কর্মোন্নতি ও কর্মের প্রসার। সামাজিক সুনাম বৃদ্ধি। শারীরিক সমস্যার আশঙ্কা। ধনাগম মন্দ নয়। দাম্পত্যে চাপ, ... বিশদ
শহর লাগোয়া বাঁকুড়া-২ ব্লকে দুর্গাপুর ও রানিগঞ্জ যাওয়ার রাস্তায় পড়ে বিকনা। সেখানেই কয়েকশো বছর ধরে তৈরি হচ্ছে ডোকরার সামগ্রী। বর্তমানে প্রায় ৮০টি পরিবার এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই শিল্প দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সুখ্যাতি লাভ করেছে। তাছাড়া দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও ডোকরা নজর কেড়েছে।
প্রথমদিকে এখানকার শিল্পীরা বাঁধা ধরা ছকে কিছু কাজ করতেন। এখন অবশ্য সেখানে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তির পাশাপাশি মাদল নিয়ে নৃত্যরত আদিবাসী পুরুষ ও নারীর যৌথ সামগ্রী ক্রেতাদের মন কাড়ে। তাছাড়া এখন দেব-দেবীর মূর্তি তৈরিতেও এসেছে অভিনবত্ব। বিভিন্ন যন্ত্রের ব্যবহার করে শিল্পীদের নিপুণ হাতে তৈরি হচ্ছে ঢোকরার নানা ঘর সাজানোর সরঞ্জাম।
তবে করোনা পরিস্থিতির জেরে গত বছর থেকে কিছুটা ধাক্কা খান শিল্পীরা। সংক্রমণ এড়াতে জেলা সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে মেলা বন্ধ করা হয়। ফলে ঢোকরার শিল্পকর্ম বিক্রি কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। অনেকে বাঁকুড়ায় ঘুরতে এসে বিকনায় ঢুঁ মেরে জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যেতেন। কিন্তু, করোনা আবহে তাঁদের আনাগোনাও কমে যায়। শিল্পীদের দাবি, গত বছর করোনা পরিস্থিতির জন্য ডোকরার দুর্গা বিদেশ তো দূরের কথা, ভিন রাজ্যেও যায়নি। তারফলে প্রত্যাশিত রোজগার হয়নি। দাম বেড়েছে কাঁচামালেরও। গতবছর পিতলের দাম ছিল প্রায় ৩৩০ টাকা কেজি। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৪৭০টাকা। তাই স্বাভাবিকভাবেই ডোকরার সামগ্রীর দামও বেড়েছে।
পিতল গলিয়ে তৈরি হয় এই ডোকরা। প্রথমে মাটি দিয়ে তৈরি হয় কাঠামো। তাতে মোম দিয়ে কারুকার্য করা হয়। এরপর একটি চ্যানেলের মাধ্যমে তরল পিতল তাতে দেওয়া হয়। আগুনের ভাটিতে মোম গলতে থাকলে তরল পিতল কাঠামো অনুযায়ী আকার ধারণ করে। তারপর সেই কাঠামো পালিশ করতে হয়। এছাড়াও শিল্পীর হাতে খুঁটিনাটি কাজের মধ্যে দিয়ে ফুটে ওঠে অপরূপ সৌন্দর্য।
এবার অস্ট্রেলিয়া থেকে তিনটি দুর্গা প্রতিমা তৈরির বরাত পেয়েছেন বিকনার শিল্পী হরেন্দ্রনাথ রানা। ২০দিন ধরে চলছে সেই প্রতিমা তৈরির কাজ। হরেন্দ্রনাথবাবুর সঙ্গে এই কাজ করছেন আরও দুই শিল্পী বাবলু কর্মকার ও ধনঞ্জয় কর্মকার। হরেন্দ্রনাথবাবু বলেন, ১৪ বাই ১৪ ইঞ্চির তিনটি দুর্গা প্রতিমা তৈরি হচ্ছে। দু’-একদিনের মধ্যেই তা প্রস্তুত হয়ে যাবে। তারপর অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানো হবে।
কর্মসূত্রে অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন কলকাতার বাসিন্দা শ্রীমন্ত মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ঢোকরা শিল্প ছয় হাজার বছরের পুরনো। বর্তমানে বিলুপ্ত প্রায় এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতেই বিদেশের মাটিতে তা ছড়িয়ে দিতে চেয়েছি। অস্ট্রেলিয়ায় অনেকের পছন্দ হয়েছে ডোকরার দুর্গা প্রতিমা। বাঁকুড়ার শিল্পীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যই তিনটি দুর্গা প্রতিমার বরাত দিয়েছি।