সন্তানের সাফল্যে গর্ব বোধ। আর্থিক অগ্রগতি হবে। কর্মে বিনিয়োগ বৃদ্ধি। ঘাড়, মাথায় যন্ত্রণা বৃদ্ধিতে বিব্রত ... বিশদ
ওঁরা সকলেই কাশ্মীরি মহিলা। একদা কেউ ছিলেন আটপৌঢ়ে বধূ। স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি, ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ছিল ভরা সংসার। কেউ আবার ছিলেন কলেজের কৃতী ছাত্রী। হতে পারতেন ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার কিংবা নিদেনপক্ষে সরকারি কেরানি। কিন্তু এখনও ওঁদের একটাই পরিচয় জেলবন্দি। শ্রীনগর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে ঠাঁই সবার। পৃথক পৃথক মামলায় বিচার চলছে। কারও ট্রায়াল চলছে। কেউ দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাজা খাটছেন। কিন্তু ওঁদের সৃষ্টিকর্মেই এখন দিনরাত মুখর সংশোধনাগার। জীবন-সংশোধনের সময়টাকে বেফালতু কাটাতে চান না কেউই। কারণ, মূলস্রোতে ফিরলেও সমাজ-সংসার ফিরিয়ে নিতে নাও পারে। তবুও বেঁচে থাকতে হবে। আর বাঁচতে হলে রুজিরুটি নিশ্চিত করতে হবে। সেটাই এখন ওঁদের একমাত্র লক্ষ্য। লক্ষ্যপূরণে অকৃপণ সহযোগিতা জেল কর্তৃপক্ষের। মহিলা বন্দিদের কাশ্মীরি কারুশিল্পীতে পারদর্শী করে তুলতে জেলের অন্দরে গড়ে তোলা হয়েছে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। হস্তশিল্পের একাধিক ক্ষেত্রে ট্রেনিং চলে সেখানে। হাতে-কলমে শেখানো হয় বেকারির কাজও। ট্রেনিং শেষে কর্মে যোগ। তার জন্য আলাদা বন্দোবস্ত। চূড়ান্ত ব্যস্ততায় ওঁদের কেটে যায় কুঠুরির জীবন। ভুলে থাকেন জীবনের সব দুঃখ-যন্ত্রণা।
যেমন, ভুলে রয়েছেন স্নাতকোত্তর এক কাশ্মীরি তরুণী। অপরাধের মামলায় জেলবন্দি। কথায় কথায় বলছিলেন, ‘মাত্র সাত মাস হল আমি এখানে এসেছি। প্রথম প্রথম ভীষণ অবসাদে ভুগতাম! কারও সঙ্গে কোনও কথা বলতে পারতাম না। খেতে পারতাম না। বই পড়তে চাইলেও মন বসত না। সময় যেন আচমকা থমকে গিয়েছিল। এখন আমি বেজায় খুশি। উধাও অবসাদ। কাশ্মীরি পোশাক-আশাকে নতুন নতুন ডিজাইনের ভাবনা-চিন্তা করতেই সময় কাবার। বন্দি পরবর্তী জীবনে এই শিল্পকর্মই আমার বেঁচে থাকার আধার।’
উপত্যকার সবচেয়ে বড় জেল শ্রীনগরের এই কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার। ধরা পড়া সন্ত্রাসবাদীদের একটা বড় অংশকে এখানেই রাখা হয়। ফলে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ভিতরে-বাইরে। জেলের মধ্যে প্রায় ৬০০ বন্দি রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। মহিলা বন্দিদের জন্য সম্পূর্ণ পৃথক বন্দোবস্ত। তাঁদের স্বনির্ভর করে তোলার আলাদা পরিকাঠামোও গড়ে তুলেছে জেল কর্তৃপক্ষ। শ্রীনগর জেলে এই মুহূর্তে দু’ডজনেরও বেশি মহিলা বন্দি কাশ্মীরি কারুশিল্পের সঙ্গে যুক্ত। সেই শিল্পের হাত ধরেই মুক্ত জীবনে আলো খোঁজার অপেক্ষায় ওঁরা।