বিমা, মেয়াদি সঞ্চয় বা শেয়ার থেকে অর্থকড়ি আয় বাড়বে। ঝামেলা থেকে দূরে থাকুন। ধর্মে মতি। ... বিশদ
কয়েক দশক ধরেই থিয়েটারের সঙ্গে সম্পৃক্ত রেখেছি নিজেকে। কিন্তু আজই সংশ্লিষ্ট নাটকের শেষ শো, এটা জেনে অভিনয় করিনি। পরে হয়তো বুঝেছি, এই নাটক আর হবে না। এর সঙ্গে জীবনের অদ্ভুত মিল রয়েছে। মৃত্যু পূর্বনির্ধারিত নয়, হঠাৎ করেই আসে। তবে যদি ভেবে নিই যে, এই শো’ই শেষ, তাহলে একঝাঁক রোমাঞ্চ মনের কোণে বাসা বাঁধে। আগামী শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে আইএসএল ফাইনালে আমার প্রিয় দল মোহন বাগান খেলবে মুম্বই সিটি’র বিরুদ্ধে। লিস্টন, মনবীরদের মানসিকতা তাই বুঝতে অসুবিধা হয় না। প্রত্যেকে উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছে। আবেগের বারুদে দেশলাই কাঠি স্রেফ ছোঁয়ানোর অপেক্ষা।
ফুটবলে যেমন কোচ, নাটকে তেমনই পরিচালক। মাঠে কিংবা মঞ্চে কী করতে হবে, কতটা করতে হবে তা ঠিক করে দেন তাঁরাই। কিন্তু আমরা তার থেকেও বেশি কিছু মেলে ধরতে চাই। কারণ, ফুটবলার বা নাট্যশিল্পীরা বিশেষ দিনে নিজেদের শুধুই মাঠে-মঞ্চে দেখেন না। দর্শকদের মধ্যেও নিজেকে খুঁজে নেওয়া অভ্যাসে পরিণত হয়। এই অতিরিক্ত আকাঙ্ক্ষাই কুশীলবদের অমৃতের স্বাদ দেয়। গোটা মরশুমে লিস্টন ও মনবীর যেভাবে উইং দিয়ে ডানা মেলেছে তার জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। গতিশীল দৌড়- বডি ফেইন্টে বিপক্ষ ডিফেন্ডারকে ছিটকে দিয়ে ঠিকানা লেখা সেন্টার কিংবা নিখুঁত শটে জাল কাঁপানোর যে কী অনাবিল আনন্দ, সেই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। এই মোহন বাগান খেতাবের অন্যতম দাবিদার। কেন জানেন? প্রতিটি ম্যাচেই শেষ পর্যন্ত লড়াই করে ফুটবলাররা। ডাগ-আউটে চনমনে থাকেন মিস্টার আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। একজনের ভুল ঢেকে দিতে বাকিরা মাঠে জীবন পর্যন্ত দিতে পারে। টিম স্পিরিট তো একেই বলে। ফুটবল হোক বা নাটক, এর কোনও বিকল্প নেই।
শনিবার চলতি মরশুমের বিজয়া। স্বাভাবিকভাবেই ফুটবলারদের মন কিছুটা হলেও ভারাক্রান্ত থাকবে। পাশাপাশি জনি কাউকো, শুভাশিসদের মধ্যে তৈরি হবে এক বিশেষ উন্মাদনা। প্রত্যেকেই ভাবছে, শনিবার আমার মধ্যে যা শ্রেষ্ঠ, যা সুন্দর তা উজাড় করে দেব। এই দর্শন থেকে দূরে থাকার উপায় নেই। অধিকাংশ সময় যা ফুটবলারদের পারফরম্যান্সের গ্রাফ উপরের দিকে তোলে। তবে এটাও ঠিক, প্রত্যাশা পূরণের অফুরান চাহিদা মাঝেমধ্যে বিপদও ডেকে আনে।
ফাইনালে মোহন বাগান ফুটবলাররা মাঠে শিল্পের ডানা মেলে ধরতে তৈরি। গোলরক্ষক বিশাল কাইথ থেকে শুরু করে স্ট্রাইকার জেসন কামিংস— প্রত্যেকে। যুবভারতী তো তাদের কাছে শুধু মাঠ নয়, জীবনের মঞ্চও বটে। নিজের পারফরম্যান্স নিজেই বিচার করতে তৈরি সবাই।
পারফর্মারদের চাপ ছিল, আছে এবং থাকবেও। এখনও মঞ্চে উঠলে মনে হয়, কেন যে নাট্যশিল্পী হলাম। কিন্তু নাটক এগনোর সঙ্গে সঙ্গে সেই চাপই অনুপ্রেরক হয়ে ওঠে। ফুটবলের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। সেমি-ফাইনালের দ্বিতীয় লেগের সংযোজিত সময়ে সাহাল আব্দুল সামাদের গোলটা নিশ্চয়ই মনে আছে আপনাদের? মনবীরের পাস বিপক্ষ গোলরক্ষক অমরিন্দরের হাতে লেগে ওর কাছে এল। সেই মুহূর্তে সাহালের অবস্থাটা একবার ভাবুন। পাহাড়প্রমাণ চাপ, গ্যালারি উত্তেজনায় টগবগ করছে। কী করবে আর কী করবে না, তা ভাবার আগেই বল ওর মাথা স্পর্শ করে গোললাইন পেরিয়ে যায়।
চলতি মরশুমে মোহন বাগানের সেরা ফুটবলার দিমিত্রি পেত্রাতোস। মন ও মস্তিষ্কের মিলনই তো সেরাটা সহজে বের করতে পারে। তবে দীপক টাংরিকে নিয়ে আমার বেশ ভয় আছে। অযথা মাথা গরম করে ফেলে ছেলেটি। সে যাই হোক, শনিবার মুম্বইয়ের মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে আমরাই ফেভারিট। এবারই তো কলকাতায় ওদের হারিয়ে লিগ-শিল্ড জিতেছে মোহন বাগান। ফাইনালে মাঠে এগারো জন যোদ্ধা তো রয়েইছে। আর দ্বাদশ ব্যক্তি তো যুবভারতীর গ্যালারি। প্রিয় দলের জন্য রইল অফুরান শুভেচ্ছা।