উচ্চতর বিদ্যায় সফলতা আসবে। সরকারি ক্ষেত্রে কর্মলাভের সম্ভাবনা। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-প্রণয়ে মানসিক অস্থিরতা ... বিশদ
ইতিহাসের শহর মুর্শিদাবাদ। একদা সুবে বাংলা তথা বাংলা-বিহার-উড়িশার রাজধানী মুর্শিদাবাদ শহরে রয়েছে হাজারদুয়ারি প্যালেস মিউজিয়াম, কাটরা মসজিদ সহ একাধিক নবাবি স্থাপত্য। নবাবি আমলের প্রাসাদ, মসজিদ, স্মৃতি সৌধের পাশাপাশি রয়েছে বেশ কয়েকটি গেট বা তোরণ।
গেটগুলির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চকবাজার এলাকায় তিনটি প্রবেশ পথ বিশিষ্ট ত্রিপলি গেট এবং দক্ষিণ দরওয়াজা। সুউচ্চ এই দু’টি গেট পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগ অধিগ্রহণ করে সম্প্রতি সংস্কার করেছে। নবাবি আমলের দু’টি গেট পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগ অধিগ্রহণ করলেও চরম অবহেলায় পড়ে রয়েছে চকবাজার এলাকায় ত্রিপলি গেট সংলগ্ন তিনটি তোরণ।
মুর্শিদাবাদের নবাবি ইতিহাস থেকে জানা যায়, বাংলার প্রথম স্বাধীন নবাব তথা মুর্শিদাবাদ শহরের প্রতিষ্ঠাতা মুর্শিদকুলি খাঁর মেয়ে আজিমুন্নেসার স্বামী সুজাউদ্দিন খাঁর সময়ে তোরণগুলি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণকাল আনুমানিক ১৭২৯-১৭৩২ সালের মধ্যে ধরা হয়। চকবাজার মোড়ে একটি তোরণ পূর্বদিক অর্থাৎ মুর্শিদাবাদ স্টেশনের দিকে, অপরটি পাচরাহা মোড়ের দিকে এবং তৃতীয়টি জেলখানা রোডের দিকে অবস্থিত। নবাব সুজাউদ্দিন তিনটি সুবা বাংলা, বিহার ও উড়িশার নামানুসারে তোরণ তিনটি নির্মাণ করান। কথিত আছে, বাংলা তোরণ দিয়ে বাংলার রাজস্ব, বিহারের তোরণ দিয়ে বিহারের রাজস্ব এবং উড়িশার তোরণ দিয়ে উড়িশার রাজস্ব নবাবের কাছে আসত। নবাবি শাসনের স্মারক এই তিনটি তোরণ এখন কোনওমতে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। দেখভাল, নজরদারির অভাবে জল, ঝড়, বৃষ্টি, রোদ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে প্রতিনিয়ত একটু একটু করে ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। তিন সুবা নামাঙ্কিত তিনটি তোরণের পাশাপাশি চকবাজার থেকে প্রায় পঞ্চাশ ফুট দূরে রণকব্জা নামে তিন শতাধিক বছরের প্রাচীন আরও একটি তোরণ রয়েছে। নবাবি স্থাপত্য কীর্তির অন্যতম নিদর্শন এই তোরণটি প্রায় ধ্বংসের মুখে। লালবাগের বাসিন্দা ইতিহাসের ছাত্র মিলন কুণ্ডু বলেন, সরকারি উদাসীনতায় মুর্শিদাবাদের নবাবদের অনেক স্থাপত্য নিদর্শন নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অনেকগুলি প্রায় ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে। নবাবি আমলের এই তোরণগুলিও অনাদরে ও অবহেলায় কোনপ্রকারে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে।
এইগুলি নষ্ট হয়ে গেলে ইতিহাসের ছাত্র, গবেষক এবং পর্যটকরা বঞ্চিত হবেন। জিয়াগঞ্জের বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক অরূপ ঘোষ বলেন, নবাবি আমলের স্থাপত্য নিদর্শনকে টিকিয়ে রাখতে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। মুর্শিদাবাদ হেরিটেজ অ্যান্ড কালচারাল ডেভেপমেন্ট সোসাইটির সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, নবাবি আমলের তোরণগুলি নবাবি ইতিহসের ধারক ও বাহক। অথচ ইতিহাসের এই উপাদানগুলি নষ্ট হতে বসেছে। গত কয়েক দশক ধরে সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। নবাবি ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখতে তোরণগুলি সংরক্ষণ ও সংস্কার করা হোক।