ভুবনেশ্বর, ২১ মে (পিটিআই): ঘূর্ণিঝড় উম-পুনের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষতিক্ষতি হল ওড়িশার কেন্দ্রাপাড়া, জগৎসিংহপুর, ভদ্রক ও বালেশ্বর জেলা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ময়ূরভঞ্জ জেলার একটা অংশও। বিশেষ ত্রাণ কমিশনার (এসআরসি) প্রদীপকুমার জেনা বলেন, ঝড়-বৃষ্টির জেরে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বহু বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে। বিপর্যস্ত বিদ্যুৎ পরিষেবা। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বহু সরকারি ভবনেরও। ক্ষয়ক্ষতির প্রমাণ নিয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে জেলাশাসকদের। ঝড়ের দাপটে উপড়ে গিয়েছে অসংখ্য গাছ। ভেঙে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। রাস্তা থেকে সেসব সরানোর কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। জাতীয় ও রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, দমকল ও বনবিভাগ একযোগে কাজ করছে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করার চেষ্টা চলছে। রাজ্যের মুখ্যসচিব এ কে ত্রিপাঠি আবহাওয়া দপ্তর ও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা টিমকে এদিন ধন্যবাদ দেন। তিনি বলেন, আইএমডি ঝড়ের গতিপথ ও হাওয়ার বেগ নিখুঁতভাবে তুলে ধরতে পেরেছিল। ঝড়ের ফলে সাগরের ঢেউ কতটা উঁচুতে উঠতে পারে, তারও সঠিক ধারণা তুলে ধরেছেন আবহাওয়া অধিকর্তা মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র। পাশাপাশি এনডিআরএফ ডিজি এস এন প্রধানকেও ধন্যবাদ দেন তিনি। জেনা বলেন,ওড়িশা ১৪০ কিলোমিটার ঝড়ের জন্য প্রস্তুত ছিল। কিন্তু ঝড়ের বেগ ১১০ কিলোমিটারের মধ্যেই ছিল। উম-পুনের জেরে ওড়িশায় দু’জনের প্রাণহানির খবর মিলেছে। আবহাওয়া দপ্তরের আগাম সতর্কতা ও সময়মতো বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী মোতায়েনের ফলে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। উপকূলবর্তী এলাকাগুলি থেকে দু’লক্ষ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সরকারি সূত্রে খবর, ১৯ লক্ষ ৩৮ হাজারের বেশি গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এদিকে, দিল্লিতে ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটির বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবা। সরকারি সূত্রে খবর, ওড়িশার জগৎসিংহপুর জেলায় ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১০৬ কিলোমিটার। এই জেলায় প্রাণহানির কোনও ঘটনা নেই বলেই খবর। তবে বহু কাঁচা বাড়ির চাল উড়ে গিয়েছে। ঝড়ের সঙ্গেই হয়েছে ব্যাপক বৃষ্টি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে জেলার উপকূলবর্তী গ্রামগুলিতে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ফসলের। পারাদ্বীপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বহু মৎস্যজীবী। উম-পুনের তাণ্ডবে তাঁদের নৌকা ও মাছ ধরার জাল ক্ষতির মুখে পড়েছে। মঙ্গলবার রাত ১১টা পর্যন্ত জগৎসিংহপুরের ১৬ হাজার ৮৪০ জনকে ২৯৯টি সাইক্লোন সেন্টারে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। পাশাপাশি পাঁচ হাজার মানুষ নিজে থেকেই আশ্রয় নেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। গাছ উপড়ে গিয়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বহু রাস্তাও। ফলে এইসব এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছনো যাচ্ছে না।