রূপাঞ্জনা দত্ত, লন্ডন: ধনকুবের শিল্পপতি থেকে শিক্ষাবিদ। চিকিৎসক থেকে তহবিল সংগ্রাহক। ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথের ৯৪তম জন্মদিন উপলক্ষে প্রকাশিত সম্মানিতদের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন একাধিক ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তিত্ব। চিরাচরিত ঐতিহ্য মেনে প্রতি বছর জুন মাসে প্রকাশ পায় এই তালিকা। যেখানে ব্রিটেনের সংস্কৃতি, শিল্প, চিকিৎসা, অর্থনীতির মতো ক্ষেত্রে অবদানের জন্য নির্বাচিত নাগরিকদের কুর্নিশ জানানো হয়। এ বছর সেই হিসেব ওলটপালট করে দেয় করোনা মহামারী। পিছিয়ে দেওয়া হয় তালিকা প্রকাশের নির্ধারিত সূচি। শনিবার ৪১৪ জন কৃতী ব্যক্তিদের নাম বেরতেই দেখা যায় সেখানে বহু ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাগরিক ঠাঁই পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন জুবের ও মহসিন ঈশা। জন্মসূত্রে তাঁরা গুজরাতি। সাতের দশকে ভাগ্যান্বেষণে দুই ভাই পাড়ি জমান ব্রিটেনে। পেট্রল স্টেশনের মালিকানা দিয়ে ব্যবসায় হাতেখড়ি। এখন তাঁরাই ব্রিটেনের অন্যতম পরিচিত সুপারমার্কেট চেন ‘আসডা’র মালিক। ব্যবসা ও সমাজসেবা মূলক কর্মকাণ্ডে ছাপ রেখেছেন জুবের ও মহসিন। তাঁদের স্বপ্নপূরণের এই জয়গাথাকে সম্মান জানাতে সিবিই (কমান্ডার অব দ্য মোস্ট এক্সেলেন্ট অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার) খেতাব তুলে দেওয়া হয়েছে। একই সম্মান পেয়েছেন যদবিন্দর সিং মালহি। পেশায় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোসিস্টেম সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক। চলতি বছরের গোড়ায় লন্ডনের বিখ্যাত ন্যাচরাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের ট্রাস্টি হিসেবেও নিযুক্ত হয়েছিলেন তিনি। সিবিই ছাড়াও রয়েছে ওবিই (অফিসার অব দ্য মোস্ট এক্সেলেন্ট অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার)। ডিকার্বোনিসেশন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তা অর্জন করেছেন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক নীলয় শাহ। মেডিসিনে অবদানের জন্য একই সম্মান পেয়েছেন ডঃ সঞ্জীব নিচানি।
করোনা রুখতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণকারীদের নাম এ বছর বিশেষভাবে উঠে এসেছে। সেখানেও ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের জয়জয়কার! ব্রিটেনের কোভিড যুদ্ধে অল্পদিনে শিরোনামে আসেন রাজিন্দার সিং হারজাল। সত্তরোর্ধ হারজাল বিভিন্ন ফিটনেস ভিডিও আপলোড করে লকডাউনের দিনে ঘরবন্দি মানুষদের মানসিকভাবে উদ্বুদ্ধ রাখতেন। এভাবেই ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসেসের হাতে তিনি তুলে দেন প্রায় ১৪ হাজার পাউন্ড অর্থ। শনিবার ‘স্কিপিং শিখ’ রাজিন্দারকে এমবিই (মেম্বার অব দ্য অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার) খেতাব দিয়ে কুর্নিশ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি সাগরপারের শিখ সম্প্রদায়কে মানসিকভাবে সক্রিয় রাখার সম্মান হিসেবে একই পদক পেয়েছেন সন্দীপ সিং দাহেলি। করোনার দিনে গুরুদ্বার বন্ধ থাকায় যিনি অনলাইন পোর্টালে বিশেষ প্রার্থনার ব্যবস্থা করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন।
এছাড়াও এমবিই সম্মানিতদের তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছেন মনজিৎ কউর গিল (সমাজকর্মী), পুষ্কলা গোপাল (নৃত্যশিল্পী), বসন্ত প্যাটেল (পুলিস আধিকারিক) এবং বলজিৎ কউর সান্ধু (সমাজকর্মী)। ব্রিটিশ ক্যাবিনেটের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এবারের তালিকা বাকি বছরগুলির তুলনায় অনেক বেশি বৈচিত্র্যময়। সেখানে জায়গা করেছেন ১৪ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী। তাছাড়া সম্মানিতদের ৪৯ শতাংশই মহিলা। যা বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।