কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ। যোগাযোগ রক্ষা করে চললে কর্মলাভের সম্ভাবনা। ব্যবসা শুরু করলে ভালোই হবে। উচ্চতর ... বিশদ
বছরের অধিকাংশ সময়ই নদীতে ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকে। ডিম ছাড়ার সময় ২২দিন, জাটকা (খোকা ইলিশ) বড় হওয়ার সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে ২৪০ দিন এবং সাগরে মৎস্য সম্পদ রক্ষা করতে ৬৫ দিন— এই তিন দফায় মোট ৩২৮ দিন সাগর বা নদীতে ইলিশ মাছ ধরার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকে বাংলাদেশ সরকারের। এছাড়াও, বাংলাদেশে ইলিশের অভায়শ্রমগুলোতে ইলিশ মাছ ধরার ক্ষেত্রে বিশেষ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রক। নিষেধাজ্ঞার সময় সরকারের পক্ষ থেকে জেলেদের সহায়তা দেওয়া হলেও কিছু জেলে চোখ ফাঁকি দিয়ে বছরের বেশিরভাগ সময়ই সাগর ও নদীতে মাছ ধরে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশের মৎস্য মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম দফায় প্রতি বছর অক্টোবর মাসের (আশ্বিনের দ্বিতীয় পক্ষ ও কার্তিকের প্রথম পক্ষে) ২২ দিন দেশের সব নদ-নদীতে ইলিশ মাছ ধরার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমা ইলিশের ডিম ছাড়ার সময়। পরিণত ইলিশ এই সময় ডিম ছাড়ার জন্য সাগর থেকে মিঠে জলের নদীতে আসে। ডিম ছাড়ার সময়টিকে নির্বিঘ্ন করতেই বাংলাদেশ সরকার ওই সময় সব ধরনের মাছ শিকারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তারিখের হেরফেরও হয়। আগে এই সময় ৭ দিন থাকলেও পরবর্তী সময়ে তা ১৪ দিন এবং বর্তমানে ২২ দিন করা হয়েছে।
দ্বিতীয় দফায় জাটকা (২৫ সেন্টিমিটার লম্বা ইলিশ) ইলিশকে বড় হওয়ার সুযোগ দিতে বছরের একটি বড় সময় নদীতে বা সাগরে ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞ জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার। এটি করা হয় ১ নভেম্বর থেকে পরবর্তী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। এই ৮ মাস বা ২৪০ দিন। এই আট মাস খোকা ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ। তবে এই আট মাস (২৪০ দিন) জাটকা ধরা নিষেধ থাকলেও বড় সাইজের ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। এই সময় বাচ্চা ইলিশ সংরক্ষণে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচিও গ্রহণ করে মৎস্য মন্ত্রক। জাটকা সংরক্ষণে নদীতে পরিচালিত হয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বছরের তৃতীয় দফায় সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে প্রতিবছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত এই ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে বন্ধ থাকবে সব ধরনের মাছ ধরা। বাণিজ্যিক ট্রলারের পাশাপাশি সব ধরনের নৌযানের ক্ষেত্রেও এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য। বছরের মে মাসের শেষের দিক থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে বিভিন্ন প্রকারের মাছসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণির প্রজননকাল। এই কারণেই সাগরের প্রাণিজ সম্পদ রক্ষার পাশাপাশি সরকারের মৎস্য ভাণ্ডারের পরিমাণ বাড়াতে ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ আহরণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মৎস্য মন্ত্রক। এই তালিকায় সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি চিংড়ি, কাঁকড়া ধরাও নিষেধ। এই নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে ইলিশ ধরা জেলেরাও বাদ যান না। যদিও ইলিশ ধরা জালের ফাঁস দুই ইঞ্চি। এই জালে সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি চিংড়ি, কাঁকড়ার মতো ছোট প্রাণী আটকা পড়ে না।
