বিমা, মেয়াদি সঞ্চয় বা শেয়ার থেকে অর্থকড়ি আয় বাড়বে। ঝামেলা থেকে দূরে থাকুন। ধর্মে মতি। ... বিশদ
অবিনাশ শর্মার বাড়িতে সকলে জানে, সে এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের ফ্রন্ট অফিস এক্সিকিউটিভ। লোন ডিসবার্সমেন্ট সেকশনে কাজ করে। পুরনো ভোপালের রেলওয়ে কলোনি থেকে রোজ সে ফর্মাল ড্রেস পরে বেরিয়ে আসে ল্যাপটপ নিয়ে। ব্যাগের ল্যাপটপ তার নিজের নয়। বন্ধুর। সপ্তাহে তিনদিন সে ধার করে। শুধু রাতটুকু নিজের কাছে রাখবে বলে। রাতে এবং সকালে বেরনোর সময় বাবা, মা, বোন যেন দেখতে পায় অবিনাশের ‘অফিসের ল্যাপটপ’। আসলে সে বাড়ি থেকে বেরিয়েই চলে যায় এমপি নগর। নিউ ভোপালের এক অন্য জগৎ।
এমপি নগরে দু’টি জোন। ওয়ান এবং টু। পুরনো ভোপাল থেকে দু’টি উড়ালপুল, নিউ মার্কেট এবং ইন্ডিয়া কফি হাউস পেরিয়ে দু’দিকে ছড়ানো এই এমপি নগরের দুই জোনে প্রবেশ করলে বোঝা যাবে, ভারতের স্নাতক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা ছেলেমেয়েদের হতাশা, সংগ্রাম, উচ্চাশা, স্বপ্নভঙ্গ কী বেদনাদায়ক জায়গায় পৌঁছেছে। ইউপিএসসি, এসএসসি, সিএ, কম্পিউটার অ্যাল্পিকেশন অথবা এনইটি কোর্সের ইনস্টিটিউট, সঙ্গে সব ব্যাঙ্কের শাখা, পড়ুয়াদের হস্টেল, অসংখ্য হোটেল এবং খাবার দোকান—এই হল ভোপালের অফিসপাড়া। স্টুডেন্ট মহল্লা। এবং বেকারত্বের শিকল ছিঁড়তে মরিয়া কলোনি। এটাই এমপি নগর। সারিবদ্ধ দোকানে খাবার বিক্রি হচ্ছে, ফর্ম বিক্রি হচ্ছে, চা বিক্রি হচ্ছে, আর বিক্রি হচ্ছে স্বপ্ন। এই ইনস্টিটিউটে পড়লে দেশের টপ কলেজে চান্স পাওয়া যাবে। এই প্রশিক্ষণ নিলে যে কোনও ব্যাঙ্ক অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রবেশনারি অফিসার। রেলের যে কোনও গ্রেডের চাকরি। জনকোলাহলে ঠাসা এক দুনিয়া। এই পৃথিবীতেই দিনভর খাবার দোকান অথবা ফটোকপি সেন্টার, পিৎজা জয়েন্ট কিংবা চা সিগারেটের দোকানে ঘুরে বেড়াচ্ছে সিংহভাগ যুব ভারতের মুখ। অবিনাশ শর্মা বললেন, ‘এখানেই কম্পিউটার কোর্স করেছিলাম। প্লেসমেন্ট দেওয়া হয়েছে ব্যাঙ্কের ক্রেডিট কার্ড বিক্রির। আড়াই বছর হয়ে গেল। ১৩ হাজার টাকা বেতন। বাড়িতে ১১ হাজার টাকা দিয়ে বলি একটা কোর্স করছি। তাই টাকা লাগছে। তারপর ওই ২ হাজার টাকায় সারা মাস নিজের খরচ চালাই। একটা কিছু চাকরি চাই। কার্ড বিক্রি করতে না পেরে অফিসের মুখঝামটা সহ্য করা আর সম্ভব হচ্ছে না।’
উত্তরপ্রদেশের বিজনৌর জেলার নাগিনা জনপদের রাহুল সম্বলা ৩০ হাজার টাকা দিয়ে এমসিএ ভর্তির প্রশিক্ষণ কোর্স করছে। জানালেন, সাত মাসের জন্য ৩০ হাজার টাকা। এর বেশি ক্ষমতা নেই। কিছু কিছু মক টেস্ট করেই শেষ। আসলে কিছুই শিখতে পারছি না। কী হবে শিখে? এভাবে চাকরি হবে না। একটা জিনিস বুঝেছি। একটা চক্র কাজ করছে দেশজুড়ে। পনেরো কুড়ি পঁচিশ লক্ষ টাকা দিয়ে এমবিএ পড়তে হবে নামী ইনস্টিটিউটে। তারপর তারাই কোনও বড় কোম্পানিতে চাকরি করিয়ে দেবে। আবার মন্দার দোহাই দেখিয়ে সেই চাকরিও টলোমলো করবে।’ রাহুলের বেতন? ১৬ হাজার টাকা।
ছত্তিশগড়ের সুনীল খাড়গন বিমা কোম্পানির চাকরি করেন। সায়েন্স গ্র্যাজুয়েশনের পর, ইনস্যুরেন্স ম্যানেজমেন্ট নামের একটা কোর্স করেছেন রায়পুরে। তারা পাঠিয়ে দিয়েছে ভোপাল। নামেই চাকরি। বেতন ১৪ হাজার টাকা। দ্বিগুণ খাটুনি। বিমাও বিক্রি করতে হবে। আবার কোন কোন সেক্টরে বিমার চাহিদা আছে, তার সার্ভেও করতে হবে।অবিনাশের সাফ কথা, ‘সাধারণ গ্র্যাজুয়েট বা ছোট কোর্স করা শিক্ষিত যুবকদের কাজের স্টেটাসই তৈরি করতে পারেনি সরকার। ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কেউ পৌঁছয় না। সকলের বেতন এই ১২ থেকে ১৭ হাজারের মধ্যে। বেকারত্ব কোন পর্যায়ে, সেটা এই এমপি নগরে এলে বোঝা যায়। উত্তর, মধ্য ও পূর্ব ভারতের হাজার হাজার ছেলেমেয়ে সস্তার কোর্স করে ভালো চাকরির স্বপ্ন নিয়ে আসছে। সিংহভাগের স্বপ্নভঙ্গ হচ্ছে। মিডল ক্লাস আগামী দিনে ক্রমেই লোয়ার মিডল ক্লাস হয়ে যাবে দেখবেন।’
কাকে ভোট দেবেন? অবিনাশ, রাহুলদের বক্তব্য, ‘বেকারত্ব ইস্যু কংগ্রেস ঠিকভাবে ধরতে পারল না। প্রচারও করতে পারেনি। যুব সমাজের এত রাগ! একটা জোরদার বিকল্পের আভাস পেলেই কেন্দ্রে বদল ঘটানো যায়। কিন্তু সেরকম বিকল্প দিতে পারেনি কংগ্রেস। তাই কেউ নিজের ভোট নষ্ট হওয়া দেখতে চায় না। যে রাজ্যে বিকল্প আছে, সেখানেই বিজেপি হারবে! মিলিয়ে নেবেন আমাদের কথা! যুবশক্তির মধ্যে কিন্তু আগুন জমা হচ্ছে!’