বিমা, মেয়াদি সঞ্চয় বা শেয়ার থেকে অর্থকড়ি আয় বাড়বে। ঝামেলা থেকে দূরে থাকুন। ধর্মে মতি। ... বিশদ
গত লোকসভা নির্বাচনে বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে শেষলগ্নে উড়ে এসে কিস্তিমাত করেছিলেন বিজেপির সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া। গ্রামীণ এলাকার ঘাটতি পুষিয়ে দিয়েছিল দুর্গাপুর। এখানকার দু’টি বিধানসভা থেকেই বিজেপির লিড ছিল ৭৬ হাজারেরও বেশি। একুশের নির্বাচনে সেই ব্যবধান নেমে আসে ১১ হাজারে। দুর্গাপুর(পূর্ব) কেন্দ্রে সাড়ে ২৬ হাজারের ঘাটতি মিটিয়ে তৃণমূলের প্রদীপ মজুমদার জেতেন পৌনে চার হাজার ভোটে। এহেন প্রদীপবাবুর ঘাড়েই শিল্পাঞ্চলে তৃণমূলকে এগিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব। তীব্র দাবদাহের মধ্যেও আশি ছুঁইছুঁই প্রদীপবাবু চরকির মতো ঘুরছেন। তাঁর কথায়, ‘ব্যক্তি নয়, শিল্পাঞ্চলে দলের ও নেত্রীর সম্মান রক্ষাই আমাদের সকলের চ্যালেঞ্জ। সেই লক্ষ্যেই সকলে কাজ করছেন।’
কীর্তি আজাদকে তৃণমূল প্রার্থী করায় বিজেপি ‘বহিরাগত’ কার্ড খেলার চেষ্টা করেছিল। কৃষি এলাকায় তা নিয়ে চর্চাও ছিল। কিন্তু শিল্পাঞ্চলে তাঁর ‘বিহারী’ ইমেজই হতে পারে তৃণমূলের ‘ট্রাম্প কার্ড’। হিন্দিভাষী এলাকায় ভোজপুরীতে কথা বলায় তিনি তাঁদের আপনজন হয়ে উঠছেন। তাতে অবাঙালি ভোটব্যাঙ্কে ফাটলের আশঙ্কায় ভুগছে বিজেপি।
বর্ধমান আর ‘লালদুর্গ’ নেই। তবে, দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে সিটুর প্রভাব আছে। সিপিএমের ভোট শিফটিংয়ের সৌজন্যে আভাস রায়চৌধুরীর মতো তাত্ত্বিক নেতাও দাগ কাটতে পারেননি। সেখানে শিক্ষাবিদ সুকৃতি ঘোষাল রামে যাওয়া ভোট কতটা ফেরাতে পারবেন, তা নিয়ে দলেই সংশয় রয়েছে। কারণ সিপিএমের এক দাপুটে নেতার সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক সর্বজনবিদিত। সেই কারণেই কারখানা বন্ধ থাকলেও কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতা সেভাবে সামনে আনা হচ্ছে না। যদিও দুর্গাপুরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তীর দাবি, এবার বামে ভোট ফিরবেই। শুধু রামের নয়, তৃণমূলের ভোটও পাবেন জোট প্রার্থী।
দুর্গাপুর যদি তৃণমূলের ‘ব্ল্যাক স্পট’ হয়, বিজেপির জন্য তা হল মন্তেশ্বর। বর্ধমানে পা রেখেই দিলীপবাবু টের পেয়েছেন, তাঁর অবস্থা নিধিরাম সর্দারের চেয়ে ভালো কিছু নয়। সংগঠনের ‘স’টুকু নেই। ‘দলবদলু’রাই এখন ক্ষমতাসীন। দিলীপ ঘোষ জিতলে তাঁদের ভিটে মাটি চাঁটি হওয়ার প্রবল আশঙ্কা। তাই ক্ষমতাসীন শিবির দিলীপবাবুকে জেতাতে কতটা আন্তরিক হবে, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। যদিও দিলীপবাবুর দাবি, এসব ফ্যাক্টর হবে না। ভোট হবে মোদিকে দেখে।
এই পরিস্থিতিতে বিজেপির আদিরাই দিলীপবাবুর সহায়। দিলীপবাবু তাঁর সময়ে সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত লোকজনের উপর অনেকটাই নির্ভর করছেন। কিন্তু আদি বিজেপিদের অবস্থা অনেকটা শিকড় কেটে দেওয়া গাছের মতো। দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু ফল, ফুল তো দূরের কথা, ছায়া দেওয়ার ক্ষমতাটুকুও নেই। তাই গরম গরম প্রতিক্রিয়া দিয়ে, আক্রান্ত তৃণমূল কর্মীকে দেখতে গিয়ে লড়াইয়ে টিকে থাকতে চাইছেন। এমনকী, ব্যাট হাতে বিশ্বকাপ জয়ী দলের ক্রিকেটারকে চ্যালেঞ্জ জানাতেও পিছপা হচ্ছেন না। এটাই দিলীপ ঘোষের স্টাইল। এই নির্বাচনে সেটাই তাঁর একমাত্র সম্বল। প্রার্থীর নাম দিলীপ ঘোষ বলেই বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রটি এখনও লড়াইয়ের জায়গায় আছে। তা না হলে অনেক আগেই বল বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে দিতেন কীর্তি আজাদ।