বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
কোষাগারের ঘাটতি ক্রমশ বাড়ছে, এই অবস্থায় বিলগ্নিকরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে মরিয়া কেন্দ্রের কাছে বিপিসিএল বিক্রি অগ্রাধিকার পাচ্ছে। কিন্তু বিপিসিএল বিক্রি হলে ভারতে জ্বালানি বাণিজ্যের কাঠামোই বদলে যাবে। সেইসঙ্গে বিপুল পরিমাণ টাকা সরকারের কোষাগারে ঢুকবে বলে কেন্দ্রের অনুমান। বিপিসিএল-এর শেয়ার ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষেও বিক্রি করা হয়েছে। তবে তা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ওএনজিসি’র কাছে। ফলে তার প্রভাব দেশের মানুষ টের পায়নি। বিপিসিএল-এর বেসরকারিকরণে সংসদের অনুমোদন লাগবে বলে ২০০৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল। ফলে চেষ্টা করেও সেই সময় বাজপেয়ি সরকারকে বিপিসিএল-এর বেসরকারিকরণ থেকে সরে আসতে হয়। মোদি সরকার সেই আইন বাতিল করে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলির বেসরকারিকরণে উঠে পড়ে লেগেছে। ভারতের খুচরো জ্বালানি বিক্রির বাজারে ঢুকতে আগ্রহী সৌদি আরবের আরামকো এবং ফরাসি সংস্থা টোটাল। বিপিসিএল বিক্রি হলে তা কিনতে এরা আগ্রহী হবে বলে জানা গিয়েছে। তা ছাড়াও রিলায়েন্সসহ দেশের দু-একটি সংস্থারও নজর রয়েছে। সম্ভাব্য বেসরকারি ক্রেতারা ৫০ শতাংশের বেশি শেয়ার চাইবে। অন্তত নির্ধারক পরিমাণ অংশীদারিত্ব চাইবে। সেই কারণে সরকারের হাতে থাকা শেয়ার প্রায় পুরোটা বিক্রির কথাই ভাবা হচ্ছে। দেশের টেলিকম ব্যবস্থা বেসরকারি কোম্পানির হাতে গেলে কী হয় তা মানুষ টের পেতে শুরু করেছেন। তারা যখন খুশি, যেমন খুশি দাম বাড়াবে। পরিষেবায় ঘাটতি হলেও বলার কেউ নেই। সেই অবস্থা যে তেল শিল্পে হবে না তার গ্যারান্টি কোথায়?
ভারত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড প্রতি বছর কেন্দ্রীয় সরকারকে ৭ হাজার কোটি টাকা লভ্যাংশ দিচ্ছে। গত পাঁচ বছরে মোদি সরকার ভারত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড বা বিপিসিএল-এর কাছ থেকে মোট ৩৫ হাজার কোটি টাকা লভ্যাংশ নিয়েছে। দেশের দুই তেল সংস্থা বিপিসিএল এবং এইচপিসিএল-এর পেট্রোল পাম্পগুলি থেকে বছর পেট্রোল বিক্রি হয় ৩০,৫০০ কোটি টাকার। তবুও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শোধনাগার ও খুচরো পেট্রোপণ্য বিপণন সংস্থা ভারত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেডকে বিক্রির সিদ্ধান্ত পাকা করে ফেলেছে সরকার। এইচপিসিএল-এর বেসরকারিকরণের ব্যাপারেও অনেক দূর এগিয়েছে কেন্দ্র। সারা দেশে এইচপিসিএল-এর মোট ১৫ হাজার ১২৭টি পেট্রোল পাম্প রয়েছে। এই পেট্রোল পাম্পগুলিতে প্রতি বছর লাভের পরিমাণ বাড়ছে। গত বছর এইচপিসিএল-এর পেট্রোল পাম্পগুলিতে ২২ শতাংশ লাভ বেড়েছে। সোনার ডিম পাড়া হাঁস মেরে আমাদের লাভ কী?
বিপিসিএল-এর চারটি শোধনাগার রয়েছে মুম্বই, কোচি, মধ্যপ্রদেশের বীণা ও অসমের নুমালিগড়ে। মোট ৩ কোটি ৮৩ লক্ষ মেট্রিক টন অশোধিত তেলকে জ্বালানিতে শোধন করার সক্ষমতা রয়েছে সংস্থার। এর ১৫,০৯৭টি পেট্রোল পাম্প রয়েছে। এলপিজি ডিস্ট্রিবিউটর রয়েছে ৬০০৪টি। বিপিসিএল-এর কর্মচারীর সংখ্যা ১২ হাজার। এই তেল কোম্পানির অধীনস্ত সংস্থা ১১টি। বিপিসিএল-এ কেন্দ্রের অংশীদারিত্ব আছে ৫৩.৩ শতাংশ। দেশি ও বিদেশি উভয় ধরনের বেসরকারি সংস্থার হাতেই তা বিক্রি হবে বলে খবর। বিশেষ করে বিদেশি সংস্থাকে জ্বালানির খুচরো বাজারে ডেকে আনতে আগ্রহী কেন্দ্র। চলতি আর্থিক বছরে অন্তত তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সংখ্যাগরিষ্ঠ শেয়ার বিক্রির পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্র। বিনিয়োগ ও সরকারি সম্পদ পরিচালনা দপ্তরকে নীতি আয়োগের সঙ্গে কথা বলে সংস্থাগুলির তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। এমনভাবে এই তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে, যাতে তা ক্যাগ বা ভিজিল্যান্স কমিশনের নজরদারির বাইরে থাকতে পারে। অন্যদিকে দেশে মন্দা চলছে, কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে দেড় লক্ষ কোটি টাকা ছাড় দেওয়ার পরে কেন্দ্রের রাজস্ব ঘাটতি বেড়েছে। এখন দ্রুত সরকারি সংস্থা বেচে সেই টাকার কতটা ঘরে তোলা যায়, তার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যেসব সংস্থায় সরকারের সরাসরি ৫১ শতাংশের বেশি শেয়ার রয়েছে, সেগুলিকে বিক্রি করা ছাড়াও সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির উল্লেখযোগ্য শেয়ার থাকা সংস্থাতেও এই বিক্রি শুরু করা হবে। এই উদ্যোগ দেশের মানুষের কতটা ভালো করবে, তা কিন্তু এখনও স্পষ্ট নয়!