বিদ্যার্থীদের ক্ষেত্রে আজকের দিনটা শুভ। কর্মক্ষেত্রে আজ শুভ। শরীর-স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। লটারি, শেয়ার ... বিশদ
ভারতের ইতিহাসে এমন বহু বীরাঙ্গনার অবদানের কথা রয়েছে যাঁরা দক্ষতার সঙ্গে পুরুষের সমকক্ষ হয়েই নানা ক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। অবলীলায় প্রমাণ করেছেন তাঁদের পারদর্শিতা। পারিবারিক বন্ধন বা শারীরিক গঠন তাঁদের কাজে কখনও প্রতিবন্ধক হয়নি। আধুনিক ভারতেও এমন বহু মহিলা আছেন যাঁরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছেন। মহিলারা আজ উড়োজাহাজ চালাচ্ছেন। মহাকাশেও তাঁদের স্বচ্ছন্দ গতিবিধি। তবু, সেই মান্ধাতার আমলের মানসিকতার কারণে মহিলাদের শারীরিক সীমাবদ্ধতার যুক্তিটি খাড়া করে স্বাধীনতার সাত দশক পরও সেনার সশস্ত্র বাহিনীতে পুরুষ সদস্যদের সমান সুযোগ-সুবিধা থেকে তাঁদের বঞ্চিত করে রাখা হচ্ছিল। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও যুদ্ধক্ষেত্রে মুখোমুখি লড়াইয়ে মহিলাদের ব্রাত্য করে রাখা হচ্ছিল এক অদ্ভুত যুক্তিতে। লিঙ্গবৈষম্যের কারণে সেনা পার্মানেন্ট কমিশন তাঁদের নিতে নাকি নারাজ ছিল। যুক্তি অবশ্য একটা খাড়া করা হয়েছিল যাকে অযৌক্তিকই বলা যায়। অবদমনের এই মানসিকতা নিন্দনীয়। বলা হচ্ছিল, পুরুষ জওয়ানরা অনেকেই আসেন গ্রাম থেকে। তাই তাঁরা নাকি মহিলা কম্যান্ডিং অফিসারদের নির্দেশ মানতে গররাজি হতে পারেন। অর্থাৎ, মহিলাদের নির্দেশ মেনে চলার মতো মানসিকতা তাঁদের তৈরি হয়নি। আবার এও বলা হয়েছে, সন্তানধারণ, শিশুর পরিচর্যা, তার প্রতি দায়িত্বপালন, পরিবার পরিজনের প্রতি কর্তব্যপালন ইত্যাদি সামলে মহিলাদের পক্ষে এই কাজ করা কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। এমন বস্তাপচা সামাজিক ও মানসিক ধ্যানধারণার পরিবর্তন যে দরকার তা দেশনায়করা বুঝতে না-পারলেও দেশের শীর্ষ আদালত তা বুঝেই এই ঐতিহাসিক রায়টি দিয়েছে। শুধু তাই নয়, ওই রায়ে কেন্দ্রকে তীব্র ভর্ৎসনাও করেছে সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালতের বক্তব্য, ২০১০ সালে মহিলা অফিসারদের স্থায়ীভাবে নিয়োগের অনুমতি দিয়েছিল দিল্লি হাইকোর্ট। সেই রায়ে কোনও স্থগিতাদেশ না-থাকা সত্ত্বেও এক দশক ধরে গড়িমসি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে, সশস্ত্র বাহিনীতে পুরুষ সদস্যদের সমান সুযোগ-সুবিধা মহিলাদেরও দিতে হবে। মহিলাদের শারীরিক সীমাবদ্ধতার যে-যুক্তি কেন্দ্র দেখিয়েছে তা ভিত্তিহীন। এই রায় অবশ্যই দেশের মহিলাদের ক্ষমতায়নের সহায়ক হবে। মহিলা অফিসার যুদ্ধবন্দি হলে সরকারের উপর বাড়তি চাপ পড়ে বলে কেন্দ্রের দেওয়া যুক্তিটিও ধোপে টেকেনি।
একদিকে আমরা উন্নত ভারত গড়ার স্বপ্ন দেখব আর ঔপনিবেশিক যুগের মতো প্রাচীনপন্থী মানসিকতা আঁকড়ে থাকব, এমনটা কাম্য নয়। এমনিতেই সমাজে মহিলাদের নানা বঞ্চনার শিকার হতে হয়। তাঁদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ বা বঞ্চনার মাধ্যমে নারীশক্তিকে অবদমন করে রেখে একটি দেশ কখনওই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে না। একটি দেশের অগ্রগতির জন্য নারী-পুরুষ উভয়কেই তার শরিক করতে হবে। পুরুষের পাশাপাশি নারীশক্তিতেও আস্থা রাখা প্রয়োজন। ২০১৮ সালে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেনা বাহিনীতে মহিলা অফিসারদের পার্মানেন্ট কমিশনে দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তা ছিল শুধুমাত্র মুখের কথা। মুখে নারীজাগরণের কথা বলব আর নানা অছিলায় মহিলাদের কাজকর্মকে খাটো করে দেখিয়ে, তাঁদের প্রতি অবজ্ঞা আর অবহেলার এই বৈষম্য চলবে—এমন বৈপরীত্য দেশের অগ্রগতির সহায়ক কখনও হতে পারে না। মহামান্য শীর্ষ আদালত চোখে আঙুল দিয়ে তা দেখিয়ে নারীশক্তির অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করল।