এর বাইরেও ইলিশের প্রজনন মরসুমের কারণে বাংলাদেশের ছ’টি অভয়াশ্রমে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল মাছ ধরার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। দীর্ঘ দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে ৩০ এপ্রিল রাত ১২টা থেকে নদীতে ইলিশ মাছ ধরা শুরু করেন জেলেরা। ইলিশের জন্য আগে মোট ৫টি অভয়াশ্রম থাকলেও সম্প্রতি বরিশালের আশপাশের ৮২ কিলোমিটার নদীপথকে নিয়ে নতুন অভায়শ্রম ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার। এই ৬টি অভয়াশ্রম হচ্ছে— পটুয়াখালির কলাপাড়ায় আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিলোমিটার, চর ইলিশার মদনপুর থেকে ভোলার চরপিয়াল পর্যন্ত মেঘনা নদীর ৯০ কিলোমিটার, ভোলার ভেদুরিয়া থেকে চররুস্তম পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার, চাঁদপুরের ষাটনল থেকে চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনার ১০০ কিলোমিটার, শরিয়তপুরের নড়িয়া থেকে ভেদরগঞ্জ পর্যন্ত পদ্মার ২০ কিলোমিটার এবং বরিশাল সদরের কালাবদর নদীর হবিনগর পয়েন্ট থেকে মেহেন্দিগঞ্জের বামনির চর পয়েন্ট পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার, মেহেন্দিগঞ্জের গজারিয়া নদীর হাটপয়েন্ট থেকে হিজলা লঞ্চঘাট পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার এবং হিজলার মেঘনার মৌলভিরহাট পয়েন্ট থেকে মেহেন্দিগঞ্জ সংলগ্ন মেঘনার দক্ষিণ-পশ্চিম জাঙ্গালিয়া পয়েন্ট পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার। এছাড়া আড়িয়াল খাঁ, নয়নভাংগুলি ও কীর্তনখোলা নদীর আংশিক অভয়াশ্রমটির অন্তর্ভুক্ত।
গত তিনবছর মা-ইলিশ সংরক্ষণের সময় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জেলেদের সাহায্য বাবদ ৩ লক্ষ ৯৫ হাজার ৭০৯টি জেলে পরিবারকে ২০ কেজি হারে মোট ৭,৯১৪ মেট্রিকটন চাল দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের ‘জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ-২০১৯’ পালনের সময় সরকার জেলেদের খাদ্য সহায়তার পরিমাণ বাড়িয়ে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৬৭৪টি জেলে পরিবারের জন্য ৪০ কেজি হারে মোট ৩৯ হাজার ৭৮৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করেছে। এই সময়ে জাটকার সম্প্রসারিত নদীতীরবর্তী ১৩টি জেলার ৫১ উপজেলায় মোট ৪৭ হাজার ৪৮০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
আর এপাড়ে? মৎস্যবিলাসী বাঙালির রসনায় সুখ নেই! মাছ খাওয়ার অর্ধেক মজাই যেন মাটি হয়ে গিয়েছে। মনের মতো ইলিশ এখন আর মেলে না। জোগান শোচনীয় ভাবে কম। ইলিশের মরসুমেই দিনের পর দিন রুপোলি শস্যের আকাল চলে বাজারে। যা মেলে, তার বেশিটাই ছোট ইলিশ। তাতে স্বাদের ঘাটতি ষোলো আনা তো বটেই। তার উপরে প্রশ্নের কাঁটা, নিষেধের বেড়াজাল পেরিয়ে খুদে ইলিশ বাজারে পৌঁছচ্ছে কী করে? বিশেষজ্ঞেরা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন, ইলিশের উৎপাদন কমতে থাকার অন্যতম প্রধান কারণ, খুদে ইলিশ ধরা। এই রাজ্যে ছোট ইলিশ ধরা ও কেনাবেচা নিষিদ্ধ। তা সত্ত্বেও এক শ্রেণির ধীবর ও ব্যবসায়ীকে কিছুতেই বাগে আনা যাচ্ছে না। তাহলে কি বড় ইলিশের স্বাদ নিয়ে অতৃপ্তি থেকে যাবে?