বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
তাই কেন্দ্রীয় নীতির প্রতিবাদে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলনে শামিল হলেও শাসক দল তৃণমূল সংগত কারণেই মনে করছে, ধর্মঘটের মধ্য দিয়ে প্রতিবাদ জানানোর পদ্ধতিটি সঠিক নয়। রাজ্যের কর্মসংস্কৃতি রক্ষার স্বার্থে প্রথম থেকেই ধর্মঘট কর্মবিরতি ইত্যাদির বিরোধী তৃণমূল। আট বছর তারা রাজ্যে ক্ষমতায়। কথায় কথায় বাম আমলের বন্ধ কালচার বিলোপের সুফলটিও রাজ্য হাতে হাতে পেয়েছে। এই কারণেই রাজ্যে শিল্পে বিনিয়োগের আগ্রহ বেড়েছে, বেড়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প-ব্যবসা। কংগ্রেস আর বামেদের ডাকা বন্ধের ইস্যুগুলিকে সমর্থন জানিয়েও মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সরকারের অবস্থানটি স্পষ্ট করে দিয়ে বলেছেন, এই বন্ধকে সমর্থন করি না। প্রতিবাদ জানানোর এই পদ্ধতি সঠিক নয়। তাই রাজ্যে যাতে বন্ধের দিন জনজীবন স্বাভাবিক ও সচল থাকে, সেই ব্যাপারে পদক্ষেপ করার জন্য মুখ্যসচিব ডিজিসহ প্রশাসন ও পুলিস কর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। খুবই জরুরি হল, রাজ্যের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা। বন্ধ সমর্থক ও বনধ-বিরোধীরা যাতে কোনও হাঙ্গামায় জড়িয়ে না-পড়ে, অর্থাৎ পরিস্থিতি কোনোভাবে অশান্ত না-হয়, সেদিকে লক্ষ রাখাটাই এখন বেশি প্রয়োজন। তাই কেন্দ্র-বিরোধী এই আন্দোলনটি হোক শান্তিপূর্ণ।
সিএএ, এনআরসি ইস্যুতে এমনিতেই দেশের নানা জায়গা এখন অগ্নিগর্ভ। প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে ছাত্রদের একটা বড় অংশ। কখনও পুলিস, কখনও-বা গুন্ডা দিয়ে প্রতিবাদী ছাত্রদের কণ্ঠস্বর দমনের চেষ্টা হচ্ছে। দেশে ইন্দিরা গান্ধীর আমলে জরুরি অবস্থার সময়টাকে বাদ দিলে বিগত কোনও সরকারের আমলেই দেশের এমন অস্থিরতার পরিবেশ দেখেনি ভারতবাসী। যে-দাবিতে আন্দোলন তাতে যদি যৌক্তিকতা থাকে এবং তা যদি বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষা করে তাহলে তাকে লাঠি বন্দুকের আঘাতে বা বর্বরোচিত হিংসাত্মক হামলা করে দমানো সম্ভব নয়। যদি তা সম্ভব হতো তা হলে আমাদের দেশ কোনোদিন স্বাধীনই হতো না। এটা ভুললে চলবে না। তাই দাম্ভিকতা ছেড়ে কেন্দ্রীয় শাসকের সংযত হওয়ার সময় এসেছে। মূলত কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদেই এই রাজ্যে পথে নেমেছেন অগুনতি পড়ুয়া। এরই মাঝে জেএনইউয়ের ঘটনায় আক্রান্ত ছাত্রদের উদ্দেশে সহমর্মিতার বার্তা দিতে প্রেসিডেন্সি, যাদবপুরসহ বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একাংশ গর্জে উঠেছেন। উত্তপ্ত এমন একটা পরিস্থিতিতে উস্কানিমূলক মন্তব্য করছেন এই রাজ্যের শাসক-বিরোধী দলের কোনও কোনও নেতা যা অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার। কেন্দ্রের নীতির পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে তাঁদের মন্তব্য আগুনে ঘৃতাহুতি দিচ্ছে যা বাঞ্ছনীয় নয়। উদ্দেশ্য স্পষ্ট। বোঝাই যাচ্ছে এনআরসি, সিএএ ইস্যুতে বেকায়দায় পড়েছে কেন্দ্রের শাসক দল। তাই নতুন ইস্যু তৈরি করে নজর ঘোরানোর কৌশল নিয়েছে তারা, যাতে আন্দোলনকারীরা মূল ইস্যু থেকে সরে যায়। নেমে এসেছে ছাত্রদের উপর দমন-পীড়ন। তাই প্রতিবাদের ইস্যু যখন এক, তখন সেটা মাথায় রেখে সংযত আচরণ করতে হবে আজকের বন্ধ-সমর্থক কংগ্রেস, সিপিএম এবং বন্ধ-বিরোধী তৃণমূল কংগ্রেসকেও। এমন কোনও দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করা তাদের ঠিক হবে না যাতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। তাই শান্তি বজায় রাখাটা জরুরি।