শরীর-স্বাস্থ্যের আকস্মিক অবনতি। বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ আসতে পারে। সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক বিবাদ। ব্যবসায় নতুন সুযোগ ... বিশদ
বাংলায় যখন কিষেনজির নেতৃত্বে মাওবাদী আন্দোলন তুঙ্গে, তখন একাধিকবার জঙ্গলমহলে এসেছেন কুন্দন। তাঁকে সংগঠনের তরফে ঝাড়খণ্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। যেহেতু জঙ্গলমহলে বাংলা-ঝাড়খণ্ডের সীমানা, তাই এই করিডরকে কীভাবে ব্যবহার করে নাশকতা ঘটানো যায়, তা নিয়ে একাধিক মাওবাদী শীর্ষ নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। এনআইএ সূত্রের খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলপাহাড়িতে ডেরা ছিল তাঁর। এখানে প্রশিক্ষণ পর্যন্ত দিয়ে গিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে জঙ্গলমহলের কয়েকটি জায়গায় হামলাও হয়েছে। কিষেনজির মৃত্যুর পর এরাজ্যে সংগঠন যখন ভেঙে যায়, তখনও বেশ কিছুদিন বেলপাহাড়িতে ছিলেন তিনি। কিন্তু এখানে থাকা নিরাপদ নয় মনে করে শেষ অবধি পাকাপাকিভাবেই ঝাড়খণ্ডেই ফিরে যান কুন্দন। এনআইএ সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে ১২৮টির বেশি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে বেশিরভাগই ঝাড়খণ্ডে। এছাড়াও অন্যান্য রাজ্যে তাঁর বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা ঝুলে রয়েছে। একাধিক পুলিস কর্মীকে হত্যা, ব্যাঙ্ক থেকে পাঁচ কোটি টাকা লুটের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ঝাড়খণ্ডে জনতা দল ইউনাইটেডের বিধায়ককে খুনের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত এই মাওবাদী নেতা। ঝাড়খণ্ড সরকার তাঁকে খুঁজে দেওয়ার জন্য ৫০ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। ২০১৭ সালে কুন্দন আত্মসমর্পণ করেন। তার আগে শত চেষ্টা করেও তাঁর নাগাল পাননি একাধিক তদন্তকারী সংস্থা। পরে মামলার তদন্তভার নেয় এনআইএ। আত্মসমর্পণের পর থেকেই জেলে রয়েছেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা চলছে।
চলতি মাসে ঝাড়খণ্ডে বিধানসভা নির্বাচন। ভোট ঘোষণার পরপরই আচমকা এই মাওবাদী নেতা জেল থেকে ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেইমতো এনআইএ’র বিশেষ আদালতে তিনি আবেদন করেন কয়েকদিন আগে। এনআইএ’র অফিসাররা তা জানার পরই আদালতে এর বিরোধিতা করে পাল্টা যুক্তি তুলে ধরেন। শেষমেশ সোমবার আদালত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, কুন্দনকে ভোটে লড়ার অনুমতি দেওয়া হল। কুন্দনের আইনজীবী ঈশ্বর দয়াল বলেছেন, আগামী ১৫ নভেম্বর তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। তিনি ঝাড়খণ্ডের তামার বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
মাওবাদীরা সংসদীয় গণতন্ত্রের পথে বিশ্বাস করে না। তাঁরা মনে করেন, প্রচলিত ধারায় উন্নয়ন সম্ভব নয়। সমাজের উন্নয়ন ও সকলের সমান অধিকারের দাবিতে তাঁদের আন্দোলন। প্রথাগত এই ধারণার বাইরে বেরিয়ে এসে কুন্দনের ভোটে লড়া যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ। পুলিস মহলের বক্তব্য, আসলে গোটা ভারতেই মাওবাদীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। সংগঠনের অন্দরে দ্বন্দ্ব ও অসন্তোষ তীব্র হচ্ছে। সেই সঙ্গে তাঁদের তত্ত্ব সমালোচনার মুখে পড়েছে। জেলবন্দি মাওবাদীরা বুঝতে পারছেন, তাঁরা যে পথে আন্দোলন চালিয়ে এসেছেন, তা ঠিক ছিল না। সংসদীয় গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সেই সিস্টেমের মধ্যে থেকেই আন্দোলন করতে হবে। তার জন্য নির্বাচন একটা বড় হাতিয়ার। সেই কারণেই কুন্দনের এই সিদ্ধান্ত বলে বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা।