তাতে নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে কোনও সংস্থার নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে অফিসাররা আয়কর বাবদ বকেয়া টাকা, এমনকী পেনাল্টি এবং সুদও আদায় করবেন। দপ্তর সূত্রেই খবর, দেশজুড়ে এত বড় মাপের হানাদারির পরিকল্পনা এর আগে কখনও হয়নি।
কালো টাকা উদ্ধারে কেন্দ্র যে পদক্ষেপই করুক না কেন, তা নিয়ে বলার কিছু থাকতে পারে না। কিন্তু দপ্তর সূত্রে যা খবর, এই হানাদারিতে মূলত সেইসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানই নজরে থাকবে, যাঁরা নোটবাতিল পরবর্তী সময় বিরাট অঙ্কের টাকা ব্যাঙ্কে জমা করেছেন, অথচ সেই অনুযায়ী আয়কর জমা করেননি। কিন্তু আয়করে ফাঁকি কি শুধু এই ক্ষেত্রেই প্রবল। বহু রাঘববোয়ালই তো দিনের পর দিন বিপুল অঙ্কের কর ফাঁকি দিয়ে বহাল তবিয়তে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা এই ধরনের হানাদারির আওতার বাইরে থাকবেন কেন? দপ্তরের অফিসাররাই জানিয়েছেন, গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত যে পরিমাণ আয়কর আদায় হয়েছে, এবছর সামগ্রিকভাবেই তা অনেক পিছিয়ে রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় এই পিছিয়ে পড়ার পরিসংখ্যান দেখলেই বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে। যেমন মুম্বইয়ে বৃদ্ধির হার মাইনাস ৫.৭ শতাংশ। অন্যান্য ক্ষেত্রে সংখ্যাটা এইরকম: দিল্লি মাইনাস ১০.৭, বেঙ্গালুরু মাইনাস ৭.১, চেন্নাই মাইনাস ২.৩, পুনে মাইনাস ২.৫, চণ্ডীগড় মাইনাস ৩.৮, কানপুর মাইনাস ১১.১ ইত্যাদি। অর্থাৎ সর্বত্রই কর আদায়ে ভাটার টান। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বারবার সতর্ক করে দিচ্ছেন, আয়কর আদায়ের নামে কোনও করদাতাকে হেনস্তা করা যাবে না। তার ফলে অন্যবার যেখানে ঘনঘন ‘সার্চ’ এবং ‘সার্ভে’ হতো, এবার তাতে অনেকটাই ঘাটতি চোখে পড়েছে। ফলে আয়কর অফিসাররাও কিছুটা বিভ্রান্ত।
একদিকে অর্থমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, অন্যদিকে আয়কর দপ্তরের চড়া লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া। এর মাঝে পড়ে প্রকৃত অবস্থা কী দাঁড়াবে, তা কারোরই জানা নেই। কারণ, যে সময় চলতি আর্থিক বছরের জন্য পড়ে রয়েছে, তাতে লক্ষ্যপূরণ কার্যত অসম্ভব। মাঝখান থেকে কোটা পূরণে রাঘববোয়ালদের ছেড়ে যদি সাধারণ করদাতাদের হেনস্তা শুরু হয়ে যায়, তবে সেটাও মোটেই সুখকর হবে না। সব মিলিয়ে আয়কর আদায়ে অনেক পিছিয়ে থেকে কেন্দ্র যে সব নির্দেশিকা জারি করে চলেছে, তাতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ তো হচ্ছেই না, বরং বিভ্রান্তিই বাড়ছে।