শ্রীনগর, ১৩ নভেম্বর (পিটিআই): টানা ১০১ দিন ধরে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রয়েছে কাশ্মীরে। গত ৫ আগস্ট ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পর থেকে চালু হয়েছিল নিষেধাজ্ঞা। যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ল্যান্ডফোন, মোবাইল ও ইন্টারনেটের উপর চাপানো হয়েছিল বিধিনিষেধ। উপত্যকায় ধীরে ধীরে ল্যান্ডফোন ও মোবাইলের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিলেও ইন্টারনেট ও প্রিপেইড মোবাইলের উপর তা এখনও জারি রয়েছে। পাশাপাশি তুষারপাতের জেরে গত এক সপ্তাহ ধরে বিদ্যুৎহীন উপত্যকার বিভিন্ন এলাকা। বর্তমানে উপত্যকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলে প্রশাসন দাবি করলেও মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগ না পেয়ে ক্ষোভ জমছে মানুষের মধ্যে। পাশাপাশি ইন্টারনেট পরিষেবা চালুর দাবিতে প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন সাংবাদিকরাও। মঙ্গলবার তাঁরা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। কিন্তু কবে ইন্টারনেট চালু হবে, তার নির্দিষ্ট উত্তর নেই প্রশাসনের কাছেও। কর্তৃপক্ষ শুধু জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলার বর্তমান যে পরিস্থিতি রয়েছে, তাতে ইন্টারনেট চালু করার মতো উপযুক্ত সময় আসেনি। তবে পরিস্থিতি বিচার করে উপযুক্ত সময়ে পরিষেবা চালু করা হবে। রাজধানী শ্রীনগর সহ জেলার বড় বড় বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলির ঝাঁপ এখনও বন্ধ রয়েছে। তবে ভোরের দিকে কয়েক ঘণ্টার জন্য খুলছে দোকান-বাজার। তাই সূর্যের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে কেনাকাটার জন্য হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যাচ্ছে। স্কুল খুলে গিয়েছে। কিন্তু বাবা-মায়েরা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে সাহস পাচ্ছেন না। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে শুনসান হয়ে যাচ্ছে শ্রীনগর সহ গোটা উপত্যকা। পাশাপাশি রয়েছে জঙ্গিদের হুমকি। ব্যবসায়ী ও দোকানদাররা বাজার খোলা রাখতে চাইলেও জঙ্গিদের ভয়ে তা সম্ভব হচ্ছে না। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, গণি খান মার্কেটে এবং কাকা সরাই এলাকাতে গ্রেনেড বিস্ফোরণের পর কোনও ব্যবসায়ীরা দোকান খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। এদিকে পর্যটনের ভরা মরশুমে উপত্যকা পর্যটকহীন। বিগত বছরগুলিতে বিশেষ করে ডাল লেক, গুলমার্গ ও সোনমার্গে পর্যটকদের হোটেলে ঘর পেতে অসুবিধায় পড়তে হতো। কিন্তু এবার সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র উপত্যকায়।গুলমার্গ ও সোনমার্গের মতো স্থানগুলি বরফের চাদরে মুড়ে গেলেও পর্যটকের দেখা নেই। সরকারি হিসেব বলছে, চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে উপত্যকায় এসেছিলেন অন্তত পাঁচ লক্ষেরও বেশি পর্যটক। কিন্তু ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ার পর হঠাৎ করে পর্যটকদের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানোয় বিপাকে পড়েন ব্যবসায়ীরা। বেকার হয়ে পড়েন পর্যটন ও হোটেল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বহু মানুষ।
এদিকে তুষারপাতের জেরে বিদ্যুৎহীন উপত্যকা। অন্ধকারে ডুবে রয়েছে উত্তর থেকে দক্ষিণ কাশ্মীর। বিশেষ করে বারামুলা, বন্দিপুরা, সোপিয়ান, কুলগাম, পুলওয়ামার মতো জেলাগুলিতে সবথেকে খারাপ অবস্থা। গত কয়েকদিনে তুষারপাতের জেরে পাঁচ হাজারেও বেশি বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গিয়েছে বলে বিদ্যুৎ দপ্তরের আধিকারিক হাসমত কাজি জানিয়েছেন। তবে কবে থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তার উত্তর নেই বিদ্যুৎ দপ্তরের কাছেও।