শরীর-স্বাস্থ্যের আকস্মিক অবনতি। বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ আসতে পারে। সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক বিবাদ। ব্যবসায় নতুন সুযোগ ... বিশদ
বুধবার মেদিনীপুরের ডিভিশনাল কমিশনার এ সুব্বাইয়া তমলুকে জেলাশাসকের কনফারেন্স হলে বুলবুল ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে একটি রিভিউ মিটিং করেন। সেখানে জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবব্রত দাস, জেলাশাসক পার্থ ঘোষ সহ জেলা প্রশাসন, কৃষি, সেচ, খাদ্য ও সরবরাহ, মৎস্য, বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা, পূর্ত সহ অন্যান্য দপ্তরের অফিসাররা উপস্থিত ছিলেন। বিকেলে বুলবুল ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জেলাস্তরে গঠিত টাস্কফোর্সের বৈঠক হয়। বিভিন্ন দপ্তর থেকে ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট জেলা প্রশাসনের হাতে এসেছে। তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি দেখানো হয়েছে কৃষিতে। জেলায় কৃষিতে ৫৮৫কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। জেলাশাসক বলেন, বিভিন্ন ব্লক থেকে বুলবুল ঝড়ে বাড়ির ক্ষয়ক্ষতি সংক্রান্ত রিপোর্ট ১৬ নভেম্বরের মধ্যে চাওয়া হয়েছে।
গত ৯ নভেম্বর রাতে বুলবুল ঝড়ে পূর্ব মেদিনীপুরের সমুদ্র উপকূলবর্তী রামনগর-১ ও ২, দেশপ্রাণ এবং খেজুরি-২ ব্লকে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও কাঁথি-১ ও ৩, নন্দীগ্রাম-১ ও ২, খেজুরি-১ ব্লকেও বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নন্দীগ্রাম-২ ব্লকে ভেটুরিয়ায় বাড়িতে গাছ উপড়ে পড়ে সুলতা দাস নামে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর জখম হয়েছেন মৃতার ছেলে আকাশ দাস। প্রাথমিক হিসেব অনুযায়ী, জেলায় মোট ১১হাজার ৪১৬টি কাঁচাবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারমধ্যে ২৮২৯টি বাড়ি সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাকি ৮৫৮৭আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৬হাজারের বেশি ত্রিপল বণ্টন করা হয়েছে। অনেকেই ত্রিপল খাটিয়ে তার নীচে বসবাস করছেন। মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী ১০নভেম্বর নন্দীগ্রাম ও খেজুরির বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ভিজিট করেন। পরদিন তিনি রামনগর-১ ব্লকের ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলবর্তী এলাকা পরিদর্শন করেন। ৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে সেচদপ্তরের মাধ্যমে শঙ্করপুর থেকে জলধা পর্যন্ত ২.৮ কিলোমিটার সমুদ্রপাড় বরাবর বাঁধানোর কাজ দ্রুত শুরু হবে ঘোষণা করেন।
ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির তালিকা সংগ্রহ করে জেলায় পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক। বিডিওরা তালিকা সংগ্রহ করছেন। তারপর মহকুমা শাসকের অফিস হয়ে সেই তালিকা এসে পৌঁছবে জেলাশাসকের অফিসে। ১৬ নভেম্বরের মধ্যে তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা সংগ্রহ করার কাজ চলছে। ওই কাজে যাতে নিরপেক্ষতা বজায় থাকে, তার জন্য গ্রাম পঞ্চায়েতের এগজিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্টদের সক্রিয় হতে বলা হয়েছে।
বুলবুল ঝড়ের পর বিভিন্ন ব্লক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির একটি তালিকা জেলায় পাঠানো হয়েছিল। তাতে দেখা যায়, দেশপ্রাণ ব্লকে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০০০ বাড়ি। সম্পূর্ণভাবে ৮০০ কাঁচাবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ব্লক থেকে রিপোর্ট পাঠানো হয়। এছাড়াও খেজুরি-২ ব্লকে ৪০০টি বাড়ি সম্পূর্ণ এবং ৬০০টি কাঁচাবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একইভাবে রামনগর-১ ব্লকে সম্পূর্ণ ২০০টি এবং আংশিক ৯০০টি কাঁচাবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যান্য ব্লকেও প্রচুর সংখ্যক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বুলবুল ঝড়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় উপকূলবর্তী বিভিন্ন এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থেকে মোট ২২হাজার ৪০০মানুষকে সরানো হয়েছিল। তারমধ্যে ৬৩টি ক্যাম্প খুলে ৮৩০০জনকে রাখা হয়েছিল। ঝড়ে বিপুল সংখ্যক গাছপালা ভেঙে পড়ে অনেক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশকিছু কাঁচাবাড়ির চালা উড়ে গিয়েছে। ঝড়ে ৮০০-র বেশি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ে গিয়েছিল। বাড়ির মালিকের ছবি সমেত ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সামনে গৃহকর্তাকে রেখে ছবি তুলে তালিকা পাঠাতে হবে।
বুধবার তমলুকে ডিভিশনাল কমিশনারের উপস্থিতিতে বুলবুল নিয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে মিটিং হয়। সেই মিটিংয়ে কৃষি, মৎস্য, পূর্ত, বিদ্যুৎ বণ্টন সহ সবকটি বিভাগের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জেলায় কত সংখ্যক মানুষ বুলবুলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেই সংক্রান্ত তালিকা সংগ্রহের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দপ্তর থেকে ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক তালিকা জমা করা হয়েছে। আজ, বৃহস্পতিবার সেই তালিকা নিয়ে ডিভিশনাল কমিশনার এবং জেলাশাসক মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে যোগ দেবেন।