বিমা, মেয়াদি সঞ্চয় বা শেয়ার থেকে অর্থকড়ি আয় বাড়বে। ঝামেলা থেকে দূরে থাকুন। ধর্মে মতি। ... বিশদ
শতায়ু পরেশচন্দ্রের শরীর দেখলেই বোঝা যায় একসময় ভীষণ কর্মঠ মানুষ ছিলেন। এখন বয়সের ভারে শরীর ন্যুব্জ। হাতের আঙুল বেঁকে গিয়েছে। কানে কম শোনেন, ঝাপসা দেখেন চোখে। কিন্তু অসম্ভব মনের জোর। শুক্রবার দুপুরে তাঁর বাড়ি পৌঁছতেই গলার শব্দ শুনে নিজেই বেরিয়ে এলেন। দুয়ারে টাইলস বাঁধানো বেঞ্চে বসলেন পা ঝুলিয়ে। একাই স্নান, খাওয়া, ওষুধ নেওয়া সবই করেন। ছবি তোলার জন্য সাদা ফতুয়া চেয়ে নিলেন নাতির কাছে। বিকেল হলেই পাড়ার কচিকাঁচাদের সুর করে রামায়ণ পাঠ করে শোনান। তবে এখন চশমা পরেও অনেক ঠাউরে ঠাউরে পড়তে হয়। আজীবন কংগ্রেসি পরেশচন্দ্র ‘মমতাদি’ বড় ভক্ত। তাঁর দুই ছেলে এবং দুই মেয়ে। বড় ছেলে কয়েক বছর আগে ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। গতবছর ছোট বউমা ক্যান্সারে মারা যান। বর্তমানে তাঁর ছোট ছেলে গোবিন্দ বেতাল এবং বড় নাতি বিশ্বজিৎ বেতাল গৃহকর্তা। সন্তান শোক, প্রিয়জন হারানোর শোক ভুলে থাকেন কাজের মধ্যে। এই বয়সেও ছেলে বউমাদের আপত্তি সত্ত্বেও মন দিয়ে করে চলেন গৃহস্থালীর খুঁটিনাটি কাজ।
পরেশচন্দ্র বেতাল বলেন, গান্ধীজি তৎকালীন সুতাহাটার বাসুদেবপুর গ্রামে কুমারচন্দ্র জানার ডাকে সভা করতে এসেছিলেন। সেই সভায় গান্ধীজিকে কাছ থেকে দেখেছেন। বৃটিশ পুলিসের মাথায় লাল পাগড়ি থাকত। স্বাধীনতার আগে গ্রামে ‘লালপাগড়ি’ দেখলেই সবাই ছুটে পালাতাম। স্বদেশি মিটিংয়ের খবর পেলেই ওরা আসত। সুতাহাটা থানা দখলের সময় গ্রাম থেকে তিনিও গিয়েছিলেন মিছিলে। হলদিয়ার কারখানা তৈরির সময় রাস্তাঘাটের কাজ করতে যেতেন গ্রাম থেকে। এই শিবরামনগর গ্রামের জমিও শিল্পের জন্য অধিগ্রহণ হয়েছে। গ্রামের কোল ঘেঁসেই রয়েছে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সহ একাধিক কারখানা। কথা বলতে গেলে বয়সের কারণে সামান্য জড়িয়ে যায় পরেশচন্দ্রের কথা। তিনি বলেন, অনেক ভোট দিয়েছি, এখনও তো বার্ধক্য ভাতা পেলাম না। রেশন দিত, তাও বন্ধ করে দিয়েছে। এবার ঠিক করেছি, আর ভোট দেব না। প্রতিবারই সবাই আশ্বাস দেয়, ভোট মিটলে কারও দেখা মেলে না। বাড়িতে ভোট কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হবে শুনে বলেন, কোনও দরকার নেই, আমি লাঠি নিয়ে হেঁটে বুথে যেতে পারি এখনও। পরেশচন্দ্রের ভোট কেন্দ্র কিসমত শিবরামনগর পশ্চিমপল্লি শিশু শিক্ষাকেন্দ্র।
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য উত্তম শাসমল বলেন, পরেশদাদু রেশন পেতেন। কিন্তু বয়সের কারণে এখন হাতের ছাপ মিলছে না, তাই রেশন বন্ধ রয়েছে। বার্ধক্য ভাতার জন্য ব্যাঙ্কের পাশ বই দরকার। হাতের ছাপের কারণে সেটাও করা যায়নি। ফলে ওই সুবিধেগুলি দেওয়া যাচ্ছে না। বিধায়ক তিলক চক্রবর্তী বলেন, ওদের পরিবারকে যোগাযোগ করতে বলেছি। সরকারি সুযোগ ওঁর প্রাপ্য, মানবিকভাবে সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। পরেশচন্দ্র বেতাল।-নিজস্ব চিত্র