বিদ্যার্থীদের ক্ষেত্রে আজকের দিনটা শুভ। কর্মক্ষেত্রে আজ শুভ। শরীর-স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। লটারি, শেয়ার ... বিশদ
মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণায় যৎপরনাস্তি খুশি আমজনতা। আর ঠিক ততটাই শঙ্কিত ঠিকাদার ও সরকারি অফিসারকূলের একাংশ। বাঁকুড়ার সারেঙ্গায় ২০০ কোটি টাকায় জলের ওভারহেড ট্যাঙ্ক উদ্বোধনের মাত্র তিন বছরের মাথায় তা কাটা কলাগাছের মতো হুড়মুড়িয়ে মাটিতে আছড়ে পড়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, নিম্নমানের মালপত্র দিয়ে জলের ট্যাঙ্কটি তৈরির কারণেই এই পরিণতি। ঠিকাদারের অপকর্মের মাশুল সরকারকেই গুনতে হয়। ঠিকাদার দুর্নীতি করছে কি না তা দেখার জন্য সরকারি কর্মী, অফিসার, ইঞ্জিনিয়ার আছেন। সিমেন্ট ও বালির পরিমাণ ঠিক আছে কি না, ঢালাই মজবুত করার জন্য প্রয়োজনীয় লোহার রড দেওয়া হচ্ছে কি না, এসব দেখার জন্যই সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা রয়েছেন। কাগজেকলমে হয়তো সে সব পরিদর্শনের উল্লেখ থাকে। কিন্তু, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেটা হয় না। আর সেই কারণেই এমন বিপর্যয়। আর তার জন্য জনসমক্ষে হেয় হয় সরকার।
বাঁকুড়ার সারেঙ্গারটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, পূর্ব বর্ধমান জেলার একটি কলেজেও একই ধরনের ঘটনার খবর পাওয়া গিয়েছে। সেখানে নতুন বিল্ডিং তৈরির পর কলেজের ক্লাস শুরুর আগেই দেওয়ালে ধরেছে ফাটল। বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার কাজেও অভিযোগ রয়েছে বিস্তর। সরকার রাস্তার জন্য ঋণ করে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। কিন্তু, সেই রাস্তা এমনভাবে তৈরি হচ্ছে যে দু-একবার বৃষ্টি হলেই ভেঙে যাচ্ছে। নামেই পিচরাস্তা। কিন্তু, পিচের পরিমাণ এতটাই কম যে বাইকের চাকার ঘর্ষণে তা উঠে যাচ্ছে।
তবে, সব ক্ষেত্রেই দুর্নীতি হচ্ছে বা নিম্নমানের মালপত্র দিয়ে তৈরি হচ্ছে, এমনটা নয়। কিন্তু, নজরদারির অভাব যে স্পষ্ট তা নিয়ে সন্দেহ নেই। অথচ বরাদ্দকৃত টাকা যথাযথভাবে কাজে লাগানো গেলে মানুষের দুর্ভোগ যেমন লাঘব হতো, সরকারকেও অপদস্থ হতে হতো না। উল্টে সরকারি কাজ ঠিকমতো না হলে হিতে বিপরীত হয়। সন্তুষ্টির বদলে মানুষের ক্ষোভ তৈরি হয়। মন্দেরও একটা ভালো দিক আছে। সারেঙ্গায় ওভারহেড ট্যাঙ্ক ভেঙে পড়ার মধ্যে দিয়ে ঠিকাদারের নিম্নমানের মালপত্র দিয়ে কাজ করার বিষয়টি যেমন সামনে এসেছে, তেমনই প্রকাশ্যে এসেছে সরকারি অফিসারদের গাফিলতির বিষয়টিও। মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ভেঙে পড়া ওভারহেড ট্যাঙ্কটি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকেই করে দিতে হবে। কারণ সরকারি টাকা খোলামকুচি নয়। শুধু জলের ওভারহেড ট্যাঙ্ক করে দিলেই হবে না, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, সরকারি কাজে দুর্নীতি ঠেকানোর জন্য আইন করবেন।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়িত হলে এক ঢিলে দুটি নয়, তিনটি পাখি মরবে বলে অনেকে মনে করছেন। প্রথমত, শাস্তির ভয়ে ঠিকাদার কাজের ব্যাপারে যত্নশীল হবে। নিম্নমানের মালপত্র দিয়ে জোড়াতাপ্পির কাজ থেকে বিরত হবে। দ্বিতীয়ত, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অফিসার এবং ইঞ্জিনিয়াররা নজরদারি বাড়াতে বাধ্য হবেন। তাতে অপচয় কমবে। তৃতীয়ত, কাজ সরকারি সিডিউল মেনে করলে এলাকার মাতব্বরদের কাটমানি খাওয়া কমবে। তাতে রাজনীতিতে কাঁচা টাকার জোগান এক ধাক্কায় অনেকটাই কমে যাবে। সব মিলিয়ে সরকারি প্রকল্পের ব্যয় অনেকটাই কমে যাবে।