বিদ্যার্থীদের মানসিক উদ্বেগ বৃদ্ধি পাবে। পঠন-পাঠনে আগ্রহ কম থাকবে। কর্মলাভের সম্ভাবনা আছে। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
রামনগর-২ ব্লকের ডেমুরিয়া গ্রামে প্রায় ৩০০বছরের প্রাচীন রথযাত্রাকে ঘিরে মেতে ওঠেন এলাকাবাসী। রথযাত্রায় সম্প্রীতি ও ঐক্যের ছবি বিশেষভাবে ধরা পড়ে। বিগত কয়েকবছর এই মেলা সরকারি অনুমোদনও পেয়েছে। ব্লক প্রশাসনই মেলা পরিচালনা করে। দশদিনের মেলায় নানা প্রান্ত থেকে আসা লক্ষাধিক মানুষের ভিড়ে জমজমাট হয়ে ওঠে ডেমুরিয়া।
প্রসঙ্গত, একদা ডেমুরিয়া এলাকায় মগিনীনারায়ণ চৌধুরী নামে এক ব্রাহ্মণ ছিলেন। তিনি পুরী তীর্থ করতে যেতেন। স্থানীয় মানুষজনকেও পুরী নিয়ে যেতেন। একবার পুরী যাওয়ার পথে বালেশ্বরে তাঁকে জগন্নাথদেব স্বপ্নাদেশ দেন, তোকে আর পুরীতে তীর্থ করতে আসতে হবে না। আমিই যাব তোর ঘরে। মগিনী বাড়ি ফিরে এসে তাঁদের পুকুরঘাটে একটি বড়সড় কাঠ উদ্ধার করেন। সেই কাঠ দিয়েই তিনি জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার বিগ্রহ তৈরি করেন। তিনি মাটির মন্দির গড়ে ত্রিমূর্তির আরাধনা শুরু করেন। সেই বছর থেকে শুরু হয় রথযাত্রাও। প্রথমে মাটির মন্দির থাকলেও বেশ কয়েকবছর হল, নতুন মন্দির তৈরি করে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। নতুন রথও তৈরি হয়েছে।
রথযাত্রা পরিচালন কমিটিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন যেমন রয়েছেন, তেমনি মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজনও রয়েছেন। তাঁরাও এই মেলা পরিচালনা এবং মেলাতে প্রত্যক্ষভাবে শামিল হন। জানা যায়, একটা সময় ডেমুরিয়ার জগন্নাথ মন্দিরের বিশাল সম্পত্তি ছিল। বেশিরভাগই ছিল কাজুবাদামের জঙ্গল। সেই জঙ্গল দেখাশোনা করতেন মুসলিম প্রজারা। পরিবর্তে ইদের সময় তাঁদের টাকা-পয়সা দেওয়া হত। সেই টাকা থেকেই তাঁরা রথের মেলায় দোকানপাট বসাতেন। পরে তাঁরা মেলার সঙ্গেও যুক্ত হন। মেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ওয়াসিম রহমান। মেলা কমিটির সম্পাদক তমালতরু দাস মহাপাত্র বলেন, এই মেলার বৈশিষ্ট্য হল কেবল মহিলারাই সুভদ্রার রথ টানতে পারেন।
এগরার বাসুদেবপুরের প্রায় ৩০০ বছরের পুরানো রথযাত্রা মহকুমার সবচেয়ে প্রাচীন। একদা বাসুদেবপুরের রাজা দুর্গাদাস রায়ের আমলে এই রথযাত্রার সূচনা হয়েছিল। এখানকার রথযাত্রাকে ঘিরে নানা কাহিনী ও জনশ্রুতি রয়েছে। তবে রায় পরিবারের সেই রাজত্ব নেই। কালের নিয়মে রায় পরিবার খণ্ড খণ্ড হয়েছে। পরবর্তীকালে গ্রামবাসীদের হাতে এই রথযাত্রা ও মেলা পরিচালনার দায়িত্ব হস্তান্তর করে রায় পরিবার। তারপর থেকে প্রায় ৩০বছর ধরে ‘বাসুদেবপুর জগন্নাথদেবের রথযাত্রা পরিচালন পর্ষদই রথযাত্রাটি পরিচালনা করে থাকে। পর্ষদের সম্পাদক তথা জেলা পরিষদ সদস্য পার্থসারথি দাস বলেন, রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে আটদিন ধরে মেলা বসে।
কাঁথি-৩ ব্লকের বাহিরীর জগন্নাথ সেবায়েত সমিতি পরিচালিত জগন্নাথদেবের রথযাত্রা পাঁচ শতাধিক বছরের পুরনো। সমিতির সহ-সম্পাদক রাজদুলাল নন্দ বলেন, ১৫৩৪ বঙ্গাব্দে ওড়িশার রাজা বিভীষণ দাস মহাপাত্র বাহিরীতে জগন্নাথদেবের দেউল বা মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেখানেই রথযাত্রা হত। পরবর্তীকালে দস্যুরা জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার বিগ্রহ চুরি করে নিয়ে যায়। তারপর থেকে গ্রামবাসীরা নতুন মন্দির গড়ে নতুন বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই আজ ৩০০ বছরের বেশি সময় ধরে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার আরাধনা হয়ে আসছে। পাশাপাশি প্রতিবছর রথযাত্রাও হয়ে আসছে। অন্যদিকে, ভগবানপুর-২ ব্লকের পাঁউশি চৌরঙ্গি মোড়ে বেশ কয়েক বছরের পুরনো রথ ঘিরে মেলা বসছে। মেলায় প্রচুর চারাগাছ বিক্রি হয়